kazi ashraful islam

kazi ashraful islam

Sunday, December 25, 2011

চাপের মুখে বিএনপি


লোটন একরাম
'গোপন কর্মসূচির' মাধ্যমে ঢাকায় 'গুপ্ত হামলার' অভিযোগে সরকারের 'কঠোর চাপের মুখে' পড়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। ওই ঘটনার পর থেকে সরকার আর কোনো কর্মসূচিই পালন করতে দিচ্ছে না দলটিকে। পরপর তিনটি কর্মসূচিই পণ্ড করে দিয়েছে পুলিশ। দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় 'কার্যত' পুলিশ অবরুদ্ধ করে রাখছে। কার্যালয়ের সামনেও দলের নেতাকর্মীরা দাঁড়াতে পারছেন না। সরকারের এই মারমুখী আচরণে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। সহিংসতার অভিযোগে ১১ মামলায় ৭ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। ফলে গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন স্থানীয় নেতারা। মহাজোট সরকারের তিন বছরের শাসনামলে সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে এমন বেকায়দায় পড়েনি বিএনপি। মূল দলের করুণ অবস্থায় চারদলীয় জোটের শরিক ও সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মীরাও এখন গা বাঁচিয়ে চলছেন।
জানা গেছে, এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি হাইকমান্ড। দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসন, নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীদের সক্রিয়, মামলা-হামলার ভয় ও বাধাবিঘ্ন উপেক্ষা করে এগিয়ে আসা এবং জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলন জোরদার করে দলকে প্রস্তুত করতে চান তারা। এ লক্ষ্যে শিগগির সাংগঠনিক সফরে যাবেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। গতকাল দলের ভারপ্রাপ্ত
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেন। একইসঙ্গে আগামী ৮-৯ জানুয়ারি চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ সফল করতেও জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বিরোধী দল।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমকালকে বলেন, মহাজোট সরকার জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান কেন্দ্র করে সরকার পুলিশকে দিয়ে বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনে বাধা দিচ্ছে। সরকার ফ্যাসিস্ট চরিত্র ধারণ করেছে দাবি করে তিনি বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ব্যর্থ সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবেন। গণজোয়ারের মুখে সরকারের সব বাধাবিঘ্ন উড়ে যাবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন ফখরুল।
অবশ্য আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, যুদ্ধাপরাধী এবং নিজের দুই ছেলে তারেক-কোকোর বিচার বানচাল করতে খালেদা জিয়া দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছেন। বিরোধী দল যখন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছে তখন পুলিশ বাধা দেয়নি। পুলিশ জনগণের জানমাল রক্ষায় এখন বিরোধী দলকে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালাতে দিচ্ছে না। সরকার কাউকে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে দেবে না।
গত ১৮ ডিসেম্বর ভোরে আকস্মিকভাবে ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে বোমা বিস্ফোরণ, ভাংচুর, গাড়িতে অগি্নসংযোগে একজন নিহত হন। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ এবং সিলেটে বাসে অগি্নসংযোগে এক যাত্রী অগি্নদগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। সরকারের মন্ত্রীরা ও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে বিএনপি পরিকল্পিতভাবে এ গুপ্ত হামলা চালিয়েছে। তবে বিএনপি নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, সংবর্ধনা নিতে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের 'রিসিভ' করতে বিএনপি কর্মীরা সমবেত হলে পুলিশ হামলা চালিয়েছে।
