এক বছর আগেও বিশ্বে বাংলাদেশ ছিল পঞ্চম স্থানে। এক লাফে এবার তুরস্ক ও ভারতকে সরিয়ে তৃতীয় স্থানটি দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশ।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিসংখ্যান ২০১১’ দলিল থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এতে মূলত ২০১০ সালে বিশ্ব বাণিজ্যের সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানির বাজার পরিসংখ্যানও আছে।
ডব্লিউটিওর পরিসংখ্যান অনুসারে, বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানিতে প্রথম স্থানটি চীন ধরে রেখেছে। বাজারে চীনের অংশ ৩৬ দশমিক ৯০ শতাংশ। আগের বছরও (২০০৯) শীর্ষস্থানে ছিল। তখন অবশ্য অংশ ছিল ৩৪ শতাংশ।
২০০৯ সালের মতো এবারও দ্বিতীয় স্থানে আছে ২৭ দেশের সমন্বয়ে গঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এবার তাদের অংশ ২৮ দশমিক ১০ শতাংশ। গতবার ছিল ৩০ দশমিক ৭০ শতাংশ। অর্থাৎ বিশ্ববাজারে তাদের অংশীদারি কমছে।
২০০৯ সালে বিশ্ব রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অংশ ছিল ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। ২০১০ সালে তা ২৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে সাড়ে ৪ শতাংশ। এর ফলে ২০০৯ সালের পঞ্চম অবস্থান থেকে বাংলাদেশ উঠে এসেছে তৃতীয় স্থানে।
বিপরীতে গতবার তৃতীয় স্থানে থাকা তুরস্ক নেমে গেছে চতুর্থ স্থানে। ২০১০ সালে বিশ্ববাজারে তুরস্কের তৈরি পোশাকের অংশ দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ, যেখানে আগেরবার ছিল ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। অবশ্য পরিমাণগত দিক থেকে তুরস্কের মোট রপ্তানি ২০০৯ সালের তুলনায় ২০১০ সালে ১০ শতাংশ বেড়েছে। তবে প্রবৃদ্ধির হার অনেক বেশি হওয়ায় বাজার হিস্যায় এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ।
চতুর্থ স্থানে থাকা ভারত ২০১০ সালে আরেক ধাপ নেমে পঞ্চম স্থানে চলে এসেছে। বিশ্ব রপ্তানি বাজারে ভারতের তৈরি পোশাকের অংশ আগেরবারের ৩ দশমিক ৬০ শতাংশের চেয়ে কমে হয়েছে ৩ দশমিক ২০ শতাংশ।
ডব্লিউটিওর পরিসংখ্যান অনুসারে, এই সময়কালে ভারতের মোট রপ্তানি কমেছে ৬ শতাংশ। শীর্ষ ১০ তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র ভারতের রপ্তানিই এই সময়কালে কমেছে।
অন্যদিকে শীর্ষ ১০ তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে থাকা ভিয়েতনামের প্রবৃদ্ধি হয়েছে সবচেয়ে বেশি, ২৭ শতাংশ। ২০১০ সালে পোশাক রপ্তানির বিশ্ববাজারে ভিয়েতনামের অংশ দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ১০ শতাংশ, যেখানে ২০০৯ সালে এই হার ছিল ২ দশমিক ৭০ শতাংশ।
ডব্লিউটিওর এই পরিসংখ্যানে অবশ্য হংকংয়ের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ উল্লেখ করা হলেও তা চীনে অভ্যন্তরীণ ও পুনঃ রপ্তানি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। তাই শীর্ষ ১৫ তালিকায় রপ্তানির পরিমাণগত দিক থেকে হংকংয়ের অবস্থান তৃতীয় দেখা গেলেও বৈশ্বিক বাজারে হিস্যা খুবই নগণ্য (দশমিক ২০ শতাংশ)।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির সাবেক সভাপতি ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইইউর ২৭টি দেশকে আলাদাভাবে দেখা হলে বাংলাদেশ আসলে দ্বিতীয় স্থানে। চীনের পরই তাহলে বাংলাদেশ। এটা বাংলাদেশি পোশাক খাতের অগ্রগতির ও সম্ভাবনার একটি বড় নির্দেশক। এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই অবস্থান ধরে রাখা।’
ফজলুল হক ব্যাখ্যা করে বলেন, বিশ্বমন্দায় বাংলাদেশের পোশাক খাতও এখন চাপের মুখে আছে। তবে এটা সাময়িক। গোটা শিল্প কোনো হুমকির মুখে নেই। তবে অবকাঠামোর অপ্রতুলতা, দক্ষ জনশক্তির ঘাটতি ও অপরিকল্পিত শিল্পায়ন পোশাক খাতের সুদূরপ্রসারী সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপায়ণের ক্ষেত্রে বিরাট চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
বিকেএমইএর সাবেক এই সভাপতি আরও মনে করেন, বাংলাদেশি পোশাকপণ্য নির্দিষ্ট বাজারে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছে। কাজেই বৈশ্বিকভাবে সৃষ্ট সুযোগ কাজে লাগিয়ে এই অবস্থা থেকেও বের হয়ে আসতে হবে।