kazi ashraful islam
Wednesday, September 8, 2010
Sunday, August 15, 2010
Saturday, June 19, 2010
Saturday, June 12, 2010
বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী সামিনা চৌধুরী গান শিখতে শুরু করেন তাঁর বাবা মাহমুদুন্নবীঁ এবং মা রাশিদা চৌধুরীর কাছে। আনুষ্ঠানিক ভাবে ধ্রুপদী সংগীত শিখতে শুরু করেন আরো পরে বরং তার আগেই ১৯৮১ সালেই তিনি চলচ্চিত্রে গান গাইতে শুরু করেন।
শিল্পী থেকে টেলিভিশনে বিচারক
‘একবার যদি কেউ ভালবাসত’ এই গানটি দিয়েই তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন । ক্লাস এইটে পড়ার সময়ে গাওয়া ওই গান দিয়ে সামিনা চৌধুরী চল্চ্চিত্রে গান শুরু করলেও এরপর তিনি টেলিভিশন, রেডিও সহ সব মাধ্যমে গাইতে শুরু করেন ।
খুব কম বয়সে এই সুযোগ পাওয়ার কারণ কি শিল্পী মাহমুদুন্নবীর কন্যা হওয়া কিনা সে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন তা মোটেও না বরং তিনি যখন গাইতে শুরু করেন তখন কেউ জানত না যে তার বাবা মাহমুদুন্নবী । যখন সবাই জানতে আরম্ভ করল তখন তিনি সামিনা নবী থেকে সামিনা চৌধুরী হয়ে গেছেন।
এক ধরণের অভিমান থেকে তার এই নাম পরিবর্তন বলে তিনি জানান।
সামিনার গাওয়া গানগুলোর মধ্যে বেশ কিছু গান জনপ্রিয় হবার পেছনে যেমন তার গান বাছাই করে গাওয়ার চেষ্টা আছে তেমনি আছে তার ভাগ্য।
একসময়ে একটি মাত্র টেলিভিশন চ্যানেল অর্থাৎ বাংলাদেশ টেলিভিশন থাকার ফলে সেসময়ে খুব দ্রুত মানুষের কাছে গান পৌছে যেত ।
একদিকে এর ফলে শুধু ভাল শিল্পীরা যেমন সুযোগ পেতেন, তেমনি এখন অনেক সুযোগ তৈরী হয়েছে৻ কিন্তু সামিনা বলেন , এখন সুযোগ বেশী হওয়ায় আগাছাও বেড়ে গেছে ।
এই সুযোগ বাড়ার জায়গা তেরী হয় বিভিন্ন ট্যালেন্ট হান্ট অনুষ্ঠানে যেখানে সামিনাও বিচারক হন । তবে তিনি বলেন এসব অনুষ্ঠানে বেশ কিছু ভাল গলা আসে তবে এরা আদর্শিক দিক থেকে ঠিক থাকে না বলেই হারিয়ে যায়।
সম্প্রতি একটি টিভি চ্যানেলের ট্যালেন্ট হান্ট অনুষ্ঠানে তাকে শুরু থেকে বিচারকের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেলেও চূড়ান্ত পর্বে তাকে দেখো যায়নি এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন তাকে জানানোই হয়নি চূড়ান্ত পর্বের কথা।
এই ঘটনা থেকেই তিনি হতাশ যে এদেশে শিল্পীদের পারস্পরিক সম্মানবোধ এবং বড়দের প্রতি ছোটদের শ্রদ্ধাবোধ উঠে যাচ্ছে কিনা । সামিনা এখন তার পুরনো গান গুলোর রিমেক এবং নতুন কিছু এ্যালবামের কাজে ব্যস্ত আছেন।
বিবিসি বাংলার ঢাকা স্টুডিওতে এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিথিলা ফারজানা
শিল্পী থেকে টেলিভিশনে বিচারক
‘একবার যদি কেউ ভালবাসত’ এই গানটি দিয়েই তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন । ক্লাস এইটে পড়ার সময়ে গাওয়া ওই গান দিয়ে সামিনা চৌধুরী চল্চ্চিত্রে গান শুরু করলেও এরপর তিনি টেলিভিশন, রেডিও সহ সব মাধ্যমে গাইতে শুরু করেন ।
খুব কম বয়সে এই সুযোগ পাওয়ার কারণ কি শিল্পী মাহমুদুন্নবীর কন্যা হওয়া কিনা সে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন তা মোটেও না বরং তিনি যখন গাইতে শুরু করেন তখন কেউ জানত না যে তার বাবা মাহমুদুন্নবী । যখন সবাই জানতে আরম্ভ করল তখন তিনি সামিনা নবী থেকে সামিনা চৌধুরী হয়ে গেছেন।
এক ধরণের অভিমান থেকে তার এই নাম পরিবর্তন বলে তিনি জানান।
সামিনার গাওয়া গানগুলোর মধ্যে বেশ কিছু গান জনপ্রিয় হবার পেছনে যেমন তার গান বাছাই করে গাওয়ার চেষ্টা আছে তেমনি আছে তার ভাগ্য।
একসময়ে একটি মাত্র টেলিভিশন চ্যানেল অর্থাৎ বাংলাদেশ টেলিভিশন থাকার ফলে সেসময়ে খুব দ্রুত মানুষের কাছে গান পৌছে যেত ।
একদিকে এর ফলে শুধু ভাল শিল্পীরা যেমন সুযোগ পেতেন, তেমনি এখন অনেক সুযোগ তৈরী হয়েছে৻ কিন্তু সামিনা বলেন , এখন সুযোগ বেশী হওয়ায় আগাছাও বেড়ে গেছে ।
এই সুযোগ বাড়ার জায়গা তেরী হয় বিভিন্ন ট্যালেন্ট হান্ট অনুষ্ঠানে যেখানে সামিনাও বিচারক হন । তবে তিনি বলেন এসব অনুষ্ঠানে বেশ কিছু ভাল গলা আসে তবে এরা আদর্শিক দিক থেকে ঠিক থাকে না বলেই হারিয়ে যায়।
সম্প্রতি একটি টিভি চ্যানেলের ট্যালেন্ট হান্ট অনুষ্ঠানে তাকে শুরু থেকে বিচারকের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেলেও চূড়ান্ত পর্বে তাকে দেখো যায়নি এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন তাকে জানানোই হয়নি চূড়ান্ত পর্বের কথা।
এই ঘটনা থেকেই তিনি হতাশ যে এদেশে শিল্পীদের পারস্পরিক সম্মানবোধ এবং বড়দের প্রতি ছোটদের শ্রদ্ধাবোধ উঠে যাচ্ছে কিনা । সামিনা এখন তার পুরনো গান গুলোর রিমেক এবং নতুন কিছু এ্যালবামের কাজে ব্যস্ত আছেন।
বিবিসি বাংলার ঢাকা স্টুডিওতে এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিথিলা ফারজানা
ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশের শিশুরা
ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশের শিশুরা
Großansicht des Bildes mit der Bildunterschrift: শিশু শ্রম জাতির ভবিষ্যতের জন্যও মঙ্গলজনক নয়বাংলাদেশে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে তাদের অংশগ্রহণ৷ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িত শিশু শ্রমিকের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে৷ তারা জড়িয়ে পড়তে পারে নানা অপরাধে৷
বাংলাদেশে মোট শ্রমিকের প্রায় ৩০ ভাগ শিশু শ্রমিক – এই সংখ্যা ২৫ লাখের কম হবে না৷ তারা সাধারণ কারখানায় যেমন কাজ করে, তেমনই ঝালাইয়ের কারখানা, ট্যানারি ও পলিথিনসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কারখানায়ও কাজ করছে৷ আর ঝুঁকিপূর্ণ কারখানায় কাজ করতে গিয়ে তারা প্রায়ই শিকার হচ্ছে দুর্ঘটনার৷ শিশুদের মজুরি যেমন কম, তেমনই দুর্ঘটনার শিকার হলে তাদের কোন ক্ষতিপূরণও দেয়া হয়না৷ যেমন বললেন শিশুদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারী সংগঠন উদ্দীপনের মো. শহীদুল্লাহ৷
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তাহমিনা বেগম ডয়চে ভেলেকে জানান, ট্যানারিসহ অন্যান্য শিল্পে কাজ করায় শিশুরা চর্মরোগসহ ক্যান্সারের ঝুঁকিব মধ্যে থাকে৷
আর শিশু মন বিশেষজ্ঞ ডা. এম এ সরদার জানান, শিশু শ্রম মানে নির্যাতন৷ শিশু শ্রমের ফলে শিশুদের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়৷ শিশুরা জড়িয়ে পড়তে পারে নানা অপরাধে৷
বিশ্লেষকরা বলছেন, শিশু শ্রম বন্ধ না হলে দেশে একটি অক্ষম জনগোষ্ঠী গড়ে উঠবে৷ যারা জাতির বোঝায় পরিণত হবে৷
প্রতিবেদন: হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন
বিশ্বকাপে মাতোয়ারা বলিউড
ছোটবেলায় মায়ের সঙ্গে সারারাত জেগে বিশ্বকাপ ফুটবলের খেলা দেখতেন শাহরুখ খান। দূরদর্শন চ্যানেলে রুডি ভোলার [জার্মানি], কার্ল হেইঞ্জ রোমনিগ [পশ্চিম জার্মানি], সক্রেটিস [ব্রাজিল] আর দিয়েগো ম্যারাডোনার [আর্জেন্টিনা] খেলা দেখে প্রতি মুহূর্তে শিহরিত হতেন বলিউডের এই অভিনেতা। তবে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগত ম্যারাডোনার খেলা। যে কারণে শাহরুখ খানের প্রিয় ফুটবল দল আর্জেন্টিনা। ছোটবেলার সেই ফুটবলের নেশা এখনও আছে শাহরুখের। দক্ষিণ আফ্রিকায় কাল শুরু হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসর বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১০। তাই স্ত্রী গৌরী আর দুই সন্তান আরিয়ান ও সুহানাকে নিয়ে বিশ্বকাপ দেখার সব প্রস্তুতি নিয়েছেন। তবে ঘরে বসে নয়, দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে বসেই সপরিবারে খেলা দেখবেন কিং খান। সামাজিক নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইট টুইটারে এ তথ্য জানান শাহরুখ। বিশ্বকাপ ফুটবলের কোনো একক দলের সমর্থক নন বিপাশা বসু। কেবল ফুটবলের টানেই দক্ষিণ আফ্রিকায় বসে খেলা দেখবেন তিনি।
এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে বসে বিশ্বকাপ ফুটবল ফাইনাল খেলা দেখার পরিকল্পনা করেছেন অভিষেক বচ্চন। নিজের ব্লগে ছেলের এ পরিকল্পনার কথা জানান বাবা অমিতাভ বচ্চন। তার ফুটবলপ্রীতিও কিন্তু কম নয়। ব্লগে তিনি বলেন, 'অনেক বছর আগে লস অ্যাঞ্জেলেসে ইতালি ও ব্রাজিলের মধ্যে বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলা হয়েছিল। সেটা দেখার জন্য অনেক কষ্টে সেখানে হাজির হয়েছিলাম। আমার জীবনে দেখা সেরা ফুটবল ম্যাচ এটি।'
এছাড়াও কারিনা কাপুর, সাইফ আলী খানসহ বলিউডের অনেকেই বিশ্বকাপ নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন।
এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে বসে বিশ্বকাপ ফুটবল ফাইনাল খেলা দেখার পরিকল্পনা করেছেন অভিষেক বচ্চন। নিজের ব্লগে ছেলের এ পরিকল্পনার কথা জানান বাবা অমিতাভ বচ্চন। তার ফুটবলপ্রীতিও কিন্তু কম নয়। ব্লগে তিনি বলেন, 'অনেক বছর আগে লস অ্যাঞ্জেলেসে ইতালি ও ব্রাজিলের মধ্যে বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলা হয়েছিল। সেটা দেখার জন্য অনেক কষ্টে সেখানে হাজির হয়েছিলাম। আমার জীবনে দেখা সেরা ফুটবল ম্যাচ এটি।'
এছাড়াও কারিনা কাপুর, সাইফ আলী খানসহ বলিউডের অনেকেই বিশ্বকাপ নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন।
বিশ্বকাপে ক্রিকেট কাঁপে
দুজনের বন্ধুত্বের কথাই জানেন সবাই। ভেতরে ভেতরে তৈরি হওয়া মহা শত্রুতার খবরটা কেউ রাখেন? বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে এখন রীতিমতো ‘গ্রুপিং’ করছেন সাকিব আল হাসান আর তামিম ইকবাল, যা এখন রীতিমতো চরমে। আগামী এক মাস কী অবস্থা হবে কে জানে!
জাতীয় দলের অধিনায়ক সাকিবের সঙ্গে বন্ধুবর ওপেনার তামিমের সম্পর্কে ফাটল ধরিয়েছেন মূলত সহকারী কোচ খালেদ মাহমুদ। সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা দু-একজন ছাড়া দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড় সাকিবের পতাকাতলে। ওদিকে অধিনায়কের বিরুদ্ধে তামিমের মগজধোলাই ভালোই করেছেন খালেদ মাহমুদ।
অবস্থা এমন যে দু পক্ষে চলছে তর্কযুদ্ধ, হুমকি-পাল্টা হুমকি। সদ্য সমাপ্ত ইংল্যান্ড সফরে নাকি এ ধরনের ঘটনা বেশ কটি ঘটেছে। হোটেল থেকে দল হয়তো মাঠে যাচ্ছে, বাসেই শুরু হয়ে গেল ‘লড়াই’। কোড অব কনডাক্টের কারণে শুধু মারামারিটাই হয়নি!
তামিম খুবই সাহসী। এক সহকারী কোচের প্রশ্রয়েই বেশ মারদাঙ্গা। সাকিবের শক্তি জনমত, ‘আমজনতা’র সমর্থন। সব মিলিয়ে জাতীয় ক্রিকেট দল আজ বিস্ফোরণোন্মুখ!
ঘাবড়ে গেলেন? লাল-সবুজের এত সুন্দর দলটা অন্তর্দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেল! ঘাবড়ানোর কিছু নেই, খারাপ লাগারও কিছু নেই। প্রতিবাদ আসার আগেই বলে দিচ্ছি—ওপরের খবরটি অতিরঞ্জিত, বাস্তবতার সীমা ছাড়িয়ে। তবে বাংলাদেশ দলে যে আজ সত্যি সত্যি দুটি ধারা, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। গোটা জাতি, গোটা বিশ্বের মতোই বিভেদের কম্পন লেগেছে এই দলে।
একদিকে সাকিবের আর্জেন্টিনা, অন্যদিকে ব্রাজিলের পক্ষে কেবল তামিম আর খালেদ মাহমুদ। জুনায়েদ সিদ্দিক অবশ্য দুই দিকেই ঢোল পেটাচ্ছেন, ‘আর্জেন্টিনা সাপোর্ট করে এর আগে দুঃখ পেয়েছি। এবার তাই ব্রাজিলকেও রেখেছি। আমি দু দলেরই সাপোর্টার।’ ব্যতিক্রম কেবল মুশফিকুর রহিম। তিনি ইংল্যান্ডের সমর্থক।
তামিম বলছেন, ব্রাজিলের শিল্পিত ফুটবলই ফুটবল, অন্য সব নাকি জাম্বুরা খেলা! নিজেকে পারিবারিকভাবেই ব্রাজিলের সমর্থক মনে করেন তামিম। ইংল্যান্ড সফরের সময় একদিন সে কথা বলছিলেনও, ‘এক চাচি ছাড়া আমার পরিবারে সবাই ব্রাজিল। এত দিনে মনে হয় বাসায় ব্রাজিলের পতাকাও লেগে গেছে।’
আর সাকিব...? নাহ্, সরাসরি কিছুই বলছেন না। সব নাকি বিশ্বকাপের পরে বলবেন, ‘আমি নিজেও জানি না আমি কোন দলের সাপোর্টার! হ্যাঁ, স্পেনের বলতে পারেন....নাহ্, এভাবে বলা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না। আসলে বিশ্বকাপের পরেই বলা যাবে ঠিক করে...(হাসি)। এখন বললে সমস্যা আছে।’
সাকিব আসলে বুঝে-শুনে পা ফেলতে চান। তবে বিশ্বকাপে প্রিয় দল নিয়ে আবেগ সবার এতটাই বেশি যে চাইলেও মনের গোপন কথাটি গোপন থাকে না। সাকিবও কোনো না কোনোভাবে ঠিকই বুঝিয়ে দিচ্ছেন, তিনি আসলে কতটা ‘আর্জেন্টাইন’।
তামিমের সঙ্গে ধরা বাজিটার কথাই বলি। দুজনে অদ্ভুত এক বাজি হয়েছে বিশ্বকাপ নিয়ে। তামিমের প্রিয় ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, সাকিবের মেসি। তামিম বলেছেন, মেসি বিশ্বকাপে তিন গোলের বেশি করতে পারবেন না। সাকিবের দাবি, পারবে। প্রথমে বাজির শর্ত ছিল এক শ বেলা খাওয়ানো। পরে সেটা বদলে আঁতে ঘা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। বিশ্বকাপে মেসি তিনটির বেশি গোল করলে তামিমকে বলতে হবে, ‘ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর চেয়ে মেসি ভালো খেলোয়াড়।’ আর মেসি তিন বা আরও কম গোল করলে সাকিব বলবেন, ‘রোনালদো মেসির চেয়ে ভালো খেলোয়াড়।’ সাকিব কোন দলের সমর্থক, এরপর বলে দিতে হবে?
আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা বেশির ভাগ ম্যারাডোনার খেলা দেখে দেশটির সমর্থক। সাকিব ম্যারাডোনার খেলা খেলেননি, আর্জেন্টিনা নিয়ে তাঁর এত দরদ কেন? ‘মেসির জন্যই। ম্যারাডোনোর খেলা আমি দেখিনি। কোনো ধারণা নেই। ইউটিউবে কিছু ফুটেজ দেখছি কেবল’—বলছেন সাকিব।
বাংলাদেশ অধিনায়ক সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন ধরছেন স্পেনকে। তবে ব্রাজিল আর জার্মানিকেও রাখছেন সম্ভাব্য শিরোপাজয়ীর দলে, ‘স্পেনের খুব ভালো সুযোগ আছে। ওদের খেলোয়াড়েরা ক্লাবে দেওয়া সার্ভিসটা বিশ্বকাপেও দিতে পারলে স্পেনই এবার চ্যাম্পিয়ন। এ ছাড়া ব্রাজিল সব সময়ই ফেবারিট...পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। জার্মানি তো বড় আসরেরই দল। জাতিটাই কেমন...হিটলার হিটলার ভাব।’
স্পেন দলটাকে নাকি নিজের প্রিয় দল বার্সেলোনার মতো লাগে সাকিবের কাছে, ‘ফ্যাব্রিগাস, জাভি, ইনিয়েস্তা, তোরেস, গোলকিপার ক্যাসিয়াস... ডিফেন্সও ভালো, সলিড টিম। পিকে-পুয়োল আছে। দলটাকে বার্সেলোনা-বার্সেলোনা লাগে। আমার প্রিয় দলও বার্সেলোনা।’
তামিমের চোখে ব্রাজিলই সেরা। যদিও কিছুটা হতাশ তিনি, ‘একটা কারণে এবারের বিশ্বকাপ দেখে মজা পাব না, রোনালদিনহো নেই। ওর খেলা দেখতেই অন্য রকম লাগে।’
খেলা দেখার সুযোগ কি পাবেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা? ডাম্বুলায় এশিয়া কাপ শুরু হচ্ছে ১৫ জুন। সব খেলা দিনে হলেও ম্যাচের আগের দিন রাত জেগে পরদিন খেলাটা কষ্টকর। তার পরও সাকিব আশাবাদী, ‘পরদিন খেলা থাকলে রাত জেগে খেলা দেখা যাবে না। তবে পরদিন খেলা দেখা যাবে।’
সাকিব ছোটবেলায় ফুটবলটাই বেশি খেলতেন, ক্রিকেটের চেয়েও বেশি ভালো লাগত এই খেলা। বলেছেন, ‘যদি দুটি খেলা একসঙ্গে চলে এবং ক্রিকেটে বাংলাদেশের খেলা না হয়, কোনো চান্স নেই আমার ক্রিকেট খেলা দেখার। মোটামুটি মানের হলেও আমি ফুটবলই দেখব।’
সাকিবের দাবি, বিশ্বকাপে এই লোভটা তিনি সামলাতে পারবেন। কারণ বিশ্বকাপ ফুটবল যত বড় খেলাই হোক, ক্রিকেটটা তাঁর নিজের খেলা। তাই বলতে পারেন, ‘আরেকবার জন্ম নিলে আমি ক্রিকেটারই হতে চাই।’ তা হোন, তামিমের সঙ্গে এই ‘লড়াই’-এ জয় নিয়েই তাঁকে এখন বেশি ভাবতে হচ্ছে। হাজার হোক, মর্যাদার প্রশ্ন!
জাতীয় দলের অধিনায়ক সাকিবের সঙ্গে বন্ধুবর ওপেনার তামিমের সম্পর্কে ফাটল ধরিয়েছেন মূলত সহকারী কোচ খালেদ মাহমুদ। সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা দু-একজন ছাড়া দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড় সাকিবের পতাকাতলে। ওদিকে অধিনায়কের বিরুদ্ধে তামিমের মগজধোলাই ভালোই করেছেন খালেদ মাহমুদ।
অবস্থা এমন যে দু পক্ষে চলছে তর্কযুদ্ধ, হুমকি-পাল্টা হুমকি। সদ্য সমাপ্ত ইংল্যান্ড সফরে নাকি এ ধরনের ঘটনা বেশ কটি ঘটেছে। হোটেল থেকে দল হয়তো মাঠে যাচ্ছে, বাসেই শুরু হয়ে গেল ‘লড়াই’। কোড অব কনডাক্টের কারণে শুধু মারামারিটাই হয়নি!
তামিম খুবই সাহসী। এক সহকারী কোচের প্রশ্রয়েই বেশ মারদাঙ্গা। সাকিবের শক্তি জনমত, ‘আমজনতা’র সমর্থন। সব মিলিয়ে জাতীয় ক্রিকেট দল আজ বিস্ফোরণোন্মুখ!