এ ঘটনার পর থেকে 'হার্ডলাইন' অবস্থান গ্রহণ করে মহাজোট সরকার। পরপর দুটি কর্মসূচি পুলিশি বাধায় পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর গতকাল শনিবার তৃতীয় কর্মসূচি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে থানায় থানায় বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দিয়েছে পুলিশ। আগামীকাল সারাদেশের জেলায় জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ করার কর্মসূচি রয়েছে।
সরকারের এ 'কঠোর' অবস্থানের মুখে আগামী ৮-৯ জানুয়ারি চট্টগ্রাম অভিমুখে দলের রোডমার্চে ব্যাপক লোক সমাগম ঘটিয়ে সফল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার রাতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। বৈঠকে পুলিশি বাধায় দলের কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করছেন নেতারা। তবে কর্মসূচিতে 'জনগণের ব্যাপক সম্পৃক্তি'র মাধ্যমে সব ধরনের বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বৈঠকে। চট্টগ্রাম রোডমার্চ সফল করতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও রোডমার্চের প্রধান সমন্বয়কারী এম কে আনোয়ারের নেতৃত্বে আজ কুমিল্লা ও ফেনী এবং আগামীকাল চট্টগ্রামে প্রস্তুতি সভা করবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
বিএনপির কয়েকজন নেতা সমকালকে জানান, সরকার পুলিশ দিয়ে পরপর কয়েকটি কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি। এ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চে সরকার বাধা দিতে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। বাধা এলেও যাতে রোডমার্চ সফল করা যায় তা নিয়ে বৈঠকে কৌশল নির্ধারণ করা হয়।
ঘুরে দাঁড়াতে শিগগির সাংগঠনিক সফরে যাবেন নেতারা : সরকারের কঠোর চাপের মুখে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে গতকাল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা জরুরি বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে শিগগির জেলা বিএনপির দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসন করে নতুন ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়। একইসঙ্গে নিষ্ক্রিয় ও কমিটি থেকে বাদ পড়া নেতাদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে দলকে আরও শক্তিশালী ও গতিশীল করার সিদ্ধান্ত নেন তারা। এ লক্ষ্যে শিগগির যুগ্ম মহাসচিবদের নেতৃত্বে শিগগির জেলা সফরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। দু'একদিনের মধ্যে দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে আলোচনা করে দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে।
বৈঠকে দলের যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, বরকতউল্লাহ বুলু, মোঃ শাহজাহান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, রিজভী আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, গোলাম আকবর খোন্দকার, মশিউর রহমান ও মজিবুর রহমান সরোয়ার উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে কোনো প্রেস ব্রিফিং করা হয়নি।
বৈঠক সম্পর্কে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লা বুলু সমকালকে বলেন, শিগগির সাংগঠনিক সফরের মাধ্যমে যেসব জেলায় নতুন ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন বাকি আছে_ তা সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দলকে আন্দোলন ও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করতে সাংগঠনিক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।
অপর যুগ্ম মহাসচিব মোঃ শাহজাহান বলেন, রোডমার্চে জনগণের যে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে তাকে সামনে রেখে দলকে আরও গতিশীল করতে প্রস্তুত তারা। ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, বিএনপির পাশাপাশি সহযোগী সংগঠনগুলোকে সাংগঠনিকভাবে গতিশীল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

