kazi ashraful islam

kazi ashraful islam

Friday, November 4, 2011

প্রাচ্যের ‘প্লে-বয়’দের গল্প!

হঠাৎ করেই ভারতীয়দের হাতে অনেক টাকা চলে এসেছে। এই টাকা তারা কোথায় খরচ করবে—তা ভেবে পাচ্ছে না। বিশাল অর্থনীতির এই দেশ। ব্যবসা করলেই কোটিপতি। নিজেদের পরিবার-পরিজন সামলিয়েও হাতে থাকে অনেক কাঁচা টাকা। সেই টাকা এখন তারা খরচ করছে জুয়ায়। জুয়া এখনো সামাজিকভাবে ভারতে অগ্রহণযোগ্য ব্যাপার হলেও এই জুয়ায় ভারতীয়রা লগ্নি করছে কোটি কোটি ডলার। বিখ্যাত ভারতীয় ইংরেজি সাময়িকী ইন্ডিয়া টুডের অক্টোবর সংখ্যায় ভারতীয়দের হঠাত্ পেয়ে বসা জুয়ার নেশা নিয়ে ছাপা হয়েছে দারুণ রোমাঞ্চকর এক প্রতিবেদন। এ প্রতিবেদনটি পড়লে অবাক হতে হয়, আশ্চর্য হতে হয়, যে দেশ এখনো তার সব নাগরিকের জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারেনি, যে দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে যেখানে এখনো ক্ষুধা মূল সমস্যা, যারা নিশ্চিত করতে পারেনি নাগরিকের স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন সুবিধা, সে দেশের নাগরিকেরা জুয়া খেলে কোটি কোটি ডলার খরচ করছে—ব্যাপারটি অবাক হওয়ার মতোই।
ভারতে জুয়া আইনসিদ্ধ কেবল দুটি স্থানে। গোয়া ও সিকিম। এ দুই জায়গা ছাড়া পুরো ভারতে জুয়া নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মোটামুটি কঠোর আইন। ১৮৬৭ সালের পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্টের অধীনে ভারতে জুয়ার সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছরের কারাদণ্ড। তার পরও অবশ্য জুয়াটা এ দেশে ‘আন্ডারগ্রাউন্ড কার্যক্রম’ হিসেবে বেশ জোরের সঙ্গেই চালু আছে।
ইন্ডিয়া টুডের এই বিশেষ প্রতিবেদনে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যাঁরা ভারতে আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত। প্রতিবেদনে হয়তো সেসব ব্যবসায়ীর আসল নাম উল্লেখ করা হয়নি, কিন্তু তাঁদের নিয়ে উল্লিখিত ঘটনাগুলো সত্যি। এ প্রতিবেদনে ব্যবসায়ী ছাড়াও করপোরেট পেশায় নিয়োজিত কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যাঁরা প্রায়ই সিঙ্গাপুর, হংকং কিংবা ম্যাকাওয়ের বিভিন্ন ক্যাসিনোতে নিয়ম করে যান। এবং প্রচুর টাকা উড়িয়ে আসেন। জুয়ার টেবিলে এঁদের যেমন আর্থিক ক্ষতির ব্যাপার আছে, ঠিক তেমনি রয়েছে বিপুল অঙ্কের অর্থপ্রাপ্তির ঘটনা।
বিরন মেহরা এমনই এক ব্যক্তিত্বের নাম। যিনি ভারতের একটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের বড় পদে কর্মরত। তিনি হংকংয়ের বিভিন্ন ক্যাসিনোতে লগ্নি করেছেন প্রায় ৫০ লাখ রুপির মতো। পাঁচ লাখ রুপি তিনি হেরেছেন। লাভ বাকি ৪৫ লাখ। এটা বর্তমানে ভারতীয় পয়সা ওয়ালাদের জুয়া-বাণিজ্যে নিতান্তই সিন্ধুতে বিন্দু বলা যায়।
দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রতিরাতে অনেক ভারতীয় হংকং, সিঙ্গাপুর কিংবা ম্যাকাওয়ের উদ্দেশে উড়ে যান, এঁরা সবাই জুয়া খেলতে যান। একটা সময় ছিল যখন কোথাও বেড়াতে গিয়ে অনেকেই সখে জুয়ায় মেতে উঠতেন। কিন্তু সময় পাল্টে গেছে। পরিবর্তিত অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে ভারতীয়রা এখন কেবল জুয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই বিদেশে যাচ্ছেন। প্রতিনিয়ত পূর্ব এশিয়ার এসব জুয়া স্পটগুলোতে ভারতীয় নাগরিকদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। গড়ে একেকজন ভারতীয় জুয়াড়ি এসব জায়গায় ১০ হাজার ডলার করে লগ্নি করেন।
ম্যাকাওয়ে ভারতীয় জুয়াড়ি যেখানে ২০০২ সালে ছিল মাত্র পাঁচ হাজার। এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দেড় লাখেরও বেশি। সিঙ্গাপুরে জুয়া খেলতে গিয়ে তো অনেকে পেয়েছেন সিঙ্গাপুর সরকারের কদর আর সমাদর। পাওয়ান বাগরি নামের একজন কলকাতাকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীকে সিঙ্গাপুরে গিয়ে খরচ করার জন্য দেওয়া হয়েছে সিঙ্গাপুর সরকারের বিশেষ সম্মাননা। তিনি হয়েছেন, সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বৃহত্ ‘খরুচে’।
এদিকে জুয়ার প্রতি ভারতীয় নাগরিকদের আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় আশার আলো দেখছে দক্ষিণ এশিয়ার ট্যুরিস্ট স্পট হিসেবে খ্যাত শ্রীলঙ্কা। খুব তাড়াতাড়িই সে দেশের সরকার জুয়াকে আইনি স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, শ্রীলঙ্কা সরকারের এ সিদ্ধান্ত শুধু ভারতীয় জুয়াড়িদের আকৃষ্ট করার জন্য। শ্রীলঙ্কা চাচ্ছে, যদি সিঙ্গাপুর হংকংয়ে গিয়ে অনেক বেশি খরচ করে ভারতীয়রা জুয়া খেলতে যেতে পারেন, তাহলে অপেক্ষাকৃত কম খরচে তাঁরা কেন শ্রীলঙ্কা যাবেন না। ভারতীয় জুয়াড়িরা এ মুহূর্তে শ্রীলঙ্কার মন্দা পর্যটন ব্যবসায়ের সঞ্জীবনী সুধা।
আগেই বলা হয়েছে ভারতে সিকিম ও গোয়ায় জুয়া আইনগতভাবে সিদ্ধ। গোয়ায় রয়েছে ২৪টি ক্যাসিনো। এই ক্যাসিনোগুলোতেও ভারতীয়রা সমানভাবে টাকা লগ্নি করে যাচ্ছে। গত দুই বছরে গোয়ার ক্যাসিনোগুলো ভারত সরকারকে রাজস্ব দিয়েছে ২৫০ কোটি রুপি। সিকিমেও ক্যাসিনো ব্যবসা প্রতিনিয়ত ফুলে-ফেঁপে উঠছে। সিকিম এখন উঠে-পড়ে লেগেছে রাজনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত নেপালের পর্যটন ব্যবসায়ে ভাগ বসাতে। খুব তাড়াতাড়িই এখানে একটি বিমানবন্দর তৈরি করছে ভারত সরকার।
গোয়ার ক্যাসিনো ব্যবসার প্রবৃদ্ধি গত তিন বছরে ৫০০ শতাংশ। এটি সেই সিঙ্গাপুর ও ম্যাকাওয়ের চেয়ে কি কোনো অংশে কম!
আয়তনের দিক দিয়ে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এ দেশে তাহলে পরিবর্তিত সংস্কৃতির হাওয়া লেগে গেছে! daily prothom alo news

No comments:

Post a Comment