ঘাবড়ে গেলেন? লাল-সবুজের এত সুন্দর দলটা অন্তর্দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেল! ঘাবড়ানোর কিছু নেই, খারাপ লাগারও কিছু নেই। প্রতিবাদ আসার আগেই বলে দিচ্ছি—ওপরের খবরটি অতিরঞ্জিত, বাস্তবতার সীমা ছাড়িয়ে। তবে বাংলাদেশ দলে যে আজ সত্যি সত্যি দুটি ধারা, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। গোটা জাতি, গোটা বিশ্বের মতোই বিভেদের কম্পন লেগেছে এই দলে।
একদিকে সাকিবের আর্জেন্টিনা, অন্যদিকে ব্রাজিলের পক্ষে কেবল তামিম আর খালেদ মাহমুদ। জুনায়েদ সিদ্দিক অবশ্য দুই দিকেই ঢোল পেটাচ্ছেন, ‘আর্জেন্টিনা সাপোর্ট করে এর আগে দুঃখ পেয়েছি। এবার তাই ব্রাজিলকেও রেখেছি। আমি দু দলেরই সাপোর্টার।’ ব্যতিক্রম কেবল মুশফিকুর রহিম। তিনি ইংল্যান্ডের সমর্থক।
তামিম বলছেন, ব্রাজিলের শিল্পিত ফুটবলই ফুটবল, অন্য সব নাকি জাম্বুরা খেলা! নিজেকে পারিবারিকভাবেই ব্রাজিলের সমর্থক মনে করেন তামিম। ইংল্যান্ড সফরের সময় একদিন সে কথা বলছিলেনও, ‘এক চাচি ছাড়া আমার পরিবারে সবাই ব্রাজিল। এত দিনে মনে হয় বাসায় ব্রাজিলের পতাকাও লেগে গেছে।’
আর সাকিব...? নাহ্, সরাসরি কিছুই বলছেন না। সব নাকি বিশ্বকাপের পরে বলবেন, ‘আমি নিজেও জানি না আমি কোন দলের সাপোর্টার! হ্যাঁ, স্পেনের বলতে পারেন....নাহ্, এভাবে বলা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না। আসলে বিশ্বকাপের পরেই বলা যাবে ঠিক করে...(হাসি)। এখন বললে সমস্যা আছে।’
সাকিব আসলে বুঝে-শুনে পা ফেলতে চান। তবে বিশ্বকাপে প্রিয় দল নিয়ে আবেগ সবার এতটাই বেশি যে চাইলেও মনের গোপন কথাটি গোপন থাকে না। সাকিবও কোনো না কোনোভাবে ঠিকই বুঝিয়ে দিচ্ছেন, তিনি আসলে কতটা ‘আর্জেন্টাইন’।
তামিমের সঙ্গে ধরা বাজিটার কথাই বলি। দুজনে অদ্ভুত এক বাজি হয়েছে বিশ্বকাপ নিয়ে। তামিমের প্রিয় ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, সাকিবের মেসি। তামিম বলেছেন, মেসি বিশ্বকাপে তিন গোলের বেশি করতে পারবেন না। সাকিবের দাবি, পারবে। প্রথমে বাজির শর্ত ছিল এক শ বেলা খাওয়ানো। পরে সেটা বদলে আঁতে ঘা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। বিশ্বকাপে মেসি তিনটির বেশি গোল করলে তামিমকে বলতে হবে, ‘ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর চেয়ে মেসি ভালো খেলোয়াড়।’ আর মেসি তিন বা আরও কম গোল করলে সাকিব বলবেন, ‘রোনালদো মেসির চেয়ে ভালো খেলোয়াড়।’ সাকিব কোন দলের সমর্থক, এরপর বলে দিতে হবে?
আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা বেশির ভাগ ম্যারাডোনার খেলা দেখে দেশটির সমর্থক। সাকিব ম্যারাডোনার খেলা খেলেননি, আর্জেন্টিনা নিয়ে তাঁর এত দরদ কেন? ‘মেসির জন্যই। ম্যারাডোনোর খেলা আমি দেখিনি। কোনো ধারণা নেই। ইউটিউবে কিছু ফুটেজ দেখছি কেবল’—বলছেন সাকিব।
বাংলাদেশ অধিনায়ক সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন ধরছেন স্পেনকে। তবে ব্রাজিল আর জার্মানিকেও রাখছেন সম্ভাব্য শিরোপাজয়ীর দলে, ‘স্পেনের খুব ভালো সুযোগ আছে। ওদের খেলোয়াড়েরা ক্লাবে দেওয়া সার্ভিসটা বিশ্বকাপেও দিতে পারলে স্পেনই এবার চ্যাম্পিয়ন। এ ছাড়া ব্রাজিল সব সময়ই ফেবারিট...পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। জার্মানি তো বড় আসরেরই দল। জাতিটাই কেমন...হিটলার হিটলার ভাব।’
স্পেন দলটাকে নাকি নিজের প্রিয় দল বার্সেলোনার মতো লাগে সাকিবের কাছে, ‘ফ্যাব্রিগাস, জাভি, ইনিয়েস্তা, তোরেস, গোলকিপার ক্যাসিয়াস... ডিফেন্সও ভালো, সলিড টিম। পিকে-পুয়োল আছে। দলটাকে বার্সেলোনা-বার্সেলোনা লাগে। আমার প্রিয় দলও বার্সেলোনা।’
তামিমের চোখে ব্রাজিলই সেরা। যদিও কিছুটা হতাশ তিনি, ‘একটা কারণে এবারের বিশ্বকাপ দেখে মজা পাব না, রোনালদিনহো নেই। ওর খেলা দেখতেই অন্য রকম লাগে।’
খেলা দেখার সুযোগ কি পাবেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা? ডাম্বুলায় এশিয়া কাপ শুরু হচ্ছে ১৫ জুন। সব খেলা দিনে হলেও ম্যাচের আগের দিন রাত জেগে পরদিন খেলাটা কষ্টকর। তার পরও সাকিব আশাবাদী, ‘পরদিন খেলা থাকলে রাত জেগে খেলা দেখা যাবে না। তবে পরদিন খেলা দেখা যাবে।’
সাকিব ছোটবেলায় ফুটবলটাই বেশি খেলতেন, ক্রিকেটের চেয়েও বেশি ভালো লাগত এই খেলা। বলেছেন, ‘যদি দুটি খেলা একসঙ্গে চলে এবং ক্রিকেটে বাংলাদেশের খেলা না হয়, কোনো চান্স নেই আমার ক্রিকেট খেলা দেখার। মোটামুটি মানের হলেও আমি ফুটবলই দেখব।’
সাকিবের দাবি, বিশ্বকাপে এই লোভটা তিনি সামলাতে পারবেন। কারণ বিশ্বকাপ ফুটবল যত বড় খেলাই হোক, ক্রিকেটটা তাঁর নিজের খেলা। তাই বলতে পারেন, ‘আরেকবার জন্ম নিলে আমি ক্রিকেটারই হতে চাই।’ তা হোন, তামিমের সঙ্গে এই ‘লড়াই’-এ জয় নিয়েই তাঁকে এখন বেশি ভাবতে হচ্ছে। হাজার হোক, মর্যাদার প্রশ্ন!
সেরা দশ স্কোরার
সেরা দশ স্কোরার
তারিখ: ১১-০৬-২০১০
রোনালদো ব্রাজিল ১৫
জার্ড মুলার জার্মানি ১৪
জাঁ ফন্টেইন ফ্রান্স ১৩
পেলে ব্রাজিল ১২
স্যান্ডর ককসিস হাঙ্গেরি ১১
ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমান জার্মানি ১১
হেলমুট রান জার্মানি ১০
তেওফিলিও কাবিলাস পেরু ১০
গ্যারি লিনেকার ইংল্যান্ড ১০
জর্জ লাটো পর্তুগাল ১০
গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা আর্জেন্টিনা ১০
মিরোস্লাভ ক্লোসা জার্মানি ১০
তারিখ: ১১-০৬-২০১০
রোনালদো ব্রাজিল ১৫
জার্ড মুলার জার্মানি ১৪
জাঁ ফন্টেইন ফ্রান্স ১৩
পেলে ব্রাজিল ১২
স্যান্ডর ককসিস হাঙ্গেরি ১১
ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমান জার্মানি ১১
হেলমুট রান জার্মানি ১০
তেওফিলিও কাবিলাস পেরু ১০
গ্যারি লিনেকার ইংল্যান্ড ১০
জর্জ লাটো পর্তুগাল ১০
গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা আর্জেন্টিনা ১০
মিরোস্লাভ ক্লোসা জার্মানি ১০
সেরা গোল
সেরা গোল
তারিখ: ১১-০৬-২০১০
বল পায়ে জাদুকর, কোটি কোটি মানুষকে আনন্দে উদ্বেল করে তোলার ক্ষমতা যাঁর, তাঁর মধ্যেই নিয়ত খেলা করে আত্মধ্বংসী প্রবণতা। ডিয়েগো ম্যারাডোনার পুরো জীবনটাই যেন ভালো-মন্দের লড়াই। এই লড়াইয়ের প্রতীকী ধরা যেতে পারে ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ। তিন মিনিটের ব্যবধানে এমন দুটি গোল করেছিলেন ম্যারাডোনা, যার একটি হয়ে আছে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত, অন্যটি বিশ্বকাপের সেরা। প্রথমটি সেই বিখ্যাত বা কুখ্যাত ‘হ্যান্ড অব গড’ গোল। দ্বিতীয়টি ম্যারাডোনার গ্রেটনেসের সবচেয়ে জাজ্বল্যমান প্রমাণ, ফিফার ওয়েবসাইট জরিপে যেটি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সেরা গোলের। এটিকে অনেকে বলেন ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’—শতাব্দীর সেরা গোল।
বাঁ হাত দিয়ে গোল করার তিন মিনিট পরই ওই অবিশ্বাস্য গোল। নিজেদের সীমানার ১০ গজ ভেতরে হেক্টর এনরিকে পাস দিলেন ম্যারাডোনাকে। বল পেয়ে ম্যারাডোনা শুরু করলেন ১০ সেকেন্ডের ওই ষাটগজি জাদুকরি দৌড়। একে একে পেছনে ফেললেন ইংল্যান্ডের পাঁচ খেলোয়াড় হডল, রিড, স্যানসম, বুচার ও ফেনউইককে। সব বাধা ভেঙেচুরে ম্যারাডোনাকে পেনাল্টি বক্সে ঢুকে পড়তে দেখে গোলপোস্ট ছেড়ে এগিয়ে গিয়ে শট নেওয়ার কোণটা বন্ধ করে দিতে চাইলেন ইংলিশ গোলরক্ষক পিটার শিলটন। কিন্তু ম্যারাডোনার ওপর তখন যেন ভর করেছে দৈবশক্তি, তাঁকে ঠেকানোর সাধ্য কী শিলটনের!
এই গোল নিয়ে পরে ম্যারাডোনা বলেছেন, ‘আমি বলটা ভালদানোকে দিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওরা আমাকে ঘিরে ধরায় আমার সামনে কোনো জায়গা ছিল না।’ গ্যারি লিনেকার বলেন, ‘ফুটবল মাঠে এই একবারই প্রতিপক্ষের কোনো গোলে আমার হাততালি দিতে ইচ্ছে করছিল।’
তারিখ: ১১-০৬-২০১০
বল পায়ে জাদুকর, কোটি কোটি মানুষকে আনন্দে উদ্বেল করে তোলার ক্ষমতা যাঁর, তাঁর মধ্যেই নিয়ত খেলা করে আত্মধ্বংসী প্রবণতা। ডিয়েগো ম্যারাডোনার পুরো জীবনটাই যেন ভালো-মন্দের লড়াই। এই লড়াইয়ের প্রতীকী ধরা যেতে পারে ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ। তিন মিনিটের ব্যবধানে এমন দুটি গোল করেছিলেন ম্যারাডোনা, যার একটি হয়ে আছে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত, অন্যটি বিশ্বকাপের সেরা। প্রথমটি সেই বিখ্যাত বা কুখ্যাত ‘হ্যান্ড অব গড’ গোল। দ্বিতীয়টি ম্যারাডোনার গ্রেটনেসের সবচেয়ে জাজ্বল্যমান প্রমাণ, ফিফার ওয়েবসাইট জরিপে যেটি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সেরা গোলের। এটিকে অনেকে বলেন ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’—শতাব্দীর সেরা গোল।
বাঁ হাত দিয়ে গোল করার তিন মিনিট পরই ওই অবিশ্বাস্য গোল। নিজেদের সীমানার ১০ গজ ভেতরে হেক্টর এনরিকে পাস দিলেন ম্যারাডোনাকে। বল পেয়ে ম্যারাডোনা শুরু করলেন ১০ সেকেন্ডের ওই ষাটগজি জাদুকরি দৌড়। একে একে পেছনে ফেললেন ইংল্যান্ডের পাঁচ খেলোয়াড় হডল, রিড, স্যানসম, বুচার ও ফেনউইককে। সব বাধা ভেঙেচুরে ম্যারাডোনাকে পেনাল্টি বক্সে ঢুকে পড়তে দেখে গোলপোস্ট ছেড়ে এগিয়ে গিয়ে শট নেওয়ার কোণটা বন্ধ করে দিতে চাইলেন ইংলিশ গোলরক্ষক পিটার শিলটন। কিন্তু ম্যারাডোনার ওপর তখন যেন ভর করেছে দৈবশক্তি, তাঁকে ঠেকানোর সাধ্য কী শিলটনের!
এই গোল নিয়ে পরে ম্যারাডোনা বলেছেন, ‘আমি বলটা ভালদানোকে দিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওরা আমাকে ঘিরে ধরায় আমার সামনে কোনো জায়গা ছিল না।’ গ্যারি লিনেকার বলেন, ‘ফুটবল মাঠে এই একবারই প্রতিপক্ষের কোনো গোলে আমার হাততালি দিতে ইচ্ছে করছিল।’
এডসন সিলভা ডিডো
এই লেখা লিখছি ৪ জুন। এখন আমি ব্রাজিলেই একটা ফুটবল কোচেস সেমিনার করছি। এই সময়ে কিছু তরুণ খেলোয়াড়কেও দেখছি। পরের সপ্তাহে হয়তো হল্যান্ড যাব। তবে দুই-এক দিনের মধ্যে আমার শহর রিও ডি জেনিরোতে ফিরে যাচ্ছি।
আগেও বলেছি, আবার বলছি—আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি। এর ইতিহাস অসাধারণ। সেখানে কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে সমস্যা ছাড়া আর সবকিছুই উপভোগ করেছি। এখনো আমি বলি বাংলাদেশে ফুটবল-হীরা আছে। এটাকে পরিচর্যা করা দরকার। এবং আমি সব সময় সেই সুন্দর হীরাগুলো মিস করি।
সে যাই হোক, মূল প্রসঙ্গে আসি। আমি জানি বাংলাদেশে ব্রাজিলের অনেক সমর্থক আছেন। লোকে ব্রাজিলের খেলা পছন্দ করেন। তাঁরা ব্রাজিলের জয় দেখতে উদগ্রীব হয়ে আছেন। তাঁদের সঙ্গে আমিও উদগ্রীব। আমি বিশ্বাস করি, ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিতবে। দুঙ্গার দল নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, তবে ব্রাজিল বরাবরই বিশ্বকাপের প্রধান ফেবারিট দল।
এখানে এখন কী অবস্থা, সেটা না বললেও অনুমান করে নিন। ষষ্ঠ বিশ্বকাপ শিরোপার জয় দেখতে আমরা সবাই সামনে তাকিয়ে আছি এবং তা স্মরণীয় করে রাখতে চাই। তবে মুখে আমরা আশাবাদী হচ্ছি ঠিকই, একটা সংশয় কিন্তু সবার মধ্যেই দেখছি। আবেগ আর যুক্তি তো এক নয়। আবেগ ব্রাজিলকে এগিয়ে রাখলে যুক্তি একটু পেছনে টেনে নিচ্ছেই। এর কারণ মূলত দুটি—
ব্রাজিল তার আসল খেলাটা থেকে সরে গেছে।
দুঙ্গার দল নির্বাচন সঠিক হয়নি।
ব্রাজিল দলের দায়িত্ব নিয়ে কোপা আমেরিকা আর কনফেডারেশনস কাপ জিতছেন দুঙ্গা। আমি তো বলব, তিনি শুধু ট্রফিই এনেছেন, মানুষের হূদয় ছুঁতে পারেননি। মানুষ ব্রাজিলের কাছে সুন্দর ফুটবল দেখতে চায়। সুন্দর ফুটবল খেলার ঐতিহ্য আছে আমাদের। কিন্তু দুঙ্গার ব্রাজিল আর আগের ব্রাজিল নেই। দুঙ্গা খেলোয়াড় হিসেবে যেমন রক্ষণাত্মক ছিলেন, এখনো সেই রক্ষণাত্মকই রয়ে গেলেন। তাঁর ফুটবল মানে কুিসত ফুটবল! এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। গোটা দেশ দুঙ্গার নেতিবাচক ফুটবলে বিরক্ত।
তাঁর বিশ্বকাপ দলের বেশির ভাগ মিডফিল্ডারই সৃজনশীল নন। বুঝুন অবস্থা! এই দলে কাকা ছাড়া নির্ভর করার মতো মিডফিল্ডার নেই! কাকা ভালো না খেললে দলটির বিপদ আছে। এমন কেউ নেই, কাকা ভালো না খেললে তাঁর কাজটা করে দেবে। আমার মতে, এটা কোনো মাঝমাঠই হলো না।
দেখুন, দুজন সেরা খেলোয়াড় বাদ দিয়েই ব্রাজিল গেছেন আমাদের কোচ সাহেব। সান্তোসের পাওলো হেনরিক গানসো এবং নেইমার। নেইমারের বয়স ১৮ বছর, গানসোর ২১। দুজনই এই মুহূর্তে ব্রাজিল ফুটবলের সেনসেশন। কিন্তু দুঙ্গা বলেছেন ওরা নাকি খুবই তরুণ। তরুণ! তরুণ বলে ওদের দলে নেওয়া যাবে না? হায়, দুঙ্গা!
গোটা জাতি দুঙ্গার এই খেয়ালিপনার বিরুদ্ধে। পেলে, জিকো, সক্রেটিস, ফ্যালকাও, রোমারিও এবং আমি নিজেও সমালোচনা করেছি। আমরা সবাই আমাদের মতামত জানিয়েছি, তবে কোচের পছন্দের ও সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে। ব্রাজিলে কোচই হচ্ছেন দল নির্বাচনের একক ক্ষমতাধারী (প্রসঙ্গক্রমে বলতে হচ্ছে, বাংলাদেশে খেলোয়াড়ের নাম ঠিক করতে চান কর্মকর্তারা)।
সে যাই হোক, এত কিছুর পরও ব্রাজিল ব্রাজিলই। এই আশা নিয়েই অপেক্ষায় আছে ব্রাজিলিয়ানরা।
লুইস ফ্যাবিয়ানো আলো কাড়বে। ব্রাজিলকে টেনে নেওয়ার অনেকটা দায়িত্ব বর্তাবে তার ওপর। এবং বিশ্বকাপের সেরা গোলদাতা ফ্যাবিয়ানোই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রবিনহো হতে পারে দলের মূল খেলোয়াড়, পরিণত ফুটবল খেলবে সে।
শেষ করলাম। আপনাদের মঙ্গল কামনা করি। ভালো থাকবেন।
এই লেখা লিখছি ৪ জুন। এখন আমি ব্রাজিলেই একটা ফুটবল কোচেস সেমিনার করছি। এই সময়ে কিছু তরুণ খেলোয়াড়কেও দেখছি। পরের সপ্তাহে হয়তো হল্যান্ড যাব। তবে দুই-এক দিনের মধ্যে আমার শহর রিও ডি জেনিরোতে ফিরে যাচ্ছি।
আগেও বলেছি, আবার বলছি—আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি। এর ইতিহাস অসাধারণ। সেখানে কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে সমস্যা ছাড়া আর সবকিছুই উপভোগ করেছি। এখনো আমি বলি বাংলাদেশে ফুটবল-হীরা আছে। এটাকে পরিচর্যা করা দরকার। এবং আমি সব সময় সেই সুন্দর হীরাগুলো মিস করি।
সে যাই হোক, মূল প্রসঙ্গে আসি। আমি জানি বাংলাদেশে ব্রাজিলের অনেক সমর্থক আছেন। লোকে ব্রাজিলের খেলা পছন্দ করেন। তাঁরা ব্রাজিলের জয় দেখতে উদগ্রীব হয়ে আছেন। তাঁদের সঙ্গে আমিও উদগ্রীব। আমি বিশ্বাস করি, ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিতবে। দুঙ্গার দল নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, তবে ব্রাজিল বরাবরই বিশ্বকাপের প্রধান ফেবারিট দল।
এখানে এখন কী অবস্থা, সেটা না বললেও অনুমান করে নিন। ষষ্ঠ বিশ্বকাপ শিরোপার জয় দেখতে আমরা সবাই সামনে তাকিয়ে আছি এবং তা স্মরণীয় করে রাখতে চাই। তবে মুখে আমরা আশাবাদী হচ্ছি ঠিকই, একটা সংশয় কিন্তু সবার মধ্যেই দেখছি। আবেগ আর যুক্তি তো এক নয়। আবেগ ব্রাজিলকে এগিয়ে রাখলে যুক্তি একটু পেছনে টেনে নিচ্ছেই। এর কারণ মূলত দুটি—
ব্রাজিল তার আসল খেলাটা থেকে সরে গেছে।
দুঙ্গার দল নির্বাচন সঠিক হয়নি।
ব্রাজিল দলের দায়িত্ব নিয়ে কোপা আমেরিকা আর কনফেডারেশনস কাপ জিতছেন দুঙ্গা। আমি তো বলব, তিনি শুধু ট্রফিই এনেছেন, মানুষের হূদয় ছুঁতে পারেননি। মানুষ ব্রাজিলের কাছে সুন্দর ফুটবল দেখতে চায়। সুন্দর ফুটবল খেলার ঐতিহ্য আছে আমাদের। কিন্তু দুঙ্গার ব্রাজিল আর আগের ব্রাজিল নেই। দুঙ্গা খেলোয়াড় হিসেবে যেমন রক্ষণাত্মক ছিলেন, এখনো সেই রক্ষণাত্মকই রয়ে গেলেন। তাঁর ফুটবল মানে কুিসত ফুটবল! এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। গোটা দেশ দুঙ্গার নেতিবাচক ফুটবলে বিরক্ত।
তাঁর বিশ্বকাপ দলের বেশির ভাগ মিডফিল্ডারই সৃজনশীল নন। বুঝুন অবস্থা! এই দলে কাকা ছাড়া নির্ভর করার মতো মিডফিল্ডার নেই! কাকা ভালো না খেললে দলটির বিপদ আছে। এমন কেউ নেই, কাকা ভালো না খেললে তাঁর কাজটা করে দেবে। আমার মতে, এটা কোনো মাঝমাঠই হলো না।
দেখুন, দুজন সেরা খেলোয়াড় বাদ দিয়েই ব্রাজিল গেছেন আমাদের কোচ সাহেব। সান্তোসের পাওলো হেনরিক গানসো এবং নেইমার। নেইমারের বয়স ১৮ বছর, গানসোর ২১। দুজনই এই মুহূর্তে ব্রাজিল ফুটবলের সেনসেশন। কিন্তু দুঙ্গা বলেছেন ওরা নাকি খুবই তরুণ। তরুণ! তরুণ বলে ওদের দলে নেওয়া যাবে না? হায়, দুঙ্গা!