Wednesday, December 21, 2011

চোরাগোপ্তা হামলার ছক বিএনপি-জামায়াতের-রিমান্ডে গ্রেপ্তারকৃতদের চাঞ্চল্যকর তথ্য

সাখাওয়াত হোসেন

ঢাকাসহ বিভাগীয় বড় শহরগুলোতে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে জামায়াত-বিএনপির। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতেই অত্যন্ত গোপনে দলের শীর্ষ পর্যায়ে এ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। তবে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব মাঠ পর্যায়ের নেতাদের কাছে পেঁৗছার পর তারা তা গোপন রাখতে পারেননি। রাজধানীতে ভয়াল তা-বের অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশি রিমান্ডে এসব তথ্য দিয়েছেন।
তারা জানিয়েছেন, বিএনপি-জামায়াত পৃথকভাবে এই পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও রোববার রাজধানীতে বোমাবাজি, ভাংচুর, গাড়িতে আগুন ও পুলিশের ওপর হামলাসহ সব ধরনের তা-বে তারা সম্মিলিতভাবে অংশ নেন। বোমা-ককটেল দিয়ে একে অপরকে সহায়তা করার কথাও তারা স্বীকার করেন তারা।
গ্রেপ্তারকৃত বিএনপি-জামায়াতের একাধিক নেতা পুলিশি রিমান্ডে গোয়েন্দাদের জানান, রোববার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে তা-ব চালানোর পর ধরপাকড় শুরু হলে সংঘবদ্ধভাবে মাঠে নামা কঠিন হবে এ বিষয়টি মাথায় রেখেই চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে যাওয়ার ছক তৈরি করা হয়। বিষয়টি সমন্বয়ের দায়িত্বও আগেভাগেই নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে বলে গ্রেপ্তারকৃতরা গোয়েন্দাদের কাছে স্বীকার করেছেন।
তদন্তে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে বিএনপি-জামায়াতের বেশ কয়েকজন প্রথম সারির নেতার নাম পাওয়া গেছে। তারাই মূলত আড়ালে থেকে চোরাগোপ্তা হামলার সমন্বয় করছেন। তদন্তের স্বার্থে গোয়েন্দারা তাদের নাম ও সংখ্যা জানাতে চাননি।
তবে দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম, যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী সোহেল, সাধারণ সম্পাদক সরাফতউল্লাহ সফু, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম-আহ্বায়ক ওবায়দুল হক নাসিরসহ বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগঠনের নেতার টেলিফোন ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। তাদের গতিবিধি মনিটরিংয়েরও নির্দেশ রয়েছে।
এদিকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক তাসনীম আলম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ এবং জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমেদ, নায়েবে আমির মওলানা একেএম ইউসুফ, আবদুস সোবহান, একেএম নাজির আহমদ, জামায়াতের ঢাকা মহানগর কমিটির আমির রফিকুল ইসলাম খান, সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আযাদ, সহকারী সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম, মওলানা আবদুল হালিম, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি ফখরুদ্দিন মানিক ও সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন এবং এদের সেকেন্ড-ইন কমান্ডদের টেলিফোন ট্র্যাকিংয়ের পাশাপাশি তাদের গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
তদন্তে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গত রোববার পুলিশের গাড়িতে অগি্নসংযোগ, বোমাবাজি, ভাংচুর ও পুলিশের ওপর হামলাসহ নানা তা-বের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ১১৯ জন নেতাকর্মীকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এদের কেউ কেউ মুখে কুলুপ এঁটে থাকলেও অনেকেই নির্দ্বিধায় তা-বের কথা স্বীকার করেছেন। তারা জানিয়েছেন, দলের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশেই তারা পুলিশের ওপর হামলা চালান। অংশ নেন বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকা-ে, যা পুরোটাই ছিল পূর্ব পরিকল্পিত।
এছাড়াও পুলিশ ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের ভিডিও ফুটেজ, স্থিরচিত্র, মোবাইল ফোনের কললিস্ট, আহত পুলিশ সদস্যদের বক্তব্য পর্যালোচনা করে পল্টন তা-বে অংশগ্রহণকারী ও মদদদাতাদের চিহ্নিত করা হয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন গ্রেপ্তারকৃত বিএনপি-জামায়াত নেতারা। তারা জানিয়েছেন, পুলিশবাহিনীকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলতেই পরিকল্পিত এ হামলা চালানো হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতেই রাজপথে তারা শোডাউন করেন। পরে বিভিন্ন উস্কানিমূলক কর্মকা-ের মাধ্যমে তা-ব পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়।
মনিরুল ইসলাম আরো বলেন, দ্রুত বিচার আইনের যে অপরাধ সেটার অনেকগুলো সাক্ষ্যপ্রমাণই আছে- যা ইতোমধ্যেই সংগৃহীত হয়েছে। রিমান্ডে থাকা বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীদের নগরজুড়ে তা-বে অংশগ্রহণ ও মদদ দেয়া সংক্রান্ত জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন গোয়েন্দারা। এছাড়াও তাদের দেয়া তথ্য-উপাত্ত ক্রসচেক করে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ মিলেছে।
পুলিশি রিমান্ডে গ্রেপ্তারকৃত বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা জানান, হরতাল-লংমার্চ করে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত করতে না পারায় সরকারের পতন ঘটানোর জন্য তা-ব চালানোর এ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এই ছক বাস্তবায়ন করার জন্য দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে সশস্ত্র চরমপন্থী সন্ত্রাসীদেরও ভাড়া করে ঢাকায় আনা হয়। চট্টগ্রামের শিবিরপন্থী অর্ধশতাধিক শীর্ষ ক্যাডারকেও সংযুক্ত করা হয়েছিল এই পরিকল্পনার সঙ্গে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সাভার ও টঙ্গীসহ ঢাকার উপকণ্ঠের কয়েকটি মাদ্রাসায়ও সশস্ত্র শিবির ক্যাডারদের প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। কিন্তু আকস্মিক এ হামলার শুরুতেই পুলিশ সক্রিয় হয়ে ওঠলে তাদের ছক অনুযায়ী তা-ব চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় তারা চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়েই সরে যাওয়ার চেষ্টা চালায়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, বিএনপি-জামায়াত চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে গ্রেপ্তারকৃতরা যে তথ্য দিয়েছেন তার সত্যতা পাওয়া গেছে। সোর্সের মাধ্যমে এ ব্যাপারে চাঞ্চল্যকর বেশকিছু তথ্য-উপাত্ত উদ্ঘাটন করা হয়েছে।
এদিকে সোমবার রাত ১১টা ২০ মিনিটে ধানম-ির সায়েন্সল্যাবরেটরি রোডের মাল্টিপ্ল্যান কমপ্লেক্সের সামনে চোরাগোপ্তা হামলা চালানো হয়। অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা এ সময় সেখানে রাস্তার পাশে পার্ক করে রাখা একটি ট্যাক্সিক্যাবে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে কেউ হতাহত না হলেও গাড়িটি পুড়ে ভস্মীভূত হয়। প্রায় একই সময় নিউমার্কেট ফুটওভার ব্রিজ, ধানম-ি ও মোহাম্মদপুরে বেশ কয়েকটি বোমা বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়।
গোয়েন্দাদের ধারণা, বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা চোরাগোপ্তা হামলা চালানোর জন্য সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে নগরীতে র‌্যাব-পুলিশের টহল জোরদার, মোবাইল চেকপোস্ট এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার বাসা-বাড়ি, বস্তি ও বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে তল্লাশি অভিযান চলায় তারা ছক অনুযায়ী হামলা চালাতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
ডিএমপি কমিশনার বেনজির আহমেদ জানান, চোরাগোপ্তা হামলা ঠেকাতে পুলিশ সর্বোচ্চ সর্তক রয়েছে। রাজধানীর গুরুতপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। একই সঙ্গে সন্দেহভাজন বোমাবাজ, অগি্নসংযোগকারী ও ভাংচুরসহ বিভিন্ন নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের ধরপাকড় অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