গোটা জাতি দুঙ্গার এই খেয়ালিপনার বিরুদ্ধে। পেলে, জিকো, সক্রেটিস, ফ্যালকাও, রোমারিও এবং আমি নিজেও সমালোচনা করেছি। আমরা সবাই আমাদের মতামত জানিয়েছি, তবে কোচের পছন্দের ও সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে। ব্রাজিলে কোচই হচ্ছেন দল নির্বাচনের একক ক্ষমতাধারী (প্রসঙ্গক্রমে বলতে হচ্ছে, বাংলাদেশে খেলোয়াড়ের নাম ঠিক করতে চান কর্মকর্তারা)।
সে যাই হোক, এত কিছুর পরও ব্রাজিল ব্রাজিলই। এই আশা নিয়েই অপেক্ষায় আছে ব্রাজিলিয়ানরা।
লুইস ফ্যাবিয়ানো আলো কাড়বে। ব্রাজিলকে টেনে নেওয়ার অনেকটা দায়িত্ব বর্তাবে তার ওপর। এবং বিশ্বকাপের সেরা গোলদাতা ফ্যাবিয়ানোই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রবিনহো হতে পারে দলের মূল খেলোয়াড়, পরিণত ফুটবল খেলবে সে।
শেষ করলাম। আপনাদের মঙ্গল কামনা করি। ভালো থাকবেন।
বড় কাপের ছোট রহস্য
বড় কাপের ছোট রহস্য
একেকটি সেকেন্ডকে এখন মনে হচ্ছে একটি দীর্ঘ দিন কিংবা রাতের মতো, একটি ঘণ্টাকে দীর্ঘ এক যুগ। দলগুলো চূড়ান্ত লড়াইয়ের মঞ্চে এসে উপস্থিত। আকাশে-বাতাসে মাদল বাজছে। মহাসিন্ধুর ওপার থেকে যেন ভেসে আসছে অন্য ভুবনের আনন্দ। বাংলাদেশের আকাশে উঠে গেছে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের পতাকা। ছোট, মাঝারি কিংবা পেল্লায় আকারের। শরীর আর ধরে রাখতে পারছে না উত্তেজনার তরঙ্গ। কখন আসবে সেই মুহূর্ত, যখন সত্যি সত্যিই মাঠে নামবে ধরনির সবচেয়ে বড় ফুটবল উত্সব।
মূল রং ফুটবল, সেই রং থেকে ছড়িয়ে পড়ে আলোর বর্ণালি। ফুটবল উত্সবই তো। এখানেই মনে হয় একটা সাধারণ ভুল আমরা করে ফেলি। এটা জগতের সেরা ক্রীড়াযজ্ঞও বটে। পরিসংখ্যান বলছে, এই ক্রীড়াযজ্ঞের দিকে এবার সরাসরি মাঠে গিয়ে কিংবা টেলিভিশনের পর্দা দিয়ে চোখ রাখবে পুরো পৃথিবীর প্রায় ৩০০ কোটি মানুষ। তার মানে প্রায় ৬০০ কোটি চোখ। বিশ্বকাপের বিশালতা বোঝাতে আর কী চাই! না, বিশালতার সূচক আরও আছে। যদি বলেন, আয়োজক দেশের অর্থনীতির মানদণ্ডেও সেটি মাপা যায়। সেটি বছর শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার জিডিপির উল্লম্ফন আপনাকে পরিষ্কার করে দেবে। আর খেলার মাঠে যা দৃশ্যমান হবে তা প্রতিযোগিতা। প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ক্ষুরধার প্রতিদ্বন্দ্বিতা, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। প্রায় তিন বছর ধরে ২০০টিরও বেশি দেশ পরস্পরের সঙ্গে ৮৫৩টি ম্যাচ খেলে ১১ জুন থেকে শুরু দক্ষিণ আফ্রিকার মূল মঞ্চে দাঁড়ানোর টিকিট মিলেছে ৩১টি দেশের। ব্যতিক্রম দক্ষিণ আফ্রিকা।
আয়োজনের সুবাদে তাদের হাতে টিকিট উঠেছে সরাসরি। তাই দক্ষিণ আফ্রিকাকে বাদ রাখলে ৩২ দলের লড়াইয়ের মঞ্চে বিশ্বসেরা ৩১টি দলকেই পাচ্ছেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকাই বেশি পরিষ্কার করে বলছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা কতটা তীব্র মাত্রার। এই প্রথম কোনো দেশ আয়োজক হলো যাদের ফিফা র্যাঙ্কিং পঞ্চাশের নিচে। বলাই বাহুল্য, ফিফার মহাদেশীয় নীতি ছাড়া আফ্রিকার কপালে দক্ষিণ আফ্রিকার ভাগ্যে বিশ্বকাপ জুটত না। নিন্দুকেরা বলে, ফিফার সর্বোচ্চ পদটা আরেকটা মেয়াদের জন্য নিশ্চিত করতেই সেপ ব্ল্যাটার আফ্রিকার ভোটগুলো নিশ্চিত করলেন এই বিশ্বকাপ উপহার দিয়ে।
সে যে যা-ই বলুন, একটা বিশ্বকাপের আয়োজনভার পেতে আফ্রিকার এত সুদীর্ঘ অপেক্ষা করাটাও তো ব্যাখ্যার অতীত। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য এটি লজ্জার হয়ে যাচ্ছে ইতিহাসের সবচেয়ে কম ফিফা র্যাঙ্কিং নিয়ে বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়া।
এবার তাহলে আরেকটি ইতিহাসও রচিত হতে যাচ্ছে, প্রথম রাউন্ডেই বাদ পড়ছে আয়োজক দেশ! না, দক্ষিণ আফ্রিকা প্রার্থনায় বসে গেছে, ইতিহাসের পাতায় লজ্জার চকখড়িতে নাম কিছুতেই লেখানো যাবে না। তাই এর আগে যিনি চারটি ভিন্ন দেশকে বিশ্বকাপে নিয়ে গেছেন, ব্রাজিলকে এনে দিয়েছেন চতুর্থ বিশ্বকাপ শিরোপা, সেই ব্রাজিলিয়ান কার্লোস আলবার্তো পাহেইরাকে কোচ করে এনেছে স্বাগতিক দেশ। দ্বিতীয় দফা এসে কাজ করছেন তিনি। আয়োজক হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার নাম ঘোষিত হওয়ার পরপরই এসেছিলেন এক দফা। পারিবারিক কারণে দেশে ফিরে গিয়েছিলেন মাঝখানে। আবার তাঁকেই ফিরে এসে হাড়িকাঠের নিচে পেতে দিতে হয়েছে মাথা।
হাড়িকাঠ কেন? দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ তো থাকবেন নির্ভার, সদানন্দ। ৩২ দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন র্যাঙ্কিংয়ের দেশটিকে নিয়ে কেউ তো স্বপ্ন দেখে না। অংশগ্রহণের ‘ব্যারন পিয়েরে দ্য কুবার্তিনীয় মহান নীতি’ই তো গলার মালা হওয়া উচিত তাদের। বাস্তব ক্ষেত্রে মোটেই তা নয়। পাহেইরা রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে লোকেরা কাছে এসে আবদার জানিয়ে যাচ্ছে, ‘কোচ, বিশ্বকাপটা আমাদের এনে দিতে হবে।’
নেলসন ম্যান্ডেলার কথাই ধরুন। বিশ্বভ্রমণ শেষে ১০ মে ৬.১৭৫ কেজি ওজনের সোনার ট্রফিটা প্রথম নিয়ে যাওয়া হলো নোবেল শান্তি বিজয়ী দক্ষিণ আফ্রিকার মহান নেতার কাছে। নির্জন ঘরটায় মুখোমুখি ম্যান্ডেলা ও ফিফা মহাসচিব জেরোম ভালক। মাঝখানে বিশ্বের সবচেয়ে প্রার্থিত সোনালি ট্রফিটা। সেটির দিকে অপলক তাকিয়ে নেতা উদাস হয়ে গেলেন। বললেন, এই ট্রফিটা তাঁদের চাই। দক্ষিণ আফ্রিকার বড় দরকার ট্রফিটা। আমজনতার কথা না-হয় বাদই দেওয়া গেল, দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লোকটিই তো বিশ্বকাপ জিততে চাইছেন!
শান্তিতে আরেক নোবেলজয়ী দক্ষিণ আফ্রিকান ডেসমন্ড টুটু আশাবাদী, দক্ষিণ আফ্রিকা শুধু আয়োজনের অধিকার পাওয়ার লড়াইয়েই বিজয়ী হয়ে বসে থাকবে না, এই কাপটিও জিতবে। বুঝলেন তো, বিশ্বকাপ ফুটবল কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার বীজ বুনে দেয় মনের মধ্যে! এখানে একজন নোবেলজয়ী আর সাধারণ মানুষের মধ্যে তফাত নেই। এখানে আকবর বাদশার সঙ্গে একজন হরিপদ কেরানি মিলেমিশে একাকার হয়ে যান। জিগীষাই এটির একমাত্র আকাঙ্ক্ষা। অংশগ্রহণের আত্মতৃপ্তি এই পৃথিবীতে অচল।
বাস্তবে দক্ষিণ আফ্রিকার শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা আর মঙ্গলগ্রহে ১১ জুলাই, ২০১০ তারিখে প্রাণের অস্তিত্ব আবিষ্কার হওয়া মনে হয় সমান কথা। তাদের পক্ষে বাজির দর ১০০/১। মানে এক টাকা বাজি ধরলে পাওয়া যাবে ১০০ টাকা। দুই সাবেক চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে ও ফ্রান্সের সঙ্গে তারা পড়েছে ‘এ’ গ্রুপে। বাকি প্রতিপক্ষ মেক্সিকো বিশ্ব ফুটবলের মহীরুহ নয়, কিন্তু বড় শক্ত দল, এবার নিয়ে যারা বিশ্বকাপে যাচ্ছে ১৪তম বারের মতো।
তিন গ্রুপ সঙ্গীর দিকে তাকিয়েই আপনি বলে দিতে পারেন, দক্ষিণ আফ্রিকা পত্রপাঠ প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিচ্ছে। দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার ওপর বাজি ধরতে গেলেই অনেক স্বপ্নচারী হতে হয়। তার ওপর চ্যাম্পিয়ন! দক্ষিণ আফ্রিকাকে আপাতত বিশ্বকাপ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মূর্তিমান বেমানান মনে হচ্ছে। হ্যাঁ, নেলসন ম্যান্ডেলা, ডেসমন্ড টুটু বা পাহেইরার কাছে আবদার জানানো সেই সব মানুষ ৩০ দিনের প্রতিযোগিতায় লম্বা সময় ধরে স্বপ্ন আঁকতে পারেন কোনো একজন বায়রন মরেনোর দেখা পেলে।
বায়রন মরেনোকে চিনলেন না? সেই যে ইকুয়েডরের আইনজীবী ভদ্রলোক, যিনি বাঁশি হাতে দেজনের মাঠে ২০০২ বিশ্বকাপে ইতালির স্বপ্ন খুন করেছিলেন। ফ্রান্সেসকো টট্টির গোলটা কীভাবে বাতিল করলেন ওই রেফারি, আজও ভেবে পাই না। আট বছর আগে দেজন স্টেডিয়ামের মিডিয়া ট্রিবিউনে বসে দক্ষিণ কোরিয়ার অপ্রত্যাশিত কোয়ার্টার ফাইনাল জয়ের উল্লাস আর ইতালির পরাজয়ের বেদনার সাক্ষী হয়েছিলাম। একটা অঙ্ক সেদিন মেলাতে পারিনি, আজও পারি না। স্বাগতিক দেশের জয়ের সঙ্গে টুর্নামেন্টের ঝলকানির একটা সম্পর্ক না থেকে পারেই না। আর গ্যালারিতে বেশি বেশি দর্শক টানার সমীকরণটা সহজ। স্বাগতিক দলকে যতটা পারো টুর্নামেন্টে ধরে রাখো। প্রয়োজনে একটা ফেবারিটের গর্দান দিয়ে দাও। অবশ্য যাদের বলে আগুন রাঙা ফেবারিট তাদের সুরক্ষা দাও। এমন সমীকরণ মেলাতেই এক একজন দেবদূতের মতো বায়রন মরেনোর আবির্ভাব ঘটে।
এবার কে হবেন বায়রন মরেনো? কোন ফেবারিট দল হবে ইতালির অনুসারী? আফ্রিকার প্রথম বিশ্বকাপে কোরিয়া-জাপানের মতো সমীকরণ এসেও যেতে পারে! চারদিকের নেতিবাচক খবরে বিদেশি ফুটবল পর্যটকেরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। স্বতঃস্ফূর্ত সাম্বা দর্শকের আনাগোনা না হলে সেটা আবার বিশ্বকাপ হলো নাকি! তাই ফিফা সভাপতি সেপ ব্ল্যাটার, আর মহাসচিব জেরোম ভালকে একটি রেকর্ড বাজিয়েই যাচ্ছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ হবে সবচেয়ে নিরাপদ! যেন আগের সব বিশ্বকাপ অনিরাপদ পৃথিবীর কোনো দূরতর স্মৃতি হয়ে ছিল। চারদিক থেকে যা আভাস মিলছে, বিশ্বকাপের গ্যালারি ভরাতে হলে দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষই বেশি বেশি ডেকে আনতে হবে। তাদের হাতে তুলে দিতে তীব্র গগনভেদী আওয়াজ তোলা প্লাস্টিকের বাঁশি, ভুভুজেলা যার নাম। ভুভুজেলার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে যদি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিপক্ষ দলগুলো পা হড়কায়। অতি পেশাদার ফুটবলের এই বিশ্ব-সংসারে একটা ‘শব্দভূত’ শক্তিশালী কোনো দলকে হটিয়ে দেবে, এটা ভাবতেও কেমন লাগে! তাহলে? দরকার অন্য কিছু। ফিফা নিশ্চয়ই সমীকরণ মেলাতে বসে গেছে।
তবে যতই সমীকরণ মেলান, বিশ্বকাপ হয়তো চেনা বিজয়ীদের গলাতেই বরমাল্য দেবে। এগিয়ে সেই ব্রাজিল। যারা নিজেদের মহাদেশের বাইরেও ট্রফি জয়ের রাস্তাটা সবচেয়ে ভালো চেনে। নিজেদের মহাদেশের বাইরে প্রথম ফিফা বিশ্বকাপ জিতেছিল কারা? ব্রাজিল (১৯৫৮)। এশিয়ার প্রথম বিশ্বকাপ জিতেছে কারা? ব্রাজিল (২০০২)। এবারও তো মেলানো যায়, আফ্রিকার প্রথম বিশ্বকাপ জিতবে কারা? উত্তরটা আপনি নিজেই বসিয়ে নিতে পারেন। নিজেদের মহাদেশের বাইরে যারা আগে জিতে দেখিয়েছে তারাই জিতবে।
তবে উত্তরটা এবার অত সহজ না-ও হতে পারে। ঘটতে পারে কোনো দেশের ‘বিশ্বকাপ শাপমুক্তি’। অষ্টম কোনো দেশের নামে শিরোপাটা বিশ্বকাপ দেবতা লিখে রেখেছে কি না কে বলতে পারে! মেসি-ম্যারাডোনা রসায়ন আর্জেন্টিনাকে ২৪ বছর পর তৃতীয় শিরোপা এনে দিতেও পারে। ইতালিকে নিয়ে মোটেও শোরগোল নেই। এটাই তাদের সুবিধা। একটা বুড়ো দল নিয়ে পূর্বসূরি ভিত্তোরিও পোজ্জোর মতো টানা দ্বিতীয় শিরোপা লিপ্পি তুলে আনতেও পারেন!
ফুটবলের বিশ্বজনীন চেহারা বিশ্বকাপের জাদুটাকে চুরি করে নিয়ে গেছে অনেক আগেই। এখন একজন ১৭ বছরের পেলেকে মাটি ফুঁড়ে উদয় হতে দেখবেন না, যিনি ১৯৫৮ সালে সুইডেন বিশ্বকাপে খেলতে এসেই শিরোপা জিতিয়েছিলেন ব্রাজিলকে। স্যাটেলাইট টেলিভিশন তারকাদের ‘ড্রয়িং রুমে’র সম্পদ বানিয়ে ফেলেছে। এখন একজন মেসি, রোনালদো বা রুনিরা হঠাৎ করেই বিশ্বকাপের তারকা হয়ে যান না। অনেক আগেই তাঁরা তারকা। বিশ্বকাপ তাদের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরার মঞ্চ মাত্র। মানুষ আসলে ওই শ্রেষ্ঠত্বের আকর্ষণেই ছুটছে। কে সেরা, মেসি না রোনালদো? রোনালদো না রুনি? ব্রাজিলের ষষ্ঠ শিরোপা না ইতালির পঞ্চম? জার্মানির চতুর্থ না আর্জেন্টিনার তৃতীয়? স্পেনের প্রথম না নেদারল্যান্ডের প্রথম? এ রকম করেই মানুষ তার আগ্রহের তাসগুলোকে সাজিয়ে নেয়। একটা কিছু নিয়ে উল্লাস তো করতে হবে! স্বভাবতই সাফল্যপিয়াসী মানুষ ব্যক্তিগত ব্যর্থতা বা রাষ্ট্রীয় হতাশা ভুলতে চায় অন্য সাফল্যের ছবি এঁকে। ফুটবল সেখানে সবচেয়ে বড় ক্যানভাস। তাই নোবেল বিজয়ী নেলসন ম্যান্ডেলা বিশ্বকাপ আয়োজনের মধ্যেই সাফল্য খুঁজে বেড়ান না। তিনি ওই সুন্দর কাপটা হাতে নিতে চান। তবে যেই জিতুক দক্ষিণ আফ্রিকার হাতে ওই কাপ উঠবে না। বিশ্বকাপ অনেক বড়, কিন্তু তার রহস্যের ঘোমটা এত বড় নয়।
একেকটি সেকেন্ডকে এখন মনে হচ্ছে একটি দীর্ঘ দিন কিংবা রাতের মতো, একটি ঘণ্টাকে দীর্ঘ এক যুগ। দলগুলো চূড়ান্ত লড়াইয়ের মঞ্চে এসে উপস্থিত। আকাশে-বাতাসে মাদল বাজছে। মহাসিন্ধুর ওপার থেকে যেন ভেসে আসছে অন্য ভুবনের আনন্দ। বাংলাদেশের আকাশে উঠে গেছে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের পতাকা। ছোট, মাঝারি কিংবা পেল্লায় আকারের। শরীর আর ধরে রাখতে পারছে না উত্তেজনার তরঙ্গ। কখন আসবে সেই মুহূর্ত, যখন সত্যি সত্যিই মাঠে নামবে ধরনির সবচেয়ে বড় ফুটবল উত্সব।
মূল রং ফুটবল, সেই রং থেকে ছড়িয়ে পড়ে আলোর বর্ণালি। ফুটবল উত্সবই তো। এখানেই মনে হয় একটা সাধারণ ভুল আমরা করে ফেলি। এটা জগতের সেরা ক্রীড়াযজ্ঞও বটে। পরিসংখ্যান বলছে, এই ক্রীড়াযজ্ঞের দিকে এবার সরাসরি মাঠে গিয়ে কিংবা টেলিভিশনের পর্দা দিয়ে চোখ রাখবে পুরো পৃথিবীর প্রায় ৩০০ কোটি মানুষ। তার মানে প্রায় ৬০০ কোটি চোখ। বিশ্বকাপের বিশালতা বোঝাতে আর কী চাই! না, বিশালতার সূচক আরও আছে। যদি বলেন, আয়োজক দেশের অর্থনীতির মানদণ্ডেও সেটি মাপা যায়। সেটি বছর শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার জিডিপির উল্লম্ফন আপনাকে পরিষ্কার করে দেবে। আর খেলার মাঠে যা দৃশ্যমান হবে তা প্রতিযোগিতা। প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ক্ষুরধার প্রতিদ্বন্দ্বিতা, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। প্রায় তিন বছর ধরে ২০০টিরও বেশি দেশ পরস্পরের সঙ্গে ৮৫৩টি ম্যাচ খেলে ১১ জুন থেকে শুরু দক্ষিণ আফ্রিকার মূল মঞ্চে দাঁড়ানোর টিকিট মিলেছে ৩১টি দেশের। ব্যতিক্রম দক্ষিণ আফ্রিকা।
আয়োজনের সুবাদে তাদের হাতে টিকিট উঠেছে সরাসরি। তাই দক্ষিণ আফ্রিকাকে বাদ রাখলে ৩২ দলের লড়াইয়ের মঞ্চে বিশ্বসেরা ৩১টি দলকেই পাচ্ছেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকাই বেশি পরিষ্কার করে বলছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা কতটা তীব্র মাত্রার। এই প্রথম কোনো দেশ আয়োজক হলো যাদের ফিফা র্যাঙ্কিং পঞ্চাশের নিচে। বলাই বাহুল্য, ফিফার মহাদেশীয় নীতি ছাড়া আফ্রিকার কপালে দক্ষিণ আফ্রিকার ভাগ্যে বিশ্বকাপ জুটত না। নিন্দুকেরা বলে, ফিফার সর্বোচ্চ পদটা আরেকটা মেয়াদের জন্য নিশ্চিত করতেই সেপ ব্ল্যাটার আফ্রিকার ভোটগুলো নিশ্চিত করলেন এই বিশ্বকাপ উপহার দিয়ে।
সে যে যা-ই বলুন, একটা বিশ্বকাপের আয়োজনভার পেতে আফ্রিকার এত সুদীর্ঘ অপেক্ষা করাটাও তো ব্যাখ্যার অতীত। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য এটি লজ্জার হয়ে যাচ্ছে ইতিহাসের সবচেয়ে কম ফিফা র্যাঙ্কিং নিয়ে বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়া।
এবার তাহলে আরেকটি ইতিহাসও রচিত হতে যাচ্ছে, প্রথম রাউন্ডেই বাদ পড়ছে আয়োজক দেশ! না, দক্ষিণ আফ্রিকা প্রার্থনায় বসে গেছে, ইতিহাসের পাতায় লজ্জার চকখড়িতে নাম কিছুতেই লেখানো যাবে না। তাই এর আগে যিনি চারটি ভিন্ন দেশকে বিশ্বকাপে নিয়ে গেছেন, ব্রাজিলকে এনে দিয়েছেন চতুর্থ বিশ্বকাপ শিরোপা, সেই ব্রাজিলিয়ান কার্লোস আলবার্তো পাহেইরাকে কোচ করে এনেছে স্বাগতিক দেশ। দ্বিতীয় দফা এসে কাজ করছেন তিনি। আয়োজক হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার নাম ঘোষিত হওয়ার পরপরই এসেছিলেন এক দফা। পারিবারিক কারণে দেশে ফিরে গিয়েছিলেন মাঝখানে। আবার তাঁকেই ফিরে এসে হাড়িকাঠের নিচে পেতে দিতে হয়েছে মাথা।
হাড়িকাঠ কেন? দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ তো থাকবেন নির্ভার, সদানন্দ। ৩২ দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন র্যাঙ্কিংয়ের দেশটিকে নিয়ে কেউ তো স্বপ্ন দেখে না। অংশগ্রহণের ‘ব্যারন পিয়েরে দ্য কুবার্তিনীয় মহান নীতি’ই তো গলার মালা হওয়া উচিত তাদের। বাস্তব ক্ষেত্রে মোটেই তা নয়। পাহেইরা রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে লোকেরা কাছে এসে আবদার জানিয়ে যাচ্ছে, ‘কোচ, বিশ্বকাপটা আমাদের এনে দিতে হবে।’
নেলসন ম্যান্ডেলার কথাই ধরুন। বিশ্বভ্রমণ শেষে ১০ মে ৬.১৭৫ কেজি ওজনের সোনার ট্রফিটা প্রথম নিয়ে যাওয়া হলো নোবেল শান্তি বিজয়ী দক্ষিণ আফ্রিকার মহান নেতার কাছে। নির্জন ঘরটায় মুখোমুখি ম্যান্ডেলা ও ফিফা মহাসচিব জেরোম ভালক। মাঝখানে বিশ্বের সবচেয়ে প্রার্থিত সোনালি ট্রফিটা। সেটির দিকে অপলক তাকিয়ে নেতা উদাস হয়ে গেলেন। বললেন, এই ট্রফিটা তাঁদের চাই। দক্ষিণ আফ্রিকার বড় দরকার ট্রফিটা। আমজনতার কথা না-হয় বাদই দেওয়া গেল, দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লোকটিই তো বিশ্বকাপ জিততে চাইছেন!
শান্তিতে আরেক নোবেলজয়ী দক্ষিণ আফ্রিকান ডেসমন্ড টুটু আশাবাদী, দক্ষিণ আফ্রিকা শুধু আয়োজনের অধিকার পাওয়ার লড়াইয়েই বিজয়ী হয়ে বসে থাকবে না, এই কাপটিও জিতবে। বুঝলেন তো, বিশ্বকাপ ফুটবল কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার বীজ বুনে দেয় মনের মধ্যে! এখানে একজন নোবেলজয়ী আর সাধারণ মানুষের মধ্যে তফাত নেই। এখানে আকবর বাদশার সঙ্গে একজন হরিপদ কেরানি মিলেমিশে একাকার হয়ে যান। জিগীষাই এটির একমাত্র আকাঙ্ক্ষা। অংশগ্রহণের আত্মতৃপ্তি এই পৃথিবীতে অচল।
বাস্তবে দক্ষিণ আফ্রিকার শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা আর মঙ্গলগ্রহে ১১ জুলাই, ২০১০ তারিখে প্রাণের অস্তিত্ব আবিষ্কার হওয়া মনে হয় সমান কথা। তাদের পক্ষে বাজির দর ১০০/১। মানে এক টাকা বাজি ধরলে পাওয়া যাবে ১০০ টাকা। দুই সাবেক চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে ও ফ্রান্সের সঙ্গে তারা পড়েছে ‘এ’ গ্রুপে। বাকি প্রতিপক্ষ মেক্সিকো বিশ্ব ফুটবলের মহীরুহ নয়, কিন্তু বড় শক্ত দল, এবার নিয়ে যারা বিশ্বকাপে যাচ্ছে ১৪তম বারের মতো।
তিন গ্রুপ সঙ্গীর দিকে তাকিয়েই আপনি বলে দিতে পারেন, দক্ষিণ আফ্রিকা পত্রপাঠ প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিচ্ছে। দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার ওপর বাজি ধরতে গেলেই অনেক স্বপ্নচারী হতে হয়। তার ওপর চ্যাম্পিয়ন! দক্ষিণ আফ্রিকাকে আপাতত বিশ্বকাপ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মূর্তিমান বেমানান মনে হচ্ছে। হ্যাঁ, নেলসন ম্যান্ডেলা, ডেসমন্ড টুটু বা পাহেইরার কাছে আবদার জানানো সেই সব মানুষ ৩০ দিনের প্রতিযোগিতায় লম্বা সময় ধরে স্বপ্ন আঁকতে পারেন কোনো একজন বায়রন মরেনোর দেখা পেলে।
বায়রন মরেনোকে চিনলেন না? সেই যে ইকুয়েডরের আইনজীবী ভদ্রলোক, যিনি বাঁশি হাতে দেজনের মাঠে ২০০২ বিশ্বকাপে ইতালির স্বপ্ন খুন করেছিলেন। ফ্রান্সেসকো টট্টির গোলটা কীভাবে বাতিল করলেন ওই রেফারি, আজও ভেবে পাই না। আট বছর আগে দেজন স্টেডিয়ামের মিডিয়া ট্রিবিউনে বসে দক্ষিণ কোরিয়ার অপ্রত্যাশিত কোয়ার্টার ফাইনাল জয়ের উল্লাস আর ইতালির পরাজয়ের বেদনার সাক্ষী হয়েছিলাম। একটা অঙ্ক সেদিন মেলাতে পারিনি, আজও পারি না। স্বাগতিক দেশের জয়ের সঙ্গে টুর্নামেন্টের ঝলকানির একটা সম্পর্ক না থেকে পারেই না। আর গ্যালারিতে বেশি বেশি দর্শক টানার সমীকরণটা সহজ। স্বাগতিক দলকে যতটা পারো টুর্নামেন্টে ধরে রাখো। প্রয়োজনে একটা ফেবারিটের গর্দান দিয়ে দাও। অবশ্য যাদের বলে আগুন রাঙা ফেবারিট তাদের সুরক্ষা দাও। এমন সমীকরণ মেলাতেই এক একজন দেবদূতের মতো বায়রন মরেনোর আবির্ভাব ঘটে।
এবার কে হবেন বায়রন মরেনো? কোন ফেবারিট দল হবে ইতালির অনুসারী? আফ্রিকার প্রথম বিশ্বকাপে কোরিয়া-জাপানের মতো সমীকরণ এসেও যেতে পারে! চারদিকের নেতিবাচক খবরে বিদেশি ফুটবল পর্যটকেরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। স্বতঃস্ফূর্ত সাম্বা দর্শকের আনাগোনা না হলে সেটা আবার বিশ্বকাপ হলো নাকি! তাই ফিফা সভাপতি সেপ ব্ল্যাটার, আর মহাসচিব জেরোম ভালকে একটি রেকর্ড বাজিয়েই যাচ্ছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ হবে সবচেয়ে নিরাপদ! যেন আগের সব বিশ্বকাপ অনিরাপদ পৃথিবীর কোনো দূরতর স্মৃতি হয়ে ছিল। চারদিক থেকে যা আভাস মিলছে, বিশ্বকাপের গ্যালারি ভরাতে হলে দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষই বেশি বেশি ডেকে আনতে হবে। তাদের হাতে তুলে দিতে তীব্র গগনভেদী আওয়াজ তোলা প্লাস্টিকের বাঁশি, ভুভুজেলা যার নাম। ভুভুজেলার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে যদি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিপক্ষ দলগুলো পা হড়কায়। অতি পেশাদার ফুটবলের এই বিশ্ব-সংসারে একটা ‘শব্দভূত’ শক্তিশালী কোনো দলকে হটিয়ে দেবে, এটা ভাবতেও কেমন লাগে! তাহলে? দরকার অন্য কিছু। ফিফা নিশ্চয়ই সমীকরণ মেলাতে বসে গেছে।
তবে যতই সমীকরণ মেলান, বিশ্বকাপ হয়তো চেনা বিজয়ীদের গলাতেই বরমাল্য দেবে। এগিয়ে সেই ব্রাজিল। যারা নিজেদের মহাদেশের বাইরেও ট্রফি জয়ের রাস্তাটা সবচেয়ে ভালো চেনে। নিজেদের মহাদেশের বাইরে প্রথম ফিফা বিশ্বকাপ জিতেছিল কারা? ব্রাজিল (১৯৫৮)। এশিয়ার প্রথম বিশ্বকাপ জিতেছে কারা? ব্রাজিল (২০০২)। এবারও তো মেলানো যায়, আফ্রিকার প্রথম বিশ্বকাপ জিতবে কারা? উত্তরটা আপনি নিজেই বসিয়ে নিতে পারেন। নিজেদের মহাদেশের বাইরে যারা আগে জিতে দেখিয়েছে তারাই জিতবে।
তবে উত্তরটা এবার অত সহজ না-ও হতে পারে। ঘটতে পারে কোনো দেশের ‘বিশ্বকাপ শাপমুক্তি’। অষ্টম কোনো দেশের নামে শিরোপাটা বিশ্বকাপ দেবতা লিখে রেখেছে কি না কে বলতে পারে! মেসি-ম্যারাডোনা রসায়ন আর্জেন্টিনাকে ২৪ বছর পর তৃতীয় শিরোপা এনে দিতেও পারে। ইতালিকে নিয়ে মোটেও শোরগোল নেই। এটাই তাদের সুবিধা। একটা বুড়ো দল নিয়ে পূর্বসূরি ভিত্তোরিও পোজ্জোর মতো টানা দ্বিতীয় শিরোপা লিপ্পি তুলে আনতেও পারেন!
ফুটবলের বিশ্বজনীন চেহারা বিশ্বকাপের জাদুটাকে চুরি করে নিয়ে গেছে অনেক আগেই। এখন একজন ১৭ বছরের পেলেকে মাটি ফুঁড়ে উদয় হতে দেখবেন না, যিনি ১৯৫৮ সালে সুইডেন বিশ্বকাপে খেলতে এসেই শিরোপা জিতিয়েছিলেন ব্রাজিলকে। স্যাটেলাইট টেলিভিশন তারকাদের ‘ড্রয়িং রুমে’র সম্পদ বানিয়ে ফেলেছে। এখন একজন মেসি, রোনালদো বা রুনিরা হঠাৎ করেই বিশ্বকাপের তারকা হয়ে যান না। অনেক আগেই তাঁরা তারকা। বিশ্বকাপ তাদের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরার মঞ্চ মাত্র। মানুষ আসলে ওই শ্রেষ্ঠত্বের আকর্ষণেই ছুটছে। কে সেরা, মেসি না রোনালদো? রোনালদো না রুনি? ব্রাজিলের ষষ্ঠ শিরোপা না ইতালির পঞ্চম? জার্মানির চতুর্থ না আর্জেন্টিনার তৃতীয়? স্পেনের প্রথম না নেদারল্যান্ডের প্রথম? এ রকম করেই মানুষ তার আগ্রহের তাসগুলোকে সাজিয়ে নেয়। একটা কিছু নিয়ে উল্লাস তো করতে হবে! স্বভাবতই সাফল্যপিয়াসী মানুষ ব্যক্তিগত ব্যর্থতা বা রাষ্ট্রীয় হতাশা ভুলতে চায় অন্য সাফল্যের ছবি এঁকে। ফুটবল সেখানে সবচেয়ে বড় ক্যানভাস। তাই নোবেল বিজয়ী নেলসন ম্যান্ডেলা বিশ্বকাপ আয়োজনের মধ্যেই সাফল্য খুঁজে বেড়ান না। তিনি ওই সুন্দর কাপটা হাতে নিতে চান। তবে যেই জিতুক দক্ষিণ আফ্রিকার হাতে ওই কাপ উঠবে না। বিশ্বকাপ অনেক বড়, কিন্তু তার রহস্যের ঘোমটা এত বড় নয়।
ব্রাজিল-স্পেন ফাইনাল?
ব্রাজিল-স্পেন ফাইনাল?
আখতার হোসেন খান তারিখ: ১১-০৬-২০১০
বিশ্বকাপ হাতে পেলে-বেকেনবাওয়ার-ম্যারাডোনা-জিদান। এবার কার হাতে ট্রফি?
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এই বিশেষ সংখ্যাটি যখন আপনার হাতে পৌঁছেছে, তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আফ্রিকা মহাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। আজকের দিনে বিশ্বকাপ আক্ষরিক অর্থেই ‘গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ’। কোটি কোটি টাকার আয়োজন, অপরিসীম আনন্দ আর কোটি কোটি টাকার ব্যবসা।
একসময় এই বিশ্বকাপের নিমন্ত্রণ ফিরিয়ে দেওয়ার মতো সাহস দেখাত দলগুলো। আদিতে ১৬ দলের বিশ্বজোড়া প্রতিযোগিতা আজ পরিণত হয়েছে ৩২ দলের বর্ধিত মনকাড়া, হূদয়হারা এমন এক যুবযুদ্ধে, যা থেকে কোনোক্রমেই আর দূরে থাকা সম্ভব নয়।
সারা দুনিয়ায় খেলোয়াড় সরবরাহকারী আফ্রিকা ২০০৬-এর বিশ্বকাপ অনুষ্ঠানের দায়িত্ব পেতে পেতে পায়নি। ২০১০ তাই কালো মহাদেশের স্বপ্নপূরণের বছর। সেই স্বপ্নের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তাদের সেরা তারকা দ্রগবা-এসিয়েন-ইতোদের বিশ্বকাপ-জয়ের স্বপ্ন। এই স্বপ্ন আফ্রিকা মহাদেশ বহন করবে আগামী এক মাস।
দক্ষিণ আফ্রিকার নয়টি শহরের দশটি স্টেডিয়ামে ৩১ দিনব্যাপী এই প্রতিযোগিতার ৬৪টি খেলা নির্ধারণ করবে পরের চার বছরের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। আফ্রিকা মহাদেশে বিশ্বকাপ এই প্রথম, এই নিয়ে ‘কালো’ মহাদেশে এক দারুণ উদ্দীপনা। ‘জনগণের খেলা’ বা ‘সুন্দর খেলা’ নামধারী ফুটবলের নবজাগ্রত শক্তি আফ্রিকায় তাই আয়োজনেই নয়, জয়ের স্বপ্নেও সবাই বিভোর। দক্ষিণ আফ্রিকা, আইভরিকোস্ট, ঘানা বা নাইজেরিয়া যেকোনো অঘটন ঘটাতে সক্ষম।
ইউরোপিয়ান লিগের ক্লাবগুলোতেই শুধু নয়, জাতীয় দলগুলোতেও ক্রমাগত বাড়ছে আফ্রিকা থেকে আগত অভিবাসী খেলোয়াড়ের সংখ্যা। গায়ে-গতরে বা দক্ষতায় তাঁরা স্থানীয়দের সঙ্গে সমানভাবে পাল্লা দেন। আইভরিকোস্টের দিদিয়ের দ্রগবার মতো কজন আছেন পুরো ইউরোপে? ঘানার দুঃখ, দলীয় প্রশিক্ষক-বর্ণিত ‘অন্য গ্রহের খেলোয়াড়’ মাইকেল এসিয়েনকে ছাড়াই তারা আসছে বিশ্বকাপে।
তথাপি ফর্মের হিসাবে চিরন্তন ব্রাজিল এখনো এগিয়ে ফিফা বা বাজিকরদের খাতায়। ২০০২-এর রোনালদো, রিভালদো বা রোনালদিনহোর মতো কেউ নেই এই দলে। কাকার শারীরিক অবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ, লুইস ফ্যাবিয়ানো আর নিলমার ২০০৮ সালে কনফেডারেশনস কাপে অনেক গোল করার পরও মেসি-ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, তোরেস বা দ্রগবার মতো নন। তবু ব্রাজিলের আছে শক্ত রক্ষণভাগ; অত্যন্ত উঁচু মানের গোলরক্ষক আর আছে পাঁচবার বিশ্বকাপ জেতা এবং সবগুলো বিশ্বকাপে খেলার অনন্য ঐতিহ্য।
সম্ভাব্য বিজয়ীদের খাতায় প্রথম কাতারে আরও আছে ২০০৮ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়ন স্পেন। ইনিয়েস্তা, জাভি আর আলোনসোর সমন্বয়ে গড়া মাঝমাঠের সামনে ফরোয়ার্ড হিসেবে তোরেস-ভিয়ার উপস্থিতি যেকোনো রক্ষণভাগের জন্য ত্রাস। আছে ওয়েইন রুনি, রিও ফার্ডিনান্ড, ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের ইংল্যান্ড; শিরোপাধারী ইতালি, নতুন বলে বলীয়ান হল্যান্ড; আর সব সময় যাদের হিসাবের মধ্যে রাখতে হয়, সেই জার্মানি।
লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা তো অবশ্যই আসবে বিবেচনায়। মেসি অনেকেরই বিবেচনায় দুনিয়ার সেরা খেলোয়াড়। অনেকেরই আবার ধারণা, এ মুহূর্তে ছিয়াশির ম্যারাডোনা নন, ১৯৮২-এর ম্যারাডোনার পর্যায়ে আছেন তিনি। আর্জেন্টিনার পক্ষে মেসির এখন পর্যন্ত অর্জন তাঁর বার্সেলোনার অর্জনের ধারে-কাছে যায়নি। তবু সন্দেহ নেই, সারা দুনিয়ার চোখ থাকবে তাঁর দিকে। প্রায় কাছাকাছি বয়সের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো বা ওয়েইন রুনি আর ফার্নান্দো তোরেস কিংবা দিদিয়ের দ্রগবা কোনো বিচারেই কম নন, কিন্তু সবার নজর ওই আর্জেন্টাইনের দিকেই: তাঁকে ধরা হচ্ছে বর্তমান যুগের ম্যারাডোনা ।
ইতিহাসের দিকে তাকানো যাক। গত আঠারোটি কাপ জিতেছে সাতটি দেশ: ব্রাজিল (৫ বার), ইতালি (৪), জার্মানি (৩), উরুগুয়ে (২), আর্জেন্টিনা (২), ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স একবার করে। ১৯৫০ পর্যন্ত চারটি বিশ্বকাপের ভাগাভাগি হয় উরুগুয়ে (প্রথম ও চতুর্থটি) ও ইতালির মধ্যে। ১৯৫৪তে জার্মানি যুক্ত হয় তালিকাতে, ১৯৫৮তে ব্রাজিল, ১৯৬৬তে ইংল্যান্ড, ১৯৭৮-এ আর্জেন্টিনা আর ১৯৯৮-এ ফ্রান্স। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা আর ফ্রান্সের তালিকাভুক্তির বছরটি নিয়ে একটা গাণিতিক সূত্রও বের করা যেতে পারে: দশকের অষ্টম বছরে একটি আরেকটির চেয়ে বিশ বছর পরে পরে।
১৯৯৮ সাল থেকে কায়েম হওয়া সাত দেশের ‘ক্লাব’ এবার আটে উত্তীর্ণ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে: স্পেন স্মরণকালের সেরা দল নিয়ে হাজির হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, আর্সেনাল আর লিভারপুলের তারকাদের পদচারণে মুখর স্পেনের জাতীয় দল। তোরেস, ফ্যাব্রিগাস, ইনিয়েস্তা, ক্যাসিয়াস, আলোনসো, জাভি প্রমুখে সমৃদ্ধ ২০০৮-এর ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন স্পেন এবার বাছাইয়ের অবস্থানে চিরন্তন শীর্ষ বাছাই ব্রাজিলের সমানে সমান। গত ডিসেম্বরে ড্রর দিনই তাই এক স্বাপ্নিক তো লিখেই ফেললেন, ফাইনাল হবে ব্রাজিল ও স্পেনের, আর সে ফাইনাল টাইব্রেকারে গড়াবে। ফুটবলের অপূর্ণ অতি সম্ভাবনার দেশ স্পেন: যে দেশের ফুটবলের মান নির্ধারিত হয় রিয়াল মাদ্রিদ আর বার্সেলোনার মতো ক্লাব দ্বারা, তাদের অনেক আগেই বিশ্বকাপ জেতা উচিত ছিল।
স্পেনের অল্প পেছনেই আছে হল্যান্ড: দুবার বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা ডাচরা সত্তরের দশকের মতো ক্রুইফ, নিসকেন্স, রেপ, আরি হান পর্যায়ের খেলোয়াড় আর ‘টোটাল ফুটবল’ নিয়ে গর্ব করতে না পারলেও বাছাইপর্বে তাদের খেলা ছিল স্পেন আর ইংল্যান্ডের মতোই তুখোড় আর সম্ভাব্য বিজয়ীর মতোই। ইউরোপের সেরা দলগুলোর মতোই ডাচরাও যেকোনো উচ্চতায় উঠতে সক্ষম: ১৯৭৪ সালে তাদের বিশ্বকাপ জেতা যুক্তিসংগত ছিল। কেন পারেনি, তা আজ ইতিহাসের গবেষণার বিষয়, কিন্তু ১৯৭৮ সালেও যে দল নিয়ে ওরা শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছিল, তাই বা কম কিসে। আজকের ডাচ দলে ইন্টার মিলানের স্নাইডার, বায়ার্ন মিউনিখের আরিয়েন রোবেন, লিভারপুলের ডার্ক কিউট, রিয়াল মাদ্রিদের রাফায়েল ফন ডার ভার্ট আর আর্সেনালের ফন পার্সির মতো খেলোয়াড়েরা বিশ্বের যেকোনো দলে জায়গা করে নেওয়ার মতো তারকা।
ইউরোপ থেকে আসা আরেক শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ড। পৃথিবীর অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড রুনির ওপরই ভর করে নেই তারা; জেরার্ড, ল্যাম্পার্ড, টেরির মতো খেলোয়াড়েরাও আছেন ইংল্যান্ড দলে। ‘সি’ গ্রুপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আলজেরিয়া আর স্লোভেনিয়ার সঙ্গে খেলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবে ইংল্যান্ড, সবার তা-ই প্রত্যাশা। ইংল্যান্ডকে অবশ্য ১২ জুন রাস্টেনবার্গের রয়াল বাফোকেং স্টেডিয়ামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাধা পেরোতে হবে। তারা অবশ্যই ১৯৫০ সালে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত চতুর্থ বিশ্বকাপে মার্কিনদের হাতে অপদস্থ হওয়াটাও মনে রাখবে। ইংল্যান্ডের বিজয় এতই অনিবার্য ধরা হচ্ছিল যে যখন পত্রিকা অফিসে প্রথম ওই ১-০ মার্কিন বিজয়ের খবর যায়, অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, ফলাফলটা ইংল্যান্ডের পক্ষে ১০-১ হয়েছে। বেলো হরিজেন্তের ওই আপসেট বিশ্বকাপ-গাথার অংশ হয়ে আছে।
গ্রুপে প্রথম না হতে পারলে ইংল্যান্ডকে ১৬-এর রাউন্ডেই ‘ডি’ গ্রুপের সম্ভাব্য শীর্ষ দল জার্মানির মুখোমুখি হতে হবে। এবং সন্দেহ নেই, সেটা কোনো সুখকর জিনিস নয়।