৩০ কোটি টাকার বাজেট পরিকল্পনাকারীরা চিহ্নিত


বিশেষ প্রতিনিধি
রাজধানীতে গত রোববারের সহিংস ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। রিমান্ডে থাকা আসামিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ মূল পরিকল্পনাকারীদের কয়েক-জনকে শনাক্ত করেছে। ঢাকা অচল করে সরকার পতনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ৩০ কোটি টাকার বাজেট করা হয়েছিল। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে নেপালে পরিকল্পনাকারীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকেই চূড়ান্ত হয়, মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনার নামে কীভাবে রাজধানীতে অবস্থান করে মধ্যপ্রাচ্যের মতো সরকারবিরোধী আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। গ্রেফতার হওয়া একজন যুদ্ধাপরাধী ও বিএনপির এক নেতা পরিকল্পনাকারীদের টাকার জোগান দেন। পুলিশ, ডিবি ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) মনিরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, পরিকল্পনাকারীদের শনাক্ত করা হয়েছে। কারা অর্থের জোগান দিয়েছেন আমরা এরই মধ্যে তাদের নাম জানতে পেরেছি।
অন্যদিকে গতকাল ডিএমপি সদর দফতরে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের এক সভায় ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ সহিংসতায় জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। রোববারের ভাংচুর ও অগি্নসংযোগের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্ত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা দফতরে ন্যস্ত হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ডিসি (দক্ষিণ) মনিরুল ইসলাম সমকালকে জানান, রিমান্ডে থাকা আসামিদের কাছ থেকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, রাজধানীতে বড় ধরনের
নাশকতা সৃষ্টির জন্যই লোকজন জড়ো করা হয়েছিল। নাশকতাকারীদের পরিকল্পনা ছিল মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার নামে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনসহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেবে। সেখান থেকে সরকার পতনের ডাক দিয়ে প্রেস ক্লাব ও সচিবালয়ের আশপাশে অবস্থান নিয়ে ঢাকা অচল করে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, হামলার পরিকল্পনাকারী, অর্থের জোগানদাতা, হামলা বাস্তবায়নে যারা সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়েছেন তাদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
রিমান্ডে আসামিদের দেওয়া তথ্য সম্পর্কে ডিএমপির মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম বলেন, রিমান্ডে আসামিরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মামলার তদন্তে অনেক সহায়ক হবে। তিনি বলেন, আসামিদের তথ্যমতে ওই ঘটনায় ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। রিমান্ডে বেরিয়ে আসা বিভিন্ন ব্যক্তির নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, তদন্তে যাদের নামই আসবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এখানে কোনো পদ-পদবি দেখা হবে না।
একটি নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা সূত্র সমকালকে জানায়, পরিকল্পনাকারীদের কয়েকজন চলতি মাসের প্রথমদিকে নেপাল যান। সেখানে তারা নাশকতার ছক চূড়ান্ত করে দেশে ফেরেন। রোববার একটি গোয়েন্দা সংস্থা পরিকল্পনার বিষয়টি টের পায়। এরপর তারা ব্যাপক নজরদারি শুরু করে। আবার গোয়েন্দা নজরদারির বিষয়টি টের পান পরিকল্পনাকারীরা। এরপর তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের লুকিয়ে কীভাবে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেন_ এ ফন্দি আঁটতে গুলশানে একটি বারে বসেন। সেখানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনার আগের দিন সন্ধ্যায় ওই বারেও অভিযান চালায়। তবে আগেই সটকে পড়েন পরিকল্পনাকারীরা।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, হামলার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে কারা পরে তদারক করেছেন, তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। কারা মোবাইল ফোনে হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাদেরও নাম পাওয়া গেছে। কাদের মাধ্যমে গাড়ি ভাড়া করে ঢাকায় ১ লাখ মানুষ জড়ো করার পরিকল্পনা ছিল, তাদের সবাইকে এরই মধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে। মামলার আসামিদের ধরতে নগরী ও দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানান গোয়েন্দারা।
ডিএমপি ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কয়েক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রিমান্ডে আসামিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের যেসব নেতার নাম এসেছে তারা হলেন_ যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নিরব, যুবদল উত্তরের সভাপতি হাসান মামুন, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীমসহ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সভাপতি ও যুগ্ম সম্পাদক পদধারী আরও পাঁচজন এবং যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও জাসাসের মহানগর কমিটির শীর্ষ কয়েক নেতা।
রোববার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভাংচুর, অগি্নসংযোগ, পুলিশ আক্রান্তের ঘটনায় শাহবাগ, রমনা, পল্টন, মতিঝিল, তেজগাঁও ও বাড্ডা থানায় পুলিশ বাদী হয়ে ১১টি মামলা করেছে। এসব মামলায় পুলিশ মোট ১১৯ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
পল্টন থানায় গ্রেফতারকৃত ঢাকার দোহারের বাসিন্দা রহিম খন্দকার, আবুল হাসান ও উজ্জ্বল জানান, দোহারের এক বিএনপি নেতার নির্দেশে তারা রোববার সকালে ৪০ সদস্যের একটি টিম নিয়ে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় পাঠানোর সময় বলা হয়েছিল, খাওয়ার ও হাত খরচের টাকা দেওয়া হবে। তাদের দায়িত্ব বিএনপি নেতাদের নির্দেশে রাস্তায় বসে থাকা। কিন্তু রোববার খুব ভোরে পিকআপ ভ্যানে করে গুলিস্তানের মুক্তাঙ্গন এলাকা থেকে পুলিশ তাদের আটক করে। পুলিশ রহিম খন্দকারের কাছ থেকে একটি ৪০ সদস্যের তালিকা উদ্ধার করে।
একইভাবে রাজধানীর শাহবাগ থানায় রিমান্ডে থাকা ২৬ আসামির মধ্যে অধিকাংশের বাড়ি সাভার এলাকায়। একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ও বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর তাদের ৫০-৬০ জনের একটি টিম রোববার ভোরে গাড়ি ভাড়া করে ঢাকায় পাঠান। তারা শাহবাগ এলাকায় ভাংচুর করার সময় পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে।
পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি কৃষ্ণপদ রায় সমকালকে বলেন, রমনা থানায় করা দুটি মামলায় ৪২ জনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তাদের অধিকাংশের বয়স ১৭ থেকে ২২ বছরের মধ্যে। তাদের সাভার ও এর আশপাশের এলাকা থেকে ভাড়া করে আনা হয়।
মঙ্গলবার রিমান্ডের প্রথম দিন শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, রিমান্ডে আসামিদের দেওয়া তথ্যমতে রোববারের ঘটনায় আরও বেশ ক'জন বিএনপি নেতার নাম বেরিয়ে এসেছে।
তিনি আরও জানান, ঘটনার সূত্রপাত করেছিল জামায়াত। কাকরাইলে মিছিল করার মাধ্যমে তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে; কিন্তু নগরীর বিভিন্ন স্থানে যখন বিএনপি কর্মীরা রাস্তায় নেমে আসে তখনই জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা সরে পড়ে। আর এ কারণেই পরে মাঠে জামায়াতকে পাওয়া যায়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
গোয়েন্দা তথ্যমতে, ঘটনার সময় কর্মীরা এসব নেতার কাছে নির্দেশনা চেয়েছিল। নির্দেশ অনুযায়ী তারা মাঠে এসব সংঘর্ষ, ভাংচুর, অগি্নসংযোগ, পুলিশের ওপর হামলার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে।

Wednesday, December 14, 2011

মুজিবনগর সরকারের বেতনভুক্ত কর্মচারি ছিলেন জিয়াউর রহমান

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আপনি যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার চেষ্টা করবেন না। তাদের বিচার বাংলার মাটিতে হবেই। তাদের বাঁচাতে পারবেন না। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বাঁচাতে চেয়েও পারেননি। এমন একদিন আসবে, যে দিন যুদ্ধাপরাধের যারা রক্ষা করতে চেয়েছে, তাদেরও বিচার ভবিষ্যত্ প্রজন্ম চাইবে।’
খালেদা জিয়া সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘উনি এতিমের টাকা খেয়েছেন। ছেলের মানি লন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে এফবিআই কর্মকর্তারা এসেছে। তাঁদের লজ্জা নেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের বেতনভুক্ত কর্মচারী ছিলেন জিয়াউর রহমান। অথচ জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম বন্দরে পাকিস্তানের অস্ত্রবোঝাই জাহাজ সোয়াত খালাস করেছিলেন। সেই অস্ত্র দিয়ে বহু বাঙালিকে হত্যা করা হয়।’
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আজ বুধবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন। dainik prothom alo