ইতালিসহ জার্মানি বিশ্বকাপে সচরাচর সম্ভাবনার প্রথম কাতারের দল। জার্মানি ব্রাজিলের মতোই সাতটি ফাইনাল খেলেছে। ইতালি বর্তমানের চ্যাম্পিয়ন। দুটি দেশই ইউরোপের বিভিন্ন লিগে খেলা অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ে ভরা। কে জানত ১৯৮২তে ব্রাজিলকে টপকে ইতালি ফাইনাল খেলবে। তেমন উল্লেখ্য দল ছিল না ১৯৮২, ১৯৮৬ বা ২০০২ সালে, কিন্তু তাই নিয়ে জার্মানি যে ফাইনালে যাবে, তা-ই বা কোন হিসাবে ছিল। একই কথা ইতালিকে নিয়ে। সারা দুনিয়া যখন ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা বা অন্য কাউকে নিয়ে হইচই করে, ইতালি বা জার্মানি সিঁধেল চোরের মতো সন্তর্পণে এসে সেমিফাইনালে বা ফাইনালে ঢোকে কিংবা শিরোপাও জিতে নেয়।
ফুটবলে সাম্প্রতিক কালে এক বিপ্লব ঘটেছে। এটা মূলত ইউরোপ-ভিত্তিক (ক্রিকেটে যা হয়েছে ভারতে)। গত বিশ বছরে ইউরোপের বড় ক্লাবগুলোর চাহিদার প্রয়োজনে সারা দুনিয়া বিশেষত দক্ষিণ, মধ্য ও উত্তর আমেরিকা এবং আফ্রিকা থেকে খেলোয়াড় এসে বোঝাই হচ্ছেন ইউরোপে। অস্ট্রেলিয়াও বাদ নেই এই সরবরাহ-কর্ম থেকে। বিশেষত আফ্রিকার দারিদ্র্য এবং একই সঙ্গে এর যুবশক্তির দৈহিক যোগ্যতা ও ফুটবল-দক্ষতা ঝাঁকে ঝাঁকে আফ্রিকানকে ইউরোপে টেনেছে। অনেকেই অভিবাসী হয়েছেন এবং অভিবাসী না হয়েও অন্যান্য মহাদেশেও তাঁরা খেলছেন। অনেকে কৌশল ও মানের বলে নিজ জাতীয়তা বজায় রেখেই সারা দুনিয়ায় সগর্বে খেলে বেড়াচ্ছেন। দ্রগবা, এসিয়েন, ইতো এঁদেরই অন্যতম। যাঁরা অভিবাসী, তাঁরাও জাতীয় দলে জায়গা করে নিচ্ছেন। জিদানের কথা বাদই গেল; পর্তুগাল বাদে বিশ বছর আগে ইউরোপের কোনো জাতীয় দলে কালো খেলোয়াড় পাওয়া দুষ্কর ছিল। সেই চিত্র আজ অনেক পাল্টে গেছে। টেলিভিশন-বিজ্ঞাপনের টাকার টানে আর বিদেশি বিনিয়োগে ইংল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি আর স্পেন দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ক্লাবগুলোর আখড়া।
এরই একটা ফল হলো এসব দেশ থেকে খুব কম ভালো খেলোয়াড় বাইরে যান। এবারের বিশ্বকাপে স্পেনের ২৩ জনের মধ্যে মাত্র তিনজন বাইরে খেলেন; লিভারপুলের তোরেস ও রেইনা আর আর্সেনালের সেস ফ্যাব্রিগাস। চোখে পড়ার মতো উল্লেখ্য বিষয় হলো, তিনটি দল পুরোপুরি স্বদেশি ক্লাবের খেলোয়াড়ে তৈরি—ইংল্যান্ড, ইতালি আর জার্মানি। পয়লা জুন রাতে ফিফার প্রকাশিত প্রতিটি জাতীয় দলের ২৩ জন খেলোয়াড়ের তালিকায় দেখা যায় এমনকি উত্তর কোরিয়ারও তিনজন খেলোয়াড় (হং ইয়ং-জো, আন ইয়ং-হাক ও জং তা-সে) বিদেশি ক্লাবে (প্রথম জন রাশিয়ায় আর অন্য দুজন জাপানে) খেলেন। ইংল্যান্ড, ইতালি আর জার্মানি সম্ভবত পশ্চিমা দুনিয়ার ফুটবল-বিপ্লবের প্রতীক, তেমনি এর সহজাত জনসংখ্যা-ঘাটতির বোঝা সবচেয়ে বেশি বহন করে চলছে।
আটটি গ্রুপের দলগুলোকে ফিফার সিডিং-ভিত্তি মোটামুটি মাথায় রেখে কাপ-যুদ্ধের একটা আনুমানিক দৃশ্য আঁকা যায় আগামী এক মাসের জন্য। ‘এ’ গ্রুপে দক্ষিণ আফ্রিকা, মেক্সিকো, উরুগুয়ে বা ফ্রান্স ‘জি’ গ্রুপের মতোই, যদিবা একটু কম শক্তিমত্তার, আরেক ‘গ্রুপ অব ডেথ’। দুবার বিশ্বকাপজয়ী উরুগুয়ে ১৯৭০-এর পরে আর সেমিফাইনালেও যায়নি। ফ্রান্স ২০০৬-এর রানার্স-আপ এবং থিয়েরি অঁরির হ্যান্ডবল গোলে চূড়ান্ত পর্বে এলেও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, চেলসি, আর্সেনাল, বায়ার্ন মিউনিখ আর সেরা ফরাসি ক্লাবগুলোর খেলোয়াড় নিয়ে গড়া ফরাসি দলকে যতটা সম্ভাবনা থেকে দূরে ভাবা হয়, কার্যত তা নয়। প্যাট্রিস এভরা, ফ্রাঙ্ক রিবেরি আর নিকোলাস আনেলকা বিশ্বখ্যাত।
দক্ষিণ আফ্রিকা তার পুরো মহাদেশের চ্যালেঞ্জের নেতৃত্ব দেবে (অন্যদের মধ্যে থাকবে ‘জি’ গ্রুপের আইভরিকোস্ট, ‘বি’ গ্রুপের নাইজেরিয়া আর ‘ডি’ গ্রুপের ঘানা)। শেষ মুহূর্তে এসে সর্বোচ্চ গোলদাতা ম্যাকার্থি বাদ পড়েছেন চূড়ান্ত ২৩ থেকে, তবে আছেন স্টিভ পিয়েনার। স্বাগতিক দেশ হওয়ার যে সুবিধা দক্ষিণ আফ্রিকার আছে, বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিলীয় কোচ কার্লোস আলবার্তো পাহেইরার প্রশিক্ষণে তা পিয়েনাররা কতটুকু সামনে নিয়ে যাবেন, তার জন্য অধীর হয়ে আছেন স্বাগতিক দেশের লক্ষ-কোটি সমর্থক।
ধরে নেওয়া যেতে পারে, ১৬-এর রাউন্ডের জন্য ফ্রান্সই থাকবে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে। উরুগুয়ে বা মেক্সিকোর বিপক্ষে তেমন কিছু বলার যেমন নেই, তেমনি পক্ষেও খুব বলার নেই। ডিয়েগো ফোরলান উরুগুয়ের সেরা খেলোয়াড়; অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের পক্ষে এবার তিনি এক সাফল্যময় মৌসুম পেরিয়ে এসেছেন; সে উচ্চতা তিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পক্ষেও পাননি। আরও আছেন ইউরোপীয় ও অন্যান্য লীগের খেলোয়াড়। এর পরও বলা যায়, ফ্রান্স ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে ডিঙিয়ে মেক্সিকো-উরুগুয়ের পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়া দুষ্কর। তা ছাড়া আগের ১৮টি বিশ্বকাপে কোনো দিন স্বাগতিক দেশ প্রথম রাউন্ডেই ছিটকে পড়েনি। পাহেইরা নিশ্চয়ই তাঁর প্রাক্তন রেকর্ডের উল্টোটা অর্জনে উত্সাহী হবেন না। তবে তাঁর এও মনে রাখতে হবে, ১৮টি বিশ্বকাপে মাত্র ছয়টি আয়োজক দেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
‘বি’ গ্রুপে ম্যারাডোনা-মেসির আর্জেন্টিনার সঙ্গে আছে নাইজেরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া আর গ্রিস। এখানে একমাত্র প্রশ্ন শেষ ষোলোর রাউন্ডে আর্জেন্টিনার সঙ্গী কে হবে? দক্ষিণ কোরিয়া আর গ্রিসের প্রতি অসম্মান না করেও বলা যায়, নিজ মহাদেশে নাইজেরিয়া দর্শক সমর্থনে উজ্জীবিত হয়ে সম্ভবত পরের রাউন্ডে যাবে। চেলসির মিকেল নাইজেরিয়ার সেরা খেলোয়াড়। চোটের কারণে তিনি বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়েছেন। তবে আছেন পোর্টসমাউথের কানু, এভারটনের ইয়াকুবু, ইংলিশ ও ফরাসি লিগের বিভিন্ন ক্লাবের সক্ষম ও শক্ত সব তারকা।
গ্রুপ ‘সি’তে আগে উল্লিখিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ইংল্যান্ডের ১৯৫০ সেই বিস্ময়কর ফলাফলের পরে মার্কিনরা অনেক এগিয়েছে। আজ অনেক মার্কিন প্রিমিয়ার লীগসহ ইউরোপীয় বিভিন্ন লীগের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। ইতিমধ্যেই বুকিরা এই খেলাকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া শুরু করেছেন। এর সম্ভাব্য ফল নিয়েও নানা ধরনের জল্পনাকল্পনা শুরু হয়েছে। যেকোনো ফল আসতে পারে এ খেলা থেকে। সম্ভাব্য বিজয়ী ইংল্যান্ডকে সামনে এগোতে হলে এই খেলা ভালোভাবে পার হতে হবে। ল্যানডন ডনোভান (প্রাক্তন এভারটন এবং এখন ডেভিড বেকহামের এলএ গ্যালাক্সি সতীর্থ) এবং ইলিশ, ইতালিয়ান ও জার্মান লিগের বিভিন্ন ক্লাবে ছড়িয়ে থাকা খেলোয়াড়-ভরা মার্কিন দল আগের মতো উপেক্ষণীয় নয় যে এখন খেলায় জিতলে সেই ফলাফল আবার যাচাই হবে, সে অবস্থা নেই। এবং সন্দেহ নেই আলজেরিয়া আর স্লোভেনিয়াকে ডিঙিয়ে ১৬-এর রাউন্ডে ইংল্যান্ডের সঙ্গী হওয়ার সম্ভাবনা তাদেরই বেশি।
গ্রুপ ‘ডি’তে শীর্ষ বাছাই জার্মানির সঙ্গে কে যাবে? সে লড়াইটা জমবে ভালো অস্ট্রেলিয়া, সার্বিয়া আর ঘানার মধ্যে। এ তিন দলের যেকোনো দুটি শক্তিসম্পন্ন ১৬-এর রাউন্ডে যাওয়ার। ঘানা খেলতে আসছে সেরা খেলোয়াড় মাইকেল এসিয়েনকে ছাড়াই। এর পরও ইউরোপের বিভিন্ন লিগ থেকে আগত খেলোয়াড় নিয়ে গড়া ঘানা শারীরিক যোগ্যতায় নাইজেরিয়া, ক্যামেরুন আর আইভরিকোস্টের মতোই উঁচু মানের। অস্ট্রেলিয়া আর সার্বিয়ারও আছে ইউরোপীয় লিগের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন খেলোয়াড়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ভিদিচ সার্বদের সেরা সঞ্চয়। ইন্টার মিলানের স্ট্যানকোভিচ আর ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাবের খেলোয়াড় আছেন সার্বিয়ায়। কাগজে-কলমে গ্রুপের দ্বিতীয় সেরা দল। এমনকি শুভ দিনে জার্মানদের ধরে ফেলার মতো দল সার্বিয়া। অস্ট্রেলিয়ারও আছে ইউরোপের বিভিন্ন লিগের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন খেলোয়াড়। এবং এর পরও ঘানা নিজ মহাদেশের দর্শকদের সমর্থনে অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য খুবই ভয়ংকর প্রতিপক্ষ।
গ্রুপ ‘ই’তে হল্যান্ডের সঙ্গে আছে ডেনমার্ক, জাপান আর ক্যামেরুন। এক প্রতাপান্বিত বাছাইপর্ব শেষ করেন এসেছে হল্যান্ড। শুরুতেই যা বলেছি, তার রেশ ধরে আবার বলছি, ডাচরা গ্রুপ ‘ই’-এর শীর্ষ দল হিসেবে পরের রাউন্ডে গেলে পরবর্তী স্থানের সবচেয়ে বড় দাবিদার ক্যামেরুন। স্যামুয়েল ইতো আর বিভিন্ন ইউরোপীয় ক্লাবের খেলোয়াড় নিয়ে ক্যামেরুন ১৬-এর রাউন্ডের জন্য ডেনমার্ক আর জাপানের ঘাম ঝরাবে। ডেনমার্ক ইউরোপের শক্ত দল। অন্যদিকে ৩০ মে, ২০১০ গা গরমের খেলায় ইংল্যান্ডকে প্রায় রুখে দিয়েছিল জাপান।
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইতালি মজায় আছে ‘এফ’ গ্রুপে প্যারাগুয়ে, নিউজিল্যান্ড ও স্লোভাকিয়াকে নিয়ে। একমাত্র প্যারাগুয়ে বাদে নিউজিল্যান্ড ও স্লোভাকিয়ার কাছ থেকে তাদের বেগ পাওয়ার কথা নয়। ইতালির সমস্যা হলো তারা শুরু করে অত্যন্ত সাদামাটাভাবে। তবে অতীত ইতিহাস যা দেখিয়েছে, একবার ইতালি গ্রুপ পর্যায়ের বাইরে যেতে পারলে তার যাত্রা শেষ হয় প্রায় শেষ পর্যায়ে যেয়ে। অন্য দলগুলোর সমস্যা হবে। এবং ইতালির নিজেরও হবে। যদি কোনোভাবে ইতালি দু-একটা ড্র-এর মধ্য দিয়ে গিয়ে গ্রুপের প্রথম স্থানটা হারায়। পরের রাউন্ডেই দেখা হয়ে যাবে সম্ভবত ‘ই’ গ্রুপজয়ী হল্যান্ডের সঙ্গে এবং তা পেরোলে কোয়ার্টার ফাইনালে ‘জি’ গ্রুপের সম্ভাব্য জয়ী ব্রাজিলের সঙ্গে। এ ধরনের ত্বরিত সাক্ষাতের চিন্তা নেই ফিফার তৈরি সিডিং আর ফরম্যাটে। ধরে নিই ইতালি তার গ্রুপ জিতেছে। সে ক্ষেত্রে তার সাথী হবে কে? খুব সম্ভব ম্যানচেস্টার সিটির রকি সান্তা ক্রুজের দল প্যারাগুয়ে, যদি না নিউজিল্যান্ড ও স্লোভাকিয়া হঠাৎ ঝলসে ওঠে।
‘জি’ গ্রুপকে নাম দেওয়া হয়েছে ‘গ্রুপ অব ডেথ’। শীর্ষ বাছাই ব্রাজিল বাদে এই গ্রুপের অন্য তিন দল উত্তর কোরিয়া, আইভরিকোস্ট আর পর্তুগাল। যদি ধরে নেওয়া হয় এশিয়ার প্রতিনিধি গ্রুপের সবচেয়ে দুর্বল দল, তাহলে দ্বিতীয় স্থানটির জন্য লড়াই ভালোই জমবে আইভরিকোস্ট আর পর্তুগালের মধ্যে। এবং এ ধারণা নিছক অযৌক্তিক নয় যে দিদিয়ের দ্রগবা, সলোমান কালু, কোলো তোরে, ইমানুয়েল এবু (সবাই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের), ইয়াইয়া তোরে (বার্সেলোনা) প্রমুখ নিজ মহাদেশে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো-নানি-পেপে-পাওলো ফেরেরা-রিকার্ডো কারভালহো-ডেকোর পর্তুগালকে ভালোই ধরবে দ্বিতীয় স্থানটির জন্য। এবং এ দ্বৈরথে আইভরিকোস্টের এগিয়ে যাওয়া মোটেই বিস্ময়কর হবে না।
গ্রুপ ‘এইচ’ স্পেনের গ্রুপ। সঙ্গে আছে সুইজারল্যান্ড, হন্ডুরাস আর চিলি। স্পেনের জন্য যেখানে অনেকেই প্রতিযোগিতার শীর্ষস্থানটি নির্ধারণ করে রেখেছে, সেখানে গ্রুপ জেতা তো তাদের জন্য কোনো রকম প্রশ্নই আনবে না। ইনিয়েস্তা, ফ্যাব্রিগাস, আলোনসো আর জাভির সমন্বয়ে গড়া মাঝমাঠের সামনে তোরেস আর ভিয়ার মতো ফরোয়ার্ড থাকলে সেই দলের আর কী চিন্তা থাকতে পারে! স্পেনের সঙ্গী হবে কে? হন্ডুরাসকে বাদ রেখে চিলি-সুইজারল্যান্ডের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব জমবে সন্দেহ নেই। দু দেশেরই ইউরোপের বিভিন্ন লিগে খেলা অভিজ্ঞতার সমাহার। ইউরোপের মাটিতে হলে চোখ বন্ধ করে বলা যেত সুইজারল্যান্ড যাবে পরের রাউন্ডে। নিরপেক্ষ ভেন্যু বলেই বলা যায় না কোন দল পরের পর্যায়ে যাচ্ছে।
কল্পনার জগতে বিভিন্ন কম্বিনেশন আসতে পারে। তা থেকে ১৬-এর রাউন্ডের দলগুলোকে এভাবে সাজানো যেতে পারে—ফ্রান্স বনাম নাইজেরিয়া, ইংল্যান্ড বনাম ঘানা, হল্যান্ড বনাম প্যারাগুয়ে, ব্রাজিল বনাম চিলি—এই চারটি খেলা থেকে এক ফাইনালিস্ট। আর এর বিপরীতে আর্জেন্টিনা বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি বনাম যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি বনাম ক্যামেরুন এবং স্পেন বনাম আইভরিকোস্ট—এই চারটি খেলা থেকে আরেক ফাইনালিস্ট।
কোয়ার্টার ফাইনালের লাইনআপ? যদি আমরা ফিফার চিন্তাই অনুসরণ করি তাহলে ফ্রান্স বনাম ইংল্যান্ড, হল্যান্ড বনাম ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা বনাম জার্মানি এবং ইতালি বনাম স্পেন। সেমিফাইনাল? ইংল্যান্ড বনাম ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা বনাম স্পেন। ফাইনাল ব্রাজিল বনাম স্পেন। জয়ী ব্রাজিল বা স্পেন।
অথবা হয়তো পুরো হিসাবটাই ভুল। হয়তো কোনো আফ্রিকান দল—দক্ষিণ আফ্রিকা বা আইভরিকোস্ট অথবা ক্যামেরুন বা ঘানা—ফাইনাল খেলবে ব্রাজিলের সঙ্গে।
ফুটবল বড় নিষ্ঠুর খেলা। যেভাবে স্বপ্ন দেখা হয়, ঠিক সেভাবে সব চলে না। সেরা দল অনেক সময়ই চ্যাম্পিয়ন হয় না। এ বছর স্পেন বা দুনিয়ার সেরা খেলোয়াড় মেসির ক্ষেত্রে এটা মনে রাখতে হবে। ১৯৩৮ সালে ব্রাজিল সেরা খেলোয়াড় লিওনিডাসকে বসিয়ে রেখে সেমিফাইনালে ইতালিকে রুখতে যায়; তাদের সেই প্রয়াস সফল হয়নি। ১৯৫০ সালে ব্রাজিল আবার আটকা পড়ে। সেরা দল নিয়ে মারাকানা স্টেডিয়ামে নির্ধারণী খেলায় নিজ সমর্থকদের সামনে উরুগুয়ের বিরুদ্ধে এক গোলে এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ১-২ গোলে হার মানে। ১৯৫৪ সালে সম্ভবত সবচেয়ে বড় বিস্ময়ের জন্ম দেয় হাঙ্গেরি ফাইনালে জার্মানদের বিরুদ্ধে কাপ না জিতে (অবশ্য সে খেলায় রেফারির জার্মানপন্থী ভূমিকাও অনেকাংশে ফলাফলের জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়)। ১৯৭৪ সালে সাম্প্রতিক কালের সেরা দল ক্রুইফ-নিসকিন্সের হল্যান্ড ‘টোটাল ফুটবল’ খেলে অল্পের জন্য শিরোপাবঞ্চিত থাকে। ১৯৯০ সালেই কি আর্জেন্টিনার প্রাপ্য ছিল না বিশ্বকাপ? এর উত্তর অবশ্য ভালো দিতে পারবেন ওই খেলার মেক্সিকান রেফারি কোদেসাল। দক্ষিণ আফ্রিকার আবহাওয়া ইউরোপীয় দলগুলোকে সাহায্য করবে, কিন্তু মনে রাখা দরকার ইউরোপীয়রা কোনো দিন নিজ মহাদেশের বাইরে কাপ জেতেনি। আর ব্রাজিলই একমাত্র দল, যারা নিজ মহাদেশের বাইরেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
যে ২৯ জন রেফারি এবার বিশ্বকাপের ৩১ দিনব্যাপী ৬৪টি খেলা পরিচালনা করবেন, তাঁদের ভুল-ভ্রান্তির ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করবে। তেমনি নির্ভর করবে কোনো এক অজানা তারকার হঠাৎ প্রকাশের মধ্য দিয়ে, কিংবা কোনো রক্ষণভাগের মুহূর্তের ভুলে। পুরো খেলা নিয়ন্ত্রণ করে প্রতিপক্ষের এক আক্রমণে হঠাৎ এক গোল এবং তাতেই সমাপ্তি স্বপ্নের।
১১ জুলাই জোহানেসবার্গের সকার সিটির নব্বই হাজার দর্শক এবং দুনিয়া-জোড়া টিভি সেটের সামনে বসা কয়েক শ কোটি ফুটবলাসক্ত মানুষের সাক্ষাতে হবে সে স্বপ্নপূরণ বা স্বপ্নভঙ্গের শেষ অধ্যায়। তদাবধি অধীর উত্তেজনার অপেক্ষা।
আখতার হোসেন খান তারিখ: ১১-০৬-২০১০
বিশ্বকাপ হাতে পেলে-বেকেনবাওয়ার-ম্যারাডোনা-জিদান। এবার কার হাতে ট্রফি?
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এই বিশেষ সংখ্যাটি যখন আপনার হাতে পৌঁছেছে, তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আফ্রিকা মহাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। আজকের দিনে বিশ্বকাপ আক্ষরিক অর্থেই ‘গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ’। কোটি কোটি টাকার আয়োজন, অপরিসীম আনন্দ আর কোটি কোটি টাকার ব্যবসা।
একসময় এই বিশ্বকাপের নিমন্ত্রণ ফিরিয়ে দেওয়ার মতো সাহস দেখাত দলগুলো। আদিতে ১৬ দলের বিশ্বজোড়া প্রতিযোগিতা আজ পরিণত হয়েছে ৩২ দলের বর্ধিত মনকাড়া, হূদয়হারা এমন এক যুবযুদ্ধে, যা থেকে কোনোক্রমেই আর দূরে থাকা সম্ভব নয়।
সারা দুনিয়ায় খেলোয়াড় সরবরাহকারী আফ্রিকা ২০০৬-এর বিশ্বকাপ অনুষ্ঠানের দায়িত্ব পেতে পেতে পায়নি। ২০১০ তাই কালো মহাদেশের স্বপ্নপূরণের বছর। সেই স্বপ্নের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তাদের সেরা তারকা দ্রগবা-এসিয়েন-ইতোদের বিশ্বকাপ-জয়ের স্বপ্ন। এই স্বপ্ন আফ্রিকা মহাদেশ বহন করবে আগামী এক মাস।
দক্ষিণ আফ্রিকার নয়টি শহরের দশটি স্টেডিয়ামে ৩১ দিনব্যাপী এই প্রতিযোগিতার ৬৪টি খেলা নির্ধারণ করবে পরের চার বছরের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। আফ্রিকা মহাদেশে বিশ্বকাপ এই প্রথম, এই নিয়ে ‘কালো’ মহাদেশে এক দারুণ উদ্দীপনা। ‘জনগণের খেলা’ বা ‘সুন্দর খেলা’ নামধারী ফুটবলের নবজাগ্রত শক্তি আফ্রিকায় তাই আয়োজনেই নয়, জয়ের স্বপ্নেও সবাই বিভোর। দক্ষিণ আফ্রিকা, আইভরিকোস্ট, ঘানা বা নাইজেরিয়া যেকোনো অঘটন ঘটাতে সক্ষম।
ইউরোপিয়ান লিগের ক্লাবগুলোতেই শুধু নয়, জাতীয় দলগুলোতেও ক্রমাগত বাড়ছে আফ্রিকা থেকে আগত অভিবাসী খেলোয়াড়ের সংখ্যা। গায়ে-গতরে বা দক্ষতায় তাঁরা স্থানীয়দের সঙ্গে সমানভাবে পাল্লা দেন। আইভরিকোস্টের দিদিয়ের দ্রগবার মতো কজন আছেন পুরো ইউরোপে? ঘানার দুঃখ, দলীয় প্রশিক্ষক-বর্ণিত ‘অন্য গ্রহের খেলোয়াড়’ মাইকেল এসিয়েনকে ছাড়াই তারা আসছে বিশ্বকাপে।
তথাপি ফর্মের হিসাবে চিরন্তন ব্রাজিল এখনো এগিয়ে ফিফা বা বাজিকরদের খাতায়। ২০০২-এর রোনালদো, রিভালদো বা রোনালদিনহোর মতো কেউ নেই এই দলে। কাকার শারীরিক অবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ, লুইস ফ্যাবিয়ানো আর নিলমার ২০০৮ সালে কনফেডারেশনস কাপে অনেক গোল করার পরও মেসি-ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, তোরেস বা দ্রগবার মতো নন। তবু ব্রাজিলের আছে শক্ত রক্ষণভাগ; অত্যন্ত উঁচু মানের গোলরক্ষক আর আছে পাঁচবার বিশ্বকাপ জেতা এবং সবগুলো বিশ্বকাপে খেলার অনন্য ঐতিহ্য।
সম্ভাব্য বিজয়ীদের খাতায় প্রথম কাতারে আরও আছে ২০০৮ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়ন স্পেন। ইনিয়েস্তা, জাভি আর আলোনসোর সমন্বয়ে গড়া মাঝমাঠের সামনে ফরোয়ার্ড হিসেবে তোরেস-ভিয়ার উপস্থিতি যেকোনো রক্ষণভাগের জন্য ত্রাস। আছে ওয়েইন রুনি, রিও ফার্ডিনান্ড, ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের ইংল্যান্ড; শিরোপাধারী ইতালি, নতুন বলে বলীয়ান হল্যান্ড; আর সব সময় যাদের হিসাবের মধ্যে রাখতে হয়, সেই জার্মানি।
লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা তো অবশ্যই আসবে বিবেচনায়। মেসি অনেকেরই বিবেচনায় দুনিয়ার সেরা খেলোয়াড়। অনেকেরই আবার ধারণা, এ মুহূর্তে ছিয়াশির ম্যারাডোনা নন, ১৯৮২-এর ম্যারাডোনার পর্যায়ে আছেন তিনি। আর্জেন্টিনার পক্ষে মেসির এখন পর্যন্ত অর্জন তাঁর বার্সেলোনার অর্জনের ধারে-কাছে যায়নি। তবু সন্দেহ নেই, সারা দুনিয়ার চোখ থাকবে তাঁর দিকে। প্রায় কাছাকাছি বয়সের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো বা ওয়েইন রুনি আর ফার্নান্দো তোরেস কিংবা দিদিয়ের দ্রগবা কোনো বিচারেই কম নন, কিন্তু সবার নজর ওই আর্জেন্টাইনের দিকেই: তাঁকে ধরা হচ্ছে বর্তমান যুগের ম্যারাডোনা ।
ইতিহাসের দিকে তাকানো যাক। গত আঠারোটি কাপ জিতেছে সাতটি দেশ: ব্রাজিল (৫ বার), ইতালি (৪), জার্মানি (৩), উরুগুয়ে (২), আর্জেন্টিনা (২), ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স একবার করে। ১৯৫০ পর্যন্ত চারটি বিশ্বকাপের ভাগাভাগি হয় উরুগুয়ে (প্রথম ও চতুর্থটি) ও ইতালির মধ্যে। ১৯৫৪তে জার্মানি যুক্ত হয় তালিকাতে, ১৯৫৮তে ব্রাজিল, ১৯৬৬তে ইংল্যান্ড, ১৯৭৮-এ আর্জেন্টিনা আর ১৯৯৮-এ ফ্রান্স। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা আর ফ্রান্সের তালিকাভুক্তির বছরটি নিয়ে একটা গাণিতিক সূত্রও বের করা যেতে পারে: দশকের অষ্টম বছরে একটি আরেকটির চেয়ে বিশ বছর পরে পরে।
১৯৯৮ সাল থেকে কায়েম হওয়া সাত দেশের ‘ক্লাব’ এবার আটে উত্তীর্ণ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে: স্পেন স্মরণকালের সেরা দল নিয়ে হাজির হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, আর্সেনাল আর লিভারপুলের তারকাদের পদচারণে মুখর স্পেনের জাতীয় দল। তোরেস, ফ্যাব্রিগাস, ইনিয়েস্তা, ক্যাসিয়াস, আলোনসো, জাভি প্রমুখে সমৃদ্ধ ২০০৮-এর ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন স্পেন এবার বাছাইয়ের অবস্থানে চিরন্তন শীর্ষ বাছাই ব্রাজিলের সমানে সমান। গত ডিসেম্বরে ড্রর দিনই তাই এক স্বাপ্নিক তো লিখেই ফেললেন, ফাইনাল হবে ব্রাজিল ও স্পেনের, আর সে ফাইনাল টাইব্রেকারে গড়াবে। ফুটবলের অপূর্ণ অতি সম্ভাবনার দেশ স্পেন: যে দেশের ফুটবলের মান নির্ধারিত হয় রিয়াল মাদ্রিদ আর বার্সেলোনার মতো ক্লাব দ্বারা, তাদের অনেক আগেই বিশ্বকাপ জেতা উচিত ছিল।
স্পেনের অল্প পেছনেই আছে হল্যান্ড: দুবার বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা ডাচরা সত্তরের দশকের মতো ক্রুইফ, নিসকেন্স, রেপ, আরি হান পর্যায়ের খেলোয়াড় আর ‘টোটাল ফুটবল’ নিয়ে গর্ব করতে না পারলেও বাছাইপর্বে তাদের খেলা ছিল স্পেন আর ইংল্যান্ডের মতোই তুখোড় আর সম্ভাব্য বিজয়ীর মতোই। ইউরোপের সেরা দলগুলোর মতোই ডাচরাও যেকোনো উচ্চতায় উঠতে সক্ষম: ১৯৭৪ সালে তাদের বিশ্বকাপ জেতা যুক্তিসংগত ছিল। কেন পারেনি, তা আজ ইতিহাসের গবেষণার বিষয়, কিন্তু ১৯৭৮ সালেও যে দল নিয়ে ওরা শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছিল, তাই বা কম কিসে। আজকের ডাচ দলে ইন্টার মিলানের স্নাইডার, বায়ার্ন মিউনিখের আরিয়েন রোবেন, লিভারপুলের ডার্ক কিউট, রিয়াল মাদ্রিদের রাফায়েল ফন ডার ভার্ট আর আর্সেনালের ফন পার্সির মতো খেলোয়াড়েরা বিশ্বের যেকোনো দলে জায়গা করে নেওয়ার মতো তারকা।
ইউরোপ থেকে আসা আরেক শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ড। পৃথিবীর অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড রুনির ওপরই ভর করে নেই তারা; জেরার্ড, ল্যাম্পার্ড, টেরির মতো খেলোয়াড়েরাও আছেন ইংল্যান্ড দলে। ‘সি’ গ্রুপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আলজেরিয়া আর স্লোভেনিয়ার সঙ্গে খেলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবে ইংল্যান্ড, সবার তা-ই প্রত্যাশা। ইংল্যান্ডকে অবশ্য ১২ জুন রাস্টেনবার্গের রয়াল বাফোকেং স্টেডিয়ামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাধা পেরোতে হবে। তারা অবশ্যই ১৯৫০ সালে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত চতুর্থ বিশ্বকাপে মার্কিনদের হাতে অপদস্থ হওয়াটাও মনে রাখবে। ইংল্যান্ডের বিজয় এতই অনিবার্য ধরা হচ্ছিল যে যখন পত্রিকা অফিসে প্রথম ওই ১-০ মার্কিন বিজয়ের খবর যায়, অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, ফলাফলটা ইংল্যান্ডের পক্ষে ১০-১ হয়েছে। বেলো হরিজেন্তের ওই আপসেট বিশ্বকাপ-গাথার অংশ হয়ে আছে।
গ্রুপে প্রথম না হতে পারলে ইংল্যান্ডকে ১৬-এর রাউন্ডেই ‘ডি’ গ্রুপের সম্ভাব্য শীর্ষ দল জার্মানির মুখোমুখি হতে হবে। এবং সন্দেহ নেই, সেটা কোনো সুখকর জিনিস নয়।
ইতালিসহ জার্মানি বিশ্বকাপে সচরাচর সম্ভাবনার প্রথম কাতারের দল। জার্মানি ব্রাজিলের মতোই সাতটি ফাইনাল খেলেছে। ইতালি বর্তমানের চ্যাম্পিয়ন। দুটি দেশই ইউরোপের বিভিন্ন লিগে খেলা অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ে ভরা। কে জানত ১৯৮২তে ব্রাজিলকে টপকে ইতালি ফাইনাল খেলবে। তেমন উল্লেখ্য দল ছিল না ১৯৮২, ১৯৮৬ বা ২০০২ সালে, কিন্তু তাই নিয়ে জার্মানি যে ফাইনালে যাবে, তা-ই বা কোন হিসাবে ছিল। একই কথা ইতালিকে নিয়ে। সারা দুনিয়া যখন ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা বা অন্য কাউকে নিয়ে হইচই করে, ইতালি বা জার্মানি সিঁধেল চোরের মতো সন্তর্পণে এসে সেমিফাইনালে বা ফাইনালে ঢোকে কিংবা শিরোপাও জিতে নেয়।
ফুটবলে সাম্প্রতিক কালে এক বিপ্লব ঘটেছে। এটা মূলত ইউরোপ-ভিত্তিক (ক্রিকেটে যা হয়েছে ভারতে)। গত বিশ বছরে ইউরোপের বড় ক্লাবগুলোর চাহিদার প্রয়োজনে সারা দুনিয়া বিশেষত দক্ষিণ, মধ্য ও উত্তর আমেরিকা এবং আফ্রিকা থেকে খেলোয়াড় এসে বোঝাই হচ্ছেন ইউরোপে। অস্ট্রেলিয়াও বাদ নেই এই সরবরাহ-কর্ম থেকে। বিশেষত আফ্রিকার দারিদ্র্য এবং একই সঙ্গে এর যুবশক্তির দৈহিক যোগ্যতা ও ফুটবল-দক্ষতা ঝাঁকে ঝাঁকে আফ্রিকানকে ইউরোপে টেনেছে। অনেকেই অভিবাসী হয়েছেন এবং অভিবাসী না হয়েও অন্যান্য মহাদেশেও তাঁরা খেলছেন। অনেকে কৌশল ও মানের বলে নিজ জাতীয়তা বজায় রেখেই সারা দুনিয়ায় সগর্বে খেলে বেড়াচ্ছেন। দ্রগবা, এসিয়েন, ইতো এঁদেরই অন্যতম। যাঁরা অভিবাসী, তাঁরাও জাতীয় দলে জায়গা করে নিচ্ছেন। জিদানের কথা বাদই গেল; পর্তুগাল বাদে বিশ বছর আগে ইউরোপের কোনো জাতীয় দলে কালো খেলোয়াড় পাওয়া দুষ্কর ছিল। সেই চিত্র আজ অনেক পাল্টে গেছে। টেলিভিশন-বিজ্ঞাপনের টাকার টানে আর বিদেশি বিনিয়োগে ইংল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি আর স্পেন দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ক্লাবগুলোর আখড়া।
এরই একটা ফল হলো এসব দেশ থেকে খুব কম ভালো খেলোয়াড় বাইরে যান। এবারের বিশ্বকাপে স্পেনের ২৩ জনের মধ্যে মাত্র তিনজন বাইরে খেলেন; লিভারপুলের তোরেস ও রেইনা আর আর্সেনালের সেস ফ্যাব্রিগাস। চোখে পড়ার মতো উল্লেখ্য বিষয় হলো, তিনটি দল পুরোপুরি স্বদেশি ক্লাবের খেলোয়াড়ে তৈরি—ইংল্যান্ড, ইতালি আর জার্মানি। পয়লা জুন রাতে ফিফার প্রকাশিত প্রতিটি জাতীয় দলের ২৩ জন খেলোয়াড়ের তালিকায় দেখা যায় এমনকি উত্তর কোরিয়ারও তিনজন খেলোয়াড় (হং ইয়ং-জো, আন ইয়ং-হাক ও জং তা-সে) বিদেশি ক্লাবে (প্রথম জন রাশিয়ায় আর অন্য দুজন জাপানে) খেলেন। ইংল্যান্ড, ইতালি আর জার্মানি সম্ভবত পশ্চিমা দুনিয়ার ফুটবল-বিপ্লবের প্রতীক, তেমনি এর সহজাত জনসংখ্যা-ঘাটতির বোঝা সবচেয়ে বেশি বহন করে চলছে।
আটটি গ্রুপের দলগুলোকে ফিফার সিডিং-ভিত্তি মোটামুটি মাথায় রেখে কাপ-যুদ্ধের একটা আনুমানিক দৃশ্য আঁকা যায় আগামী এক মাসের জন্য। ‘এ’ গ্রুপে দক্ষিণ আফ্রিকা, মেক্সিকো, উরুগুয়ে বা ফ্রান্স ‘জি’ গ্রুপের মতোই, যদিবা একটু কম শক্তিমত্তার, আরেক ‘গ্রুপ অব ডেথ’। দুবার বিশ্বকাপজয়ী উরুগুয়ে ১৯৭০-এর পরে আর সেমিফাইনালেও যায়নি। ফ্রান্স ২০০৬-এর রানার্স-আপ এবং থিয়েরি অঁরির হ্যান্ডবল গোলে চূড়ান্ত পর্বে এলেও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, চেলসি, আর্সেনাল, বায়ার্ন মিউনিখ আর সেরা ফরাসি ক্লাবগুলোর খেলোয়াড় নিয়ে গড়া ফরাসি দলকে যতটা সম্ভাবনা থেকে দূরে ভাবা হয়, কার্যত তা নয়। প্যাট্রিস এভরা, ফ্রাঙ্ক রিবেরি আর নিকোলাস আনেলকা বিশ্বখ্যাত।
দক্ষিণ আফ্রিকা তার পুরো মহাদেশের চ্যালেঞ্জের নেতৃত্ব দেবে (অন্যদের মধ্যে থাকবে ‘জি’ গ্রুপের আইভরিকোস্ট, ‘বি’ গ্রুপের নাইজেরিয়া আর ‘ডি’ গ্রুপের ঘানা)। শেষ মুহূর্তে এসে সর্বোচ্চ গোলদাতা ম্যাকার্থি বাদ পড়েছেন চূড়ান্ত ২৩ থেকে, তবে আছেন স্টিভ পিয়েনার। স্বাগতিক দেশ হওয়ার যে সুবিধা দক্ষিণ আফ্রিকার আছে, বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিলীয় কোচ কার্লোস আলবার্তো পাহেইরার প্রশিক্ষণে তা পিয়েনাররা কতটুকু সামনে নিয়ে যাবেন, তার জন্য অধীর হয়ে আছেন স্বাগতিক দেশের লক্ষ-কোটি সমর্থক।
ধরে নেওয়া যেতে পারে, ১৬-এর রাউন্ডের জন্য ফ্রান্সই থাকবে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে। উরুগুয়ে বা মেক্সিকোর বিপক্ষে তেমন কিছু বলার যেমন নেই, তেমনি পক্ষেও খুব বলার নেই। ডিয়েগো ফোরলান উরুগুয়ের সেরা খেলোয়াড়; অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের পক্ষে এবার তিনি এক সাফল্যময় মৌসুম পেরিয়ে এসেছেন; সে উচ্চতা তিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পক্ষেও পাননি। আরও আছেন ইউরোপীয় ও অন্যান্য লীগের খেলোয়াড়। এর পরও বলা যায়, ফ্রান্স ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে ডিঙিয়ে মেক্সিকো-উরুগুয়ের পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়া দুষ্কর। তা ছাড়া আগের ১৮টি বিশ্বকাপে কোনো দিন স্বাগতিক দেশ প্রথম রাউন্ডেই ছিটকে পড়েনি। পাহেইরা নিশ্চয়ই তাঁর প্রাক্তন রেকর্ডের উল্টোটা অর্জনে উত্সাহী হবেন না। তবে তাঁর এও মনে রাখতে হবে, ১৮টি বিশ্বকাপে মাত্র ছয়টি আয়োজক দেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
‘বি’ গ্রুপে ম্যারাডোনা-মেসির আর্জেন্টিনার সঙ্গে আছে নাইজেরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া আর গ্রিস। এখানে একমাত্র প্রশ্ন শেষ ষোলোর রাউন্ডে আর্জেন্টিনার সঙ্গী কে হবে? দক্ষিণ কোরিয়া আর গ্রিসের প্রতি অসম্মান না করেও বলা যায়, নিজ মহাদেশে নাইজেরিয়া দর্শক সমর্থনে উজ্জীবিত হয়ে সম্ভবত পরের রাউন্ডে যাবে। চেলসির মিকেল নাইজেরিয়ার সেরা খেলোয়াড়। চোটের কারণে তিনি বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়েছেন। তবে আছেন পোর্টসমাউথের কানু, এভারটনের ইয়াকুবু, ইংলিশ ও ফরাসি লিগের বিভিন্ন ক্লাবের সক্ষম ও শক্ত সব তারকা।
গ্রুপ ‘সি’তে আগে উল্লিখিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ইংল্যান্ডের ১৯৫০ সেই বিস্ময়কর ফলাফলের পরে মার্কিনরা অনেক এগিয়েছে। আজ অনেক মার্কিন প্রিমিয়ার লীগসহ ইউরোপীয় বিভিন্ন লীগের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। ইতিমধ্যেই বুকিরা এই খেলাকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া শুরু করেছেন। এর সম্ভাব্য ফল নিয়েও নানা ধরনের জল্পনাকল্পনা শুরু হয়েছে। যেকোনো ফল আসতে পারে এ খেলা থেকে। সম্ভাব্য বিজয়ী ইংল্যান্ডকে সামনে এগোতে হলে এই খেলা ভালোভাবে পার হতে হবে। ল্যানডন ডনোভান (প্রাক্তন এভারটন এবং এখন ডেভিড বেকহামের এলএ গ্যালাক্সি সতীর্থ) এবং ইলিশ, ইতালিয়ান ও জার্মান লিগের বিভিন্ন ক্লাবে ছড়িয়ে থাকা খেলোয়াড়-ভরা মার্কিন দল আগের মতো উপেক্ষণীয় নয় যে এখন খেলায় জিতলে সেই ফলাফল আবার যাচাই হবে, সে অবস্থা নেই। এবং সন্দেহ নেই আলজেরিয়া আর স্লোভেনিয়াকে ডিঙিয়ে ১৬-এর রাউন্ডে ইংল্যান্ডের সঙ্গী হওয়ার সম্ভাবনা তাদেরই বেশি।
গ্রুপ ‘ডি’তে শীর্ষ বাছাই জার্মানির সঙ্গে কে যাবে? সে লড়াইটা জমবে ভালো অস্ট্রেলিয়া, সার্বিয়া আর ঘানার মধ্যে। এ তিন দলের যেকোনো দুটি শক্তিসম্পন্ন ১৬-এর রাউন্ডে যাওয়ার। ঘানা খেলতে আসছে সেরা খেলোয়াড় মাইকেল এসিয়েনকে ছাড়াই। এর পরও ইউরোপের বিভিন্ন লিগ থেকে আগত খেলোয়াড় নিয়ে গড়া ঘানা শারীরিক যোগ্যতায় নাইজেরিয়া, ক্যামেরুন আর আইভরিকোস্টের মতোই উঁচু মানের। অস্ট্রেলিয়া আর সার্বিয়ারও আছে ইউরোপীয় লিগের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন খেলোয়াড়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ভিদিচ সার্বদের সেরা সঞ্চয়। ইন্টার মিলানের স্ট্যানকোভিচ আর ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাবের খেলোয়াড় আছেন সার্বিয়ায়। কাগজে-কলমে গ্রুপের দ্বিতীয় সেরা দল। এমনকি শুভ দিনে জার্মানদের ধরে ফেলার মতো দল সার্বিয়া। অস্ট্রেলিয়ারও আছে ইউরোপের বিভিন্ন লিগের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন খেলোয়াড়। এবং এর পরও ঘানা নিজ মহাদেশের দর্শকদের সমর্থনে অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য খুবই ভয়ংকর প্রতিপক্ষ।
গ্রুপ ‘ই’তে হল্যান্ডের সঙ্গে আছে ডেনমার্ক, জাপান আর ক্যামেরুন। এক প্রতাপান্বিত বাছাইপর্ব শেষ করেন এসেছে হল্যান্ড। শুরুতেই যা বলেছি, তার রেশ ধরে আবার বলছি, ডাচরা গ্রুপ ‘ই’-এর শীর্ষ দল হিসেবে পরের রাউন্ডে গেলে পরবর্তী স্থানের সবচেয়ে বড় দাবিদার ক্যামেরুন। স্যামুয়েল ইতো আর বিভিন্ন ইউরোপীয় ক্লাবের খেলোয়াড় নিয়ে ক্যামেরুন ১৬-এর রাউন্ডের জন্য ডেনমার্ক আর জাপানের ঘাম ঝরাবে। ডেনমার্ক ইউরোপের শক্ত দল। অন্যদিকে ৩০ মে, ২০১০ গা গরমের খেলায় ইংল্যান্ডকে প্রায় রুখে দিয়েছিল জাপান।
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইতালি মজায় আছে ‘এফ’ গ্রুপে প্যারাগুয়ে, নিউজিল্যান্ড ও স্লোভাকিয়াকে নিয়ে। একমাত্র প্যারাগুয়ে বাদে নিউজিল্যান্ড ও স্লোভাকিয়ার কাছ থেকে তাদের বেগ পাওয়ার কথা নয়। ইতালির সমস্যা হলো তারা শুরু করে অত্যন্ত সাদামাটাভাবে। তবে অতীত ইতিহাস যা দেখিয়েছে, একবার ইতালি গ্রুপ পর্যায়ের বাইরে যেতে পারলে তার যাত্রা শেষ হয় প্রায় শেষ পর্যায়ে যেয়ে। অন্য দলগুলোর সমস্যা হবে। এবং ইতালির নিজেরও হবে। যদি কোনোভাবে ইতালি দু-একটা ড্র-এর মধ্য দিয়ে গিয়ে গ্রুপের প্রথম স্থানটা হারায়। পরের রাউন্ডেই দেখা হয়ে যাবে সম্ভবত ‘ই’ গ্রুপজয়ী হল্যান্ডের সঙ্গে এবং তা পেরোলে কোয়ার্টার ফাইনালে ‘জি’ গ্রুপের সম্ভাব্য জয়ী ব্রাজিলের সঙ্গে। এ ধরনের ত্বরিত সাক্ষাতের চিন্তা নেই ফিফার তৈরি সিডিং আর ফরম্যাটে। ধরে নিই ইতালি তার গ্রুপ জিতেছে। সে ক্ষেত্রে তার সাথী হবে কে? খুব সম্ভব ম্যানচেস্টার সিটির রকি সান্তা ক্রুজের দল প্যারাগুয়ে, যদি না নিউজিল্যান্ড ও স্লোভাকিয়া হঠাৎ ঝলসে ওঠে।
‘জি’ গ্রুপকে নাম দেওয়া হয়েছে ‘গ্রুপ অব ডেথ’। শীর্ষ বাছাই ব্রাজিল বাদে এই গ্রুপের অন্য তিন দল উত্তর কোরিয়া, আইভরিকোস্ট আর পর্তুগাল। যদি ধরে নেওয়া হয় এশিয়ার প্রতিনিধি গ্রুপের সবচেয়ে দুর্বল দল, তাহলে দ্বিতীয় স্থানটির জন্য লড়াই ভালোই জমবে আইভরিকোস্ট আর পর্তুগালের মধ্যে। এবং এ ধারণা নিছক অযৌক্তিক নয় যে দিদিয়ের দ্রগবা, সলোমান কালু, কোলো তোরে, ইমানুয়েল এবু (সবাই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের), ইয়াইয়া তোরে (বার্সেলোনা) প্রমুখ নিজ মহাদেশে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো-নানি-পেপে-পাওলো ফেরেরা-রিকার্ডো কারভালহো-ডেকোর পর্তুগালকে ভালোই ধরবে দ্বিতীয় স্থানটির জন্য। এবং এ দ্বৈরথে আইভরিকোস্টের এগিয়ে যাওয়া মোটেই বিস্ময়কর হবে না।
গ্রুপ ‘এইচ’ স্পেনের গ্রুপ। সঙ্গে আছে সুইজারল্যান্ড, হন্ডুরাস আর চিলি। স্পেনের জন্য যেখানে অনেকেই প্রতিযোগিতার শীর্ষস্থানটি নির্ধারণ করে রেখেছে, সেখানে গ্রুপ জেতা তো তাদের জন্য কোনো রকম প্রশ্নই আনবে না। ইনিয়েস্তা, ফ্যাব্রিগাস, আলোনসো আর জাভির সমন্বয়ে গড়া মাঝমাঠের সামনে তোরেস আর ভিয়ার মতো ফরোয়ার্ড থাকলে সেই দলের আর কী চিন্তা থাকতে পারে! স্পেনের সঙ্গী হবে কে? হন্ডুরাসকে বাদ রেখে চিলি-সুইজারল্যান্ডের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব জমবে সন্দেহ নেই। দু দেশেরই ইউরোপের বিভিন্ন লিগে খেলা অভিজ্ঞতার সমাহার। ইউরোপের মাটিতে হলে চোখ বন্ধ করে বলা যেত সুইজারল্যান্ড যাবে পরের রাউন্ডে। নিরপেক্ষ ভেন্যু বলেই বলা যায় না কোন দল পরের পর্যায়ে যাচ্ছে।
কল্পনার জগতে বিভিন্ন কম্বিনেশন আসতে পারে। তা থেকে ১৬-এর রাউন্ডের দলগুলোকে এভাবে সাজানো যেতে পারে—ফ্রান্স বনাম নাইজেরিয়া, ইংল্যান্ড বনাম ঘানা, হল্যান্ড বনাম প্যারাগুয়ে, ব্রাজিল বনাম চিলি—এই চারটি খেলা থেকে এক ফাইনালিস্ট। আর এর বিপরীতে আর্জেন্টিনা বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি বনাম যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি বনাম ক্যামেরুন এবং স্পেন বনাম আইভরিকোস্ট—এই চারটি খেলা থেকে আরেক ফাইনালিস্ট।
কোয়ার্টার ফাইনালের লাইনআপ? যদি আমরা ফিফার চিন্তাই অনুসরণ করি তাহলে ফ্রান্স বনাম ইংল্যান্ড, হল্যান্ড বনাম ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা বনাম জার্মানি এবং ইতালি বনাম স্পেন। সেমিফাইনাল? ইংল্যান্ড বনাম ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা বনাম স্পেন। ফাইনাল ব্রাজিল বনাম স্পেন। জয়ী ব্রাজিল বা স্পেন।
অথবা হয়তো পুরো হিসাবটাই ভুল। হয়তো কোনো আফ্রিকান দল—দক্ষিণ আফ্রিকা বা আইভরিকোস্ট অথবা ক্যামেরুন বা ঘানা—ফাইনাল খেলবে ব্রাজিলের সঙ্গে।
ফুটবল বড় নিষ্ঠুর খেলা। যেভাবে স্বপ্ন দেখা হয়, ঠিক সেভাবে সব চলে না। সেরা দল অনেক সময়ই চ্যাম্পিয়ন হয় না। এ বছর স্পেন বা দুনিয়ার সেরা খেলোয়াড় মেসির ক্ষেত্রে এটা মনে রাখতে হবে। ১৯৩৮ সালে ব্রাজিল সেরা খেলোয়াড় লিওনিডাসকে বসিয়ে রেখে সেমিফাইনালে ইতালিকে রুখতে যায়; তাদের সেই প্রয়াস সফল হয়নি। ১৯৫০ সালে ব্রাজিল আবার আটকা পড়ে। সেরা দল নিয়ে মারাকানা স্টেডিয়ামে নির্ধারণী খেলায় নিজ সমর্থকদের সামনে উরুগুয়ের বিরুদ্ধে এক গোলে এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ১-২ গোলে হার মানে। ১৯৫৪ সালে সম্ভবত সবচেয়ে বড় বিস্ময়ের জন্ম দেয় হাঙ্গেরি ফাইনালে জার্মানদের বিরুদ্ধে কাপ না জিতে (অবশ্য সে খেলায় রেফারির জার্মানপন্থী ভূমিকাও অনেকাংশে ফলাফলের জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়)। ১৯৭৪ সালে সাম্প্রতিক কালের সেরা দল ক্রুইফ-নিসকিন্সের হল্যান্ড ‘টোটাল ফুটবল’ খেলে অল্পের জন্য শিরোপাবঞ্চিত থাকে। ১৯৯০ সালেই কি আর্জেন্টিনার প্রাপ্য ছিল না বিশ্বকাপ? এর উত্তর অবশ্য ভালো দিতে পারবেন ওই খেলার মেক্সিকান রেফারি কোদেসাল। দক্ষিণ আফ্রিকার আবহাওয়া ইউরোপীয় দলগুলোকে সাহায্য করবে, কিন্তু মনে রাখা দরকার ইউরোপীয়রা কোনো দিন নিজ মহাদেশের বাইরে কাপ জেতেনি। আর ব্রাজিলই একমাত্র দল, যারা নিজ মহাদেশের বাইরেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
যে ২৯ জন রেফারি এবার বিশ্বকাপের ৩১ দিনব্যাপী ৬৪টি খেলা পরিচালনা করবেন, তাঁদের ভুল-ভ্রান্তির ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করবে। তেমনি নির্ভর করবে কোনো এক অজানা তারকার হঠাৎ প্রকাশের মধ্য দিয়ে, কিংবা কোনো রক্ষণভাগের মুহূর্তের ভুলে। পুরো খেলা নিয়ন্ত্রণ করে প্রতিপক্ষের এক আক্রমণে হঠাৎ এক গোল এবং তাতেই সমাপ্তি স্বপ্নের।
১১ জুলাই জোহানেসবার্গের সকার সিটির নব্বই হাজার দর্শক এবং দুনিয়া-জোড়া টিভি সেটের সামনে বসা কয়েক শ কোটি ফুটবলাসক্ত মানুষের সাক্ষাতে হবে সে স্বপ্নপূরণ বা স্বপ্নভঙ্গের শেষ অধ্যায়। তদাবধি অধীর উত্তেজনার অপেক্ষা।
Friday, June 11, 2010
brazil is the best .why ?
বিশ্বকাপের রেকর্ড বই খুললেই ব্রাজিল আর ব্রাজিল। বিশ্বকাপ যে কতটা ব্রাজিলময়, তার কিছু নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যাবে এই রেকর্ডগুলোতে
সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দল (১৯ বার)। গত ১৮টি বিশ্বকাপের সবগুলো আসরে অংশ নেওয়া একমাত্র দল ব্রাজিল। ১৬টি টুর্নামেন্টে খেলেছে জার্মানি আর ইতালি। আর্জেন্টিনা খেলেছে ১৪টি আসরে।
সবচেয়ে বেশিবার চ্যাম্পিয়ন (৫)। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চ্যাম্পিয়ন ইতালি (৪ বার)।
সবচেয়ে বেশিবার ফাইনালে ওঠা (৭টি)। এই রেকর্ডটার অংশীদার অবশ্য জার্মানিও।
সেমিফাইনাল কিংবা শেষ চারে সবচেয়ে বেশিবার ওঠা দল (১১ বার)। এখানেও সঙ্গী জার্মানি।
সবচেয়ে বেশি, ৯২টি ম্যাচ খেলার রেকর্ডেও ব্রাজিলের সঙ্গী শুধু জার্মানি।
সবচেয়ে বেশি জয় (৬৪টি)।
সবচেয়ে বেশি গোল (২০১টি)।
একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা। সুইডেনের সঙ্গে ব্রাজিল সর্বোচ্চ সাতবার মুখোমুখি হয়েছে। ১৯৩৮, ১৯৫০, ১৯৫৮, ১৯৭৮, ১৯৯০ এবং ১৯৯৪ বিশ্বকাপে দুবার।
এক আসরে সবচেয়ে বেশি জয় (২০০২ বিশ্বকাপে, সাতটি)।
এক আসরে সবচেয়ে কম গোল করেও চ্যাম্পিয়ন (১৯৯৪ বিশ্বকাপে ১১টি গোল করেছিল ব্রাজিল)।
টানা দুবার শিরোপা জয় ১৯৫৮ এবং ১৯৬২-তে। ইতালিও ১৯৩৪ আর ১৯৩৮-এ শিরোপা জিতেছিল।
টানা তিনটি আসরে ফাইনালে ওঠা (১৯৯৪ থেকে ২০০২)। জার্মানিও উঠেছিল ১৯৮২ থেকে ১৯৯০।
টানা জয় ১১টি।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচ অপরাজিত থাকা (১৩টি)। ১৯৫৮ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয় দিয়ে শুরু, ১৯৬৬ বিশ্বকাপে বুলগেরিয়া ২-০।
টানা প্রতি ম্যাচে কমপক্ষে একটি গোল করা (১৮ ম্যাচ)। ১৯৩০ থেকে ১৯৫৮ বিশ্বকাপ। এই রেকর্ড আছে জার্মানিরও ১৯৩৪ থেকে ১৯৫৮।
ফাইনালে সবচেয়ে বেশি গোল (৫টি), সুইডেনের বিপক্ষে ১৯৫৮।
ব্যক্তিগত
সবচেয়ে বেশিবার চ্যাম্পিয়ন, পেলে (৩ বার) ১৯৫৮, ১৯৬২ এবং ১৯৭০।
ফাইনাল খেলা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়, পেলে, ১৭ বছর ২৪৯ দিন। প্রতিপক্ষ সুইডেন ১৯৫৮ বিশ্বকাপ।
সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা, পেলে, ১৭ বছর ২৩৯ দিন (ওয়েলসের বিপক্ষে ১৯৫৮ বিশ্বকাপে)।
সর্বকনিষ্ঠ হ্যাটট্রিককারী, পেলে, ১৭ বছর ২৪৪ দিন, (ফ্রান্সের বিপক্ষে, ১৯৫৮)।
ফাইনালে গোল করা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়, পেলে, ১৭ বছর ২৪৯ দিন, সুইডেনের বিপক্ষে ১৯৫৮।
সবচেয়ে বেশি টুর্নামেন্টে গোল করা, পেলে, চারটি (১৯৫৮-১৯৭০)। রেকর্ডে ভাগ আছে জার্মানির উয়ি সিলারের।
সবচেয়ে বেশি গোল, রোনালদো ১৫টি।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচে গোল করা, রোনালদো, ১১টি।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচে জয়, কাফু ১৬টি।
সবচেয়ে বেশি ফাইনাল খেলা, কাফু, তিনটি, ১৯৯৪-২০০২।
টানা ম্যাচে গোল করা (৬টি) জেয়ারজিনহো, জাঁ ফন্টেইনেরও একই রেকর্ড।
বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচে গোল করা, জেয়ারজিনহো ৬ ম্যাচে ৭ গোল (১৯৭০)। অ্যালসিডেস ঘিগিয়া ৪ ম্যাচে ৪ গোল, জাঁ ফন্টেইন ৬ ম্যাচে ১৩ গোল।
খেলোয়াড় আর কোচ হিসেবে সবচেয়ে বেশি টুর্নামেন্ট জয়, তিনটি, মারিও জাগালো ১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০।
গ্রন্থনা: রাজীব হাসান
সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দল (১৯ বার)। গত ১৮টি বিশ্বকাপের সবগুলো আসরে অংশ নেওয়া একমাত্র দল ব্রাজিল। ১৬টি টুর্নামেন্টে খেলেছে জার্মানি আর ইতালি। আর্জেন্টিনা খেলেছে ১৪টি আসরে।
সবচেয়ে বেশিবার চ্যাম্পিয়ন (৫)। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চ্যাম্পিয়ন ইতালি (৪ বার)।
সবচেয়ে বেশিবার ফাইনালে ওঠা (৭টি)। এই রেকর্ডটার অংশীদার অবশ্য জার্মানিও।
সেমিফাইনাল কিংবা শেষ চারে সবচেয়ে বেশিবার ওঠা দল (১১ বার)। এখানেও সঙ্গী জার্মানি।
সবচেয়ে বেশি, ৯২টি ম্যাচ খেলার রেকর্ডেও ব্রাজিলের সঙ্গী শুধু জার্মানি।
সবচেয়ে বেশি জয় (৬৪টি)।
সবচেয়ে বেশি গোল (২০১টি)।
একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা। সুইডেনের সঙ্গে ব্রাজিল সর্বোচ্চ সাতবার মুখোমুখি হয়েছে। ১৯৩৮, ১৯৫০, ১৯৫৮, ১৯৭৮, ১৯৯০ এবং ১৯৯৪ বিশ্বকাপে দুবার।
এক আসরে সবচেয়ে বেশি জয় (২০০২ বিশ্বকাপে, সাতটি)।
এক আসরে সবচেয়ে কম গোল করেও চ্যাম্পিয়ন (১৯৯৪ বিশ্বকাপে ১১টি গোল করেছিল ব্রাজিল)।
টানা দুবার শিরোপা জয় ১৯৫৮ এবং ১৯৬২-তে। ইতালিও ১৯৩৪ আর ১৯৩৮-এ শিরোপা জিতেছিল।
টানা তিনটি আসরে ফাইনালে ওঠা (১৯৯৪ থেকে ২০০২)। জার্মানিও উঠেছিল ১৯৮২ থেকে ১৯৯০।
টানা জয় ১১টি।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচ অপরাজিত থাকা (১৩টি)। ১৯৫৮ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয় দিয়ে শুরু, ১৯৬৬ বিশ্বকাপে বুলগেরিয়া ২-০।
টানা প্রতি ম্যাচে কমপক্ষে একটি গোল করা (১৮ ম্যাচ)। ১৯৩০ থেকে ১৯৫৮ বিশ্বকাপ। এই রেকর্ড আছে জার্মানিরও ১৯৩৪ থেকে ১৯৫৮।
ফাইনালে সবচেয়ে বেশি গোল (৫টি), সুইডেনের বিপক্ষে ১৯৫৮।
ব্যক্তিগত
সবচেয়ে বেশিবার চ্যাম্পিয়ন, পেলে (৩ বার) ১৯৫৮, ১৯৬২ এবং ১৯৭০।
ফাইনাল খেলা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়, পেলে, ১৭ বছর ২৪৯ দিন। প্রতিপক্ষ সুইডেন ১৯৫৮ বিশ্বকাপ।
সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা, পেলে, ১৭ বছর ২৩৯ দিন (ওয়েলসের বিপক্ষে ১৯৫৮ বিশ্বকাপে)।
সর্বকনিষ্ঠ হ্যাটট্রিককারী, পেলে, ১৭ বছর ২৪৪ দিন, (ফ্রান্সের বিপক্ষে, ১৯৫৮)।
ফাইনালে গোল করা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়, পেলে, ১৭ বছর ২৪৯ দিন, সুইডেনের বিপক্ষে ১৯৫৮।
সবচেয়ে বেশি টুর্নামেন্টে গোল করা, পেলে, চারটি (১৯৫৮-১৯৭০)। রেকর্ডে ভাগ আছে জার্মানির উয়ি সিলারের।
সবচেয়ে বেশি গোল, রোনালদো ১৫টি।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচে গোল করা, রোনালদো, ১১টি।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচে জয়, কাফু ১৬টি।
সবচেয়ে বেশি ফাইনাল খেলা, কাফু, তিনটি, ১৯৯৪-২০০২।
টানা ম্যাচে গোল করা (৬টি) জেয়ারজিনহো, জাঁ ফন্টেইনেরও একই রেকর্ড।
বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচে গোল করা, জেয়ারজিনহো ৬ ম্যাচে ৭ গোল (১৯৭০)। অ্যালসিডেস ঘিগিয়া ৪ ম্যাচে ৪ গোল, জাঁ ফন্টেইন ৬ ম্যাচে ১৩ গোল।
খেলোয়াড় আর কোচ হিসেবে সবচেয়ে বেশি টুর্নামেন্ট জয়, তিনটি, মারিও জাগালো ১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০।
গ্রন্থনা: রাজীব হাসান
winnig record world cup
বিশ্বকাপের রেকর্ড
তারিখ: ১১-০৬-২০১০
রোল অব অনার
সাল স্বাগতিক চ্যাম্পিয়ন রানার্সআপ
১৯৩০ উরুগুয়ে উরুগুয়ে আর্জেন্টিনা
১৯৩৪ ইতালি ইতালি চেকোস্লোভাকিয়া
১৯৩৮ ফ্রান্স ইতালি হাঙ্গেরি
১৯৫০ ব্রাজিল উরুগুয়ে ব্রাজিল
১৯৫৪ সুইজারল্যান্ড পশ্চিম জার্মানি হাঙ্গেরি
১৯৫৮ সুইডেন ব্রাজিল সুইডেন
১৯৬২ চিলি ব্রাজিল চেকোস্লোভাকিয়া
১৯৬৬ ইংল্যান্ড ইংল্যান্ড পশ্চিম জার্মানি
১৯৭০ মেক্সিকো ব্রাজিল ইতালি
১৯৭৪ পশ্চিম জার্মানি পশ্চিম জার্মানি হল্যান্ড
১৯৭৮ আর্জেন্টিনা আর্জেন্টিনা হল্যান্ড
১৯৮২ স্পেন ইতালি পশ্চিম জার্মানি
১৯৮৬ মেক্সিকো আর্জেন্টিনা পশ্চিম জার্মানি
১৯৯০ ইতালি পশ্চিম জার্মানি আর্জেন্টিনা
১৯৯৪ যুক্তরাষ্ট্র ব্রাজিল ইতালি
১৯৯৮ ফ্রান্স ফ্রান্স ব্রাজিল
২০০২ কোরিয়া-জাপান ব্রাজিল জার্মানি
২০০৬ জার্মানি ইতালি ফ্রান্স
চূড়ান্ত পর্বে সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি—ব্রাজিল (১৯)।
সবচেয়ে বেশি শিরোপা জয়—ব্রাজিল (৫)।
সবচেয়ে বেশি ফাইনাল খেলা দল—ব্রাজিল ও জার্মানি (৭ বার করে)।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা দল—ব্রাজিল ও জার্মানি (৯২টি)।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জেতা দল—ব্রাজিল (৬৪)।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচ হারা দল—মেক্সিকো (২২)।
সবচেয়ে বেশি গোল করা দল—ব্রাজিল (২০১)।
সবচেয়ে বেশি গোল হজম করা দল—জার্মানি (১১২)।
সবচেয়ে বেশিবার টুর্নামেন্ট খেলে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে না পারা দল—স্কটল্যান্ড (৮)।
সবচেয়ে বেশি টানা শিরোপা—২; ইতালি (১৯৩৪, ১৯৩৮), ব্রাজিল (১৯৫৮, ১৯৬২)।
সবচেয়ে বেশি টানা ফাইনাল—৩; (জার্মানি ১৯৮২-১৯৯০), ব্রাজিল (১৯৯৪-২০০২)।
সবচেয়ে বেশি টানা জয়—১১; ব্রাজিল।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচে টানা অপরাজিত—১৩; ব্রাজিল।
সবচেয়ে বেশি টানা ম্যাচে হার—৯; মেক্সিকো।
সবচেয়ে বেশিবার অংশগ্রহণ—৫ বার; আন্তোনিও কারবাজাল (মেক্সিকো, ১৯৫০-১৯৬৬) ও লোথার ম্যাথাউস (জার্মানি, ১৯৮২-১৯৯৮)।
৩ বার বিশ্বকাপ জেতা একমাত্র ফুটবলার—পেলে (১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০)।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা ফুটবলার—লোথার ম্যাথাউস (জার্মানি, ২৫ ম্যাচ)।
সবচেয়ে বেশি সময় খেলা—২২১৭ মিনিট; পাওলো মালদিনি (ইতালি)।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জেতা ফুটবলার—কাফু (ব্রাজিল, ১৬ ম্যাচ)।
সবচেয়ে বেশি ফাইনালে উপস্থিতি—৩ বার (কাফু, ব্রাজিল ১৯৯৪-২০০২)।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা অধিনায়ক—ডিয়েগো ম্যারাডোনা (১৬ ম্যাচ)।
বদলি ফুটবলার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা ফুটবলার—ডেনিলসন (ব্রাজিল, ১১ ম্যাচ)।
কনিষ্ঠতম ফুটবলার—নরমান হোয়াইটসাইড (১৭ বছর ৪১ দিন, উত্তর আয়ারল্যান্ড)।
তারিখ: ১১-০৬-২০১০
রোল অব অনার
সাল স্বাগতিক চ্যাম্পিয়ন রানার্সআপ
১৯৩০ উরুগুয়ে উরুগুয়ে আর্জেন্টিনা
১৯৩৪ ইতালি ইতালি চেকোস্লোভাকিয়া
১৯৩৮ ফ্রান্স ইতালি হাঙ্গেরি
১৯৫০ ব্রাজিল উরুগুয়ে ব্রাজিল
১৯৫৪ সুইজারল্যান্ড পশ্চিম জার্মানি হাঙ্গেরি
১৯৫৮ সুইডেন ব্রাজিল সুইডেন
১৯৬২ চিলি ব্রাজিল চেকোস্লোভাকিয়া
১৯৬৬ ইংল্যান্ড ইংল্যান্ড পশ্চিম জার্মানি
১৯৭০ মেক্সিকো ব্রাজিল ইতালি
১৯৭৪ পশ্চিম জার্মানি পশ্চিম জার্মানি হল্যান্ড
১৯৭৮ আর্জেন্টিনা আর্জেন্টিনা হল্যান্ড
১৯৮২ স্পেন ইতালি পশ্চিম জার্মানি
১৯৮৬ মেক্সিকো আর্জেন্টিনা পশ্চিম জার্মানি
১৯৯০ ইতালি পশ্চিম জার্মানি আর্জেন্টিনা
১৯৯৪ যুক্তরাষ্ট্র ব্রাজিল ইতালি
১৯৯৮ ফ্রান্স ফ্রান্স ব্রাজিল
২০০২ কোরিয়া-জাপান ব্রাজিল জার্মানি
২০০৬ জার্মানি ইতালি ফ্রান্স
চূড়ান্ত পর্বে সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি—ব্রাজিল (১৯)।
সবচেয়ে বেশি শিরোপা জয়—ব্রাজিল (৫)।
সবচেয়ে বেশি ফাইনাল খেলা দল—ব্রাজিল ও জার্মানি (৭ বার করে)।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা দল—ব্রাজিল ও জার্মানি (৯২টি)।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জেতা দল—ব্রাজিল (৬৪)।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচ হারা দল—মেক্সিকো (২২)।
সবচেয়ে বেশি গোল করা দল—ব্রাজিল (২০১)।
সবচেয়ে বেশি গোল হজম করা দল—জার্মানি (১১২)।
সবচেয়ে বেশিবার টুর্নামেন্ট খেলে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে না পারা দল—স্কটল্যান্ড (৮)।
সবচেয়ে বেশি টানা শিরোপা—২; ইতালি (১৯৩৪, ১৯৩৮), ব্রাজিল (১৯৫৮, ১৯৬২)।
সবচেয়ে বেশি টানা ফাইনাল—৩; (জার্মানি ১৯৮২-১৯৯০), ব্রাজিল (১৯৯৪-২০০২)।
সবচেয়ে বেশি টানা জয়—১১; ব্রাজিল।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচে টানা অপরাজিত—১৩; ব্রাজিল।
সবচেয়ে বেশি টানা ম্যাচে হার—৯; মেক্সিকো।
সবচেয়ে বেশিবার অংশগ্রহণ—৫ বার; আন্তোনিও কারবাজাল (মেক্সিকো, ১৯৫০-১৯৬৬) ও লোথার ম্যাথাউস (জার্মানি, ১৯৮২-১৯৯৮)।
৩ বার বিশ্বকাপ জেতা একমাত্র ফুটবলার—পেলে (১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০)।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা ফুটবলার—লোথার ম্যাথাউস (জার্মানি, ২৫ ম্যাচ)।
সবচেয়ে বেশি সময় খেলা—২২১৭ মিনিট; পাওলো মালদিনি (ইতালি)।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জেতা ফুটবলার—কাফু (ব্রাজিল, ১৬ ম্যাচ)।
সবচেয়ে বেশি ফাইনালে উপস্থিতি—৩ বার (কাফু, ব্রাজিল ১৯৯৪-২০০২)।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা অধিনায়ক—ডিয়েগো ম্যারাডোনা (১৬ ম্যাচ)।
বদলি ফুটবলার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা ফুটবলার—ডেনিলসন (ব্রাজিল, ১১ ম্যাচ)।
কনিষ্ঠতম ফুটবলার—নরমান হোয়াইটসাইড (১৭ বছর ৪১ দিন, উত্তর আয়ারল্যান্ড)।
world cup record
বি শ্ব কা পে র রে ক র্ড
সবচেয়ে বেশি গোল—১৫, রোনালদো (ব্রাজিল)।
এক টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি গোল—১৩, জাঁ ফন্টেইন।
এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি গোল—৫, ওলেগ সালেঙ্কো (রাশিয়া-ক্যামেরুন, ১৯৯৪)।
সবচেয়ে বেশি হ্যাটট্রিক ২টি—স্যান্ডর ককসিস (হাঙ্গেরি, ১৯৫৪), জাঁ ফন্টেইন (ফ্রান্স, ১৯৫৮), জার্ড মুলার (জার্মানি, ১৯৭০) এবং গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা (আর্জেন্টিনা ১৯৯৪ ও ১৯৯৮)।
সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা—পেলে (ব্রাজিল, ১৭ বছর ২৩৯ দিন)।
সর্বকনিষ্ঠ হ্যাটট্রিক—পেলে (১৭ বছর ২৪৯ দিন, ব্রাজিল-সুইডেন, ১৯৫৮)।
সবচেয়ে বেশি বয়সী গোলদাতা—রজার মিলা (৪২ বছর ৩৯ দিন, ক্যামেরুন-রাশিয়া, ১৯৯৪)।
সবচেয়ে বেশি বয়সে হ্যাটট্রিক—তোরে কেলার (৩৩ বছর ১৫৯ দিন, সুইডেন-কিউবা, ১৯৩৮)।
সবচেয়ে দ্রুততম গোল—১১ সেকেন্ড; হাকান সুকুর (তুরস্ক-কোরিয়া, ২০০২)।
সবচেয়ে বেশি গোলের ম্যাচ—আর্জেন্টিনা ৭-৫ সুইজারল্যান্ড, ১৯৫৪।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচে গোল না খাওয়া গোলরক্ষক—১০ ম্যাচ, পিটার শিলটন (ইংল্যান্ড, ১৯৮২-১৯৯০) ও ফাবিয়েন বার্থেজ (১৯৯৮-২০০৬)।
সবচেয়ে বেশি সময় গোল না খাওয়া গোলরক্ষক—ওয়াল্টার জেঙ্গা, ৫১৭ মিনিট (ইতালি, ১৯৯০)।
সবচেয়ে বেশি গোল খাওয়া গোলরক্ষক—২৫ গোল, আন্তোনিও কারবাজাল (মেক্সিকো) ও মোহামেদ আল-দিয়াইয়া (সৌদি আরব)।
দুবার বিশ্বকাপ জেতা কোচ—ভিওরিও পোজ্জো (ইতালি, ১৯৩৪ ও ১৯৩৮)।
বিশ্বকাপে পাঁচটি ভিন্ন দেশের কোচ—বোরা মিলুটিনোভিচ (মেক্সিকো ১৯৮৬, কোস্টারিকা ১৯৯০, যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৪, নাইজেরিয়া ১৯৯৮, চীন ২০০২)।
সবচেয়ে বেশি বয়সী কোচ—সিজার মালদিনি (৭০ বছর ১৩১ দিন, প্যারাগুয়ে ২০০২)।
খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে টুর্নামেন্ট জয়—মারিও জাগালো ও ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার।
সবচেয়ে দ্রুত লালকার্ড—৫৬ সেকেন্ড, হোসে বাতিস্তা (উরুগুয়ে-স্কটল্যান্ড ১৯৮৬)।
বেঞ্চে থেকেও লাল কার্ড দেখা ফুটবলার—ক্লদিও ক্যানিজিয়া (আর্জেন্টিনা-সুইডেন, ২০০২)।
এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি দর্শক—১ লাখ ৯৯ হাজার ৮৫৪; মারাকানা, ব্রাজিল-উরুগুয়ে; ১৯৫০।
সবচেয়ে কম দর্শক—৩০০; রুমানিয়া-পেরু ১৯৩০।
collected by kazi ashraful islam
সবচেয়ে বেশি গোল—১৫, রোনালদো (ব্রাজিল)।
এক টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি গোল—১৩, জাঁ ফন্টেইন।
এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি গোল—৫, ওলেগ সালেঙ্কো (রাশিয়া-ক্যামেরুন, ১৯৯৪)।
সবচেয়ে বেশি হ্যাটট্রিক ২টি—স্যান্ডর ককসিস (হাঙ্গেরি, ১৯৫৪), জাঁ ফন্টেইন (ফ্রান্স, ১৯৫৮), জার্ড মুলার (জার্মানি, ১৯৭০) এবং গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা (আর্জেন্টিনা ১৯৯৪ ও ১৯৯৮)।
সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা—পেলে (ব্রাজিল, ১৭ বছর ২৩৯ দিন)।
সর্বকনিষ্ঠ হ্যাটট্রিক—পেলে (১৭ বছর ২৪৯ দিন, ব্রাজিল-সুইডেন, ১৯৫৮)।
সবচেয়ে বেশি বয়সী গোলদাতা—রজার মিলা (৪২ বছর ৩৯ দিন, ক্যামেরুন-রাশিয়া, ১৯৯৪)।
সবচেয়ে বেশি বয়সে হ্যাটট্রিক—তোরে কেলার (৩৩ বছর ১৫৯ দিন, সুইডেন-কিউবা, ১৯৩৮)।
সবচেয়ে দ্রুততম গোল—১১ সেকেন্ড; হাকান সুকুর (তুরস্ক-কোরিয়া, ২০০২)।
সবচেয়ে বেশি গোলের ম্যাচ—আর্জেন্টিনা ৭-৫ সুইজারল্যান্ড, ১৯৫৪।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচে গোল না খাওয়া গোলরক্ষক—১০ ম্যাচ, পিটার শিলটন (ইংল্যান্ড, ১৯৮২-১৯৯০) ও ফাবিয়েন বার্থেজ (১৯৯৮-২০০৬)।
সবচেয়ে বেশি সময় গোল না খাওয়া গোলরক্ষক—ওয়াল্টার জেঙ্গা, ৫১৭ মিনিট (ইতালি, ১৯৯০)।
সবচেয়ে বেশি গোল খাওয়া গোলরক্ষক—২৫ গোল, আন্তোনিও কারবাজাল (মেক্সিকো) ও মোহামেদ আল-দিয়াইয়া (সৌদি আরব)।
দুবার বিশ্বকাপ জেতা কোচ—ভিওরিও পোজ্জো (ইতালি, ১৯৩৪ ও ১৯৩৮)।
বিশ্বকাপে পাঁচটি ভিন্ন দেশের কোচ—বোরা মিলুটিনোভিচ (মেক্সিকো ১৯৮৬, কোস্টারিকা ১৯৯০, যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৪, নাইজেরিয়া ১৯৯৮, চীন ২০০২)।
সবচেয়ে বেশি বয়সী কোচ—সিজার মালদিনি (৭০ বছর ১৩১ দিন, প্যারাগুয়ে ২০০২)।
খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে টুর্নামেন্ট জয়—মারিও জাগালো ও ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার।
সবচেয়ে দ্রুত লালকার্ড—৫৬ সেকেন্ড, হোসে বাতিস্তা (উরুগুয়ে-স্কটল্যান্ড ১৯৮৬)।
বেঞ্চে থেকেও লাল কার্ড দেখা ফুটবলার—ক্লদিও ক্যানিজিয়া (আর্জেন্টিনা-সুইডেন, ২০০২)।
এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি দর্শক—১ লাখ ৯৯ হাজার ৮৫৪; মারাকানা, ব্রাজিল-উরুগুয়ে; ১৯৫০।
সবচেয়ে কম দর্শক—৩০০; রুমানিয়া-পেরু ১৯৩০।
collected by kazi ashraful islam
ঢাকা, শুক্রবার, ১১ জুন ২০১০, ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪১৭, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৩১
সেরাদের সেরা
দেবব্রত মুখোপাধ্যায় তারিখ: ১১-০৬-২০১০
জিনেদিন ইয়াজিদ জিদান (ফ্রান্স)
আলজেরিয়ার কোচ আবেদল্লাহিম কারমেলি নাকি তাঁকে দলে নিতে চাননি। বলেছিলেন, ‘এই মিডফিল্ডারটি খুব অলস’। আসুন, এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে মিডফিল্ডারটিকে আলজেরিয়া জাতীয় দলে না নেওয়ার জন্য আমরা সবাই কারমেলিকে প্রাণভরে ধন্যবাদ দিই। কারণ, কারমেলি এই সিদ্ধান্ত না নিলে হয়তো সর্বকালের সর্বসেরাদের একজন হয়ে ওঠা হতো না সেই মিডফিল্ডারের।
সেই ‘অলস’ মিডফিল্ডারটির নাম জিনেদিন ইয়াজিদ জিদান। প্লাতিনি-উত্তর ফরাসি ফুটবলের প্রাণভোমরা, ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে বিশ্ব মাতানো মিডফিল্ডার, ফ্রান্সের একমাত্র বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক জিদান।
জিদানের নাম উচ্চারিত হলেই এখন আমাদের মনে পড়ে যায় গত বিশ্বকাপ ফাইনালের সেই ‘ঢুস’-এর কথা। বিশ্বকাপ ইতিহাসে মাত্র চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে দুটি ফাইনালে গোল করার পরও জিদান আলোচনায় থাকলেন মার্কো মাতেরাজ্জির বুকে মাথা দিয়ে ঢুস মেরে। একটা লাল কার্ডে শেষ হয়ে গেল এক কিংবদন্তির বিশ্বকাপ।
কিন্তু জিদানের ফুটবল-জীবনটা এ রকম ধাক্কায় শেষ হওয়ার কথা ছিল না। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত ফরাসি দল কান ও বোর্দোর হয়ে খেলা জিদান প্রথম নজর কাড়েন জুভেন্টাসের হয়ে। সিরি ‘আ’তে নিজের প্রথম মৌসুমে মাত্র পাঁচটি গোল করলেও জাদুকরি মিডফিল্ডার হিসেবে নিজের জাত চিনিয়ে দিয়েছিলেন। বল নিয়ন্ত্রণ, ডিফেন্সকে হতভম্ব করে দিয়ে নির্ভুল পাসে স্ট্রাইকার খুঁজে পাওয়া—মোদ্দা কথায় মাঝমাঠে দাঁড়িয়ে খেলাটাই নিয়ন্ত্রণ করতে থাকা জিদান হয়ে উঠলেন ফুটবলের নতুন এক মাঝমাঠের সেনাপতি।
এই সেনাপতিকে বিশ্ব ভালোমতো চিনল এক বিশ্বকাপেই। ঘটনাটা ফ্রান্সেই ঘটল, ১৯৯৮ সালে। ফ্রান্স প্রথম তিনটি গ্রুপ ম্যাচ জিতে দ্বিতীয় পর্বে গেল; জিদান খুব আলোচনায় নেই। আলোচনায় এলেন সৌদি আরবের বিপক্ষে লাল কার্ড দেখে। আসলে আলোচনায় এলেন সেমিফাইনালে, ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে। গোল করেননি, কিন্তু ফ্রান্সের ২-১ গোলে জেতা এই ম্যাচে স্রেফ জাদু দেখালেন মাঠজুড়ে। গোল তৈরি করে দিলেন, মাঝমাঠের দখল হাতে (নাকি পায়ে?) রাখলেন, পুরো খেলার গতি বদলে দিলেন বারবার।
সেরাটা অবশ্য জমিয়ে রেখেছিলেন ফাইনালের জন্য। ফেবারিট ব্রাজিল টানা দ্বিতীয় শিরোপা জেতায় ফেবারিট হয়ে নেমেছিল ফাইনালে। কিন্তু মাথা দিয়ে দু দুটো গোল করে ব্রাজিলকে কাঁদালেন জিদান আর ফ্রান্সকে উপহার দিলেন প্রথম বিশ্বকাপ।
পরের বিশ্বকাপটা অবশ্য জিদানের জন্য হাহাকারের নাম হয়ে রইল। ইনজুরির কারণে গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচে মাঠেই নামতে পারলেন না। তৃতীয় ম্যাচে পুরো ফিট না থেকেও নেমেছিলেন। কিন্তু ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়া ঠেকাতে পারেননি।
এই আক্ষেপ মেটাতেই যেন এসেছিলেন জার্মানিতে। একের পর এক ম্যাচে একাই যেন বুক চিতিয়ে লড়লেন কোনো এক ফরাসি সেনাপতির মতো। দলকে তুললেন ফাইনালে। ২০ মিনিটেই গোল করে এগিয়ে দিলেন দলকে। এরপর সমতা ফেরাল ইতালি। ৯০ মিনিটে অবিশ্বাস্যভাবে জিদানের শট ঠেকিয়ে দিলেন বুফন।
তারপর যেন কী হয়ে গেল! অতিরিক্ত সময়ে মাতেরাজ্জিকে ঢুস মেরে মাঠের বাইরে চলে গেলেন জিদান। দূর থেকে চেয়ে দেখলেন পেনাল্টি শুট আউটে দলের পরাজয়। তার পরও জিতলেন ‘গোল্ডেন বল’।
তাতে কি ফরাসি কিংবদন্তির দুঃখ ঘুচল?
বিদ্যুত্গতির এক মেজর
ফেরেঙ্ক পুসকাস (হাঙ্গেরি)
হাঙ্গেরিতে কিসপেস্ট বলে একটা ফুটবল দল ছিল। ১৯৪৮ সালে এই দলটিকে হঠাৎ ‘দখল’ করে নেয় সে দেশের সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর ফুটবল দল যেহেতু, ফুটবলারদেরও সৈনিকসুলভ উপাধি থাকা চাই। দলের সবাইকে লেফটেন্যান্ট, সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট; বিভিন্ন পদ দিয়ে দেওয়া হলো। এক ফুটবলার পেলেন মেজর র্যাঙ্ক। কিন্তু ফুটবল-ভক্তরা তাঁকে শুধু মেজর বলে থামবে কেন? ভক্তরা প্রিয় ফুটবলারটির নাম করে দিল—গ্যালোপিং মেজর; মানে, বিদ্যুত্গতির মেজর! এই মেজরের নাম ফেরেঙ্ক পুসকাস। হাঙ্গেরির সর্বকালের সেরা তো বটেই, ফুটবল ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ফুটবলার।
হাঙ্গেরির জার্সি গায়ে ৮৫ ম্যাচে করেছেন ৮৪ গোল। হাঙ্গেরিয়ান ও স্প্যানিশ ক্লাবের হয়ে ৫২৯ ম্যাচে ৫১৪ গোলের অবিশ্বাস্য রেকর্ড পুসকাসের। রেকর্ডই বলে দেয় কেমন বিধ্বংসী এক স্ট্রাইকার ছিলেন পুসকাস।
অথচ চূড়ান্ত সাফল্যটা তাঁর ভাগ্যে জোটেনি। জিততে পারেননি বিশ্বকাপ। কেন, সেটা এখনো এক বিস্ময়। সেই বিস্ময়ের উত্তর হতে পারে একটাই—১৯৫৪-এর সেই বিশ্বকাপ ফাইনালে পুরোপুরি ফিট ছিলেন না পুসকাস।
সুইজারল্যান্ড বিশ্বকাপে হাঙ্গেরি খেলতে গিয়েছিল চার বছর অপরাজিত থাকার রেকর্ড সঙ্গী করে। দু বছর আগে তারা জিতেছিল অলিম্পিক সোনা। তার পরও পুসকাসের এই দলটি বিশ্বকাপ জিততে পারল না!
গ্রুপ পর্বে পশ্চিম জার্মানিকে ৮-৩ গোলে হারিয়েছিল হাঙ্গেরি। কিন্তু চড়া মূল্য দিতে হয়েছিল সে জন্য। ইনজুরিতে পড়েছিলেন পুসকাস। যে কারণে কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল খেলা হয়নি তাঁর। ফাইনালে অর্ধ-ফিট হয়েও মাঠে নেমেছিলেন পুসকাস। মিনিট আটেকের মধ্যে এক গোল করে, আরেক গোল করিয়ে পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে দলকে এগিয়ে নেন দুই গোলে। কিন্তু আর পারেননি। অসহায় চোখে দলের ২-৩ গোলের হার চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না তাঁর।
ফুটবলার হওয়াটাই ছিল পুসকাসের নিয়তি। বাবা ছিলেন হাঙ্গেরির কিসপেস্ট ক্লাবের কোচ, সে ক্লাবের হয়েই ফুটবলে হাতেখড়ি। পঞ্চাশের দশকে হিদেকুটি-জিবর-ককসিসদের সঙ্গে নিয়ে পুসকাসের গড়ে তোলা অসাধারণ দলটির নাম হয়ে যায় ‘ম্যাজিক্যাল ম্যাগিয়ার্স’।
সত্যিকারের সম্রাট
ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার (পশ্চিম জার্মানি)
ডাক বিভাগের এক কর্মীর ছেলের নাম রাখা হয়েছিল অস্ট্রিয়ান সম্রাট ফ্রাঞ্জ জোসেফের নামে। সম্রাটের নামে রাখলেই কি আর সে সম্রাট হয়! অনেক আকবর, বাবর, আলেক্সান্ডার হয়তো সম্রাট হতে পারেন না। কিন্তু এই ছেলেটি সত্যিই একদিন সম্রাট হয়ে উঠেছিল।
সেই সম্রাটের দাপট এতই বেশি ছিল যে লোকেরা তাকে ডাকা শুরু করল—হের কাইজার! মানে, জার্মানির সম্রাট। হ্যাঁ, ‘কাইজার’ ফ্রাঞ্জ অ্যান্টন বেকেনবাওয়ারের কথা বলা হচ্ছে। অনেকের মতেই জার্মানির তো বটেই, সর্বকালেরই অন্যতম সেরা ফুটবলার।
লিবারো পজিশনকে ভিন্ন এক মাত্রা দিয়েছিলেন তিনি। রক্ষণে প্রাচীর হয়ে থাকার পাশাপাশি দলের প্রয়োজনে হয়ে উঠতেন প্রকৃত আক্রমণভাগের খেলোয়াড়।
তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। ১৯৬৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারাতে না পারলেও ২০ বছরের সেই তরুণ বেকেনবাওয়ার নিজের জাত ঠিকই চিনিয়েছিলেন। ৪ গোল করে যুগ্মভাবে টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন এই ‘ডিফেন্ডার’। ১৯৭০-এ ইংল্যান্ডের কাছে এই হারের প্রতিশোধ নিলেও ইতালির বাধা টপকে ফাইনালে উঠতে পারেনি বেকেনবাওয়ারের দল। ‘গেম অব দ্য সেঞ্চুরি’ নামে খ্যাত ইতালির বিপক্ষে ৩-৪ ব্যবধানে হেরে যাওয়া সেই ম্যাচে কাঁধের হাড় স্থানচ্যুত হয়ে যাওয়ার পরও গলায় হাত ঝুলিয়ে খেলে গেছেন বেকেনবাওয়ার!
পরপর দুটি বিশ্বকাপের এই অতৃপ্তির হাহাকার ঘুচে যায় ১৯৭৪-এ। নিজ দেশের সেই টুর্নামেন্টে বেকেনবাওয়ারের দলকে রুখতে পারেনি কেউ।
ক্লাব ফুটবলে সাফল্যও কম নয়। বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে টানা তিনবার (১৯৭৪-৭৬) জিতেছেন ইউরোপিয়ান কাপ। ইউরোপিয়ান বর্ষসেরা ফুটবলার হয়েছেন দুবার (১৯৭২ ও ১৯৭৬)। খেলা ছাড়ার পর কোচ হিসেবেও পেয়েছেন চূড়ান্ত সাফল্য। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে শেষ বাধাটা টপকাতে না পারলেও ১৯৯০-এর বিশ্বকাপে তাঁর দল ঠিকই হাসে শেষ হাসি। অধিনায়ক ও কোচ দুই ভূমিকাতেই বিশ্বকাপ জেতার কীর্তি শুধু তাঁরই।
‘টোটাল ফুটবলার’
ইয়োহান ক্রুইফ (হল্যান্ড)
ফুটবল খেলাটা কীভাবে হয়? উত্তর সোজা—এক গোলরক্ষক থাকেন, কয়েকজন ডিফেন্ডার, কয়েকজন মিডফিল্ডার আর কয়েকজন আক্রমণভাগের খেলোয়াড়। এঁরা সবাই মিলে নিজেরা গোল না খেয়ে অন্যদের গোল দিতে চেষ্টা করেন।
এই সোজা ব্যাপারটাকে বদলে দিতে চাইলেন দুজন মানুষ। তাঁরা বললেন, গোলরক্ষক ঠিক আছে। কিন্তু ডিফেন্ডার, মিডফিল্ডার, স্ট্রাইকার বলে আলাদা কিছু আর থাকবে না। যে যখন সুযোগ পাবে, তখন আক্রমণে উঠবে। একজন আক্রমণে উঠলে তাঁর জায়গা নেবে অন্য কেউ। মানে, সবাইকে সবকিছু পারতে হবে। এই ফুটবলের নাম দেওয়া হলো—টোটাল ফুটবল। ধারণাটা পৃথিবীর সামনে নিয়ে এলেন কোচ রাইনাস মিশেলস। আর এই ফুটবলকে মাঠে বাস্তবায়ন করে ছাড়লেন একজন ‘টোটাল ফুটবলার’—হেনডরিক ইয়োহানেস ক্রুইফ বা ইয়োহান ক্রুইফ।
একেবারে বাল্যকালে মিশেলসের সঙ্গে কাজ শুরু করেছিলেন ক্রুইফ। শুরুর গল্পটা মন্দ না। ক্রুইফের বয়স যখন ১২, বাবার মৃত্যুতে দরিদ্র পরিবারটি আরও বিপাকে পড়ে গিয়েছিল। মা আমস্টারডামের ক্লাব আয়াক্সের স্টেডিয়াম ও ট্রেনিং গ্রাউন্ডে কাজ করে সংসার চালাতেন।
মায়ের সঙ্গে স্টেডিয়ামে ঘুরতে ঘুরতেই ফুটবলের প্রেমে পড়ে যান ক্রুইফ। ওখানেই চোখে পড়েন আয়াক্স কোচ রাইনাস মিশেলসের। এই সময়টাই বদলে দিল পরবর্তীকালের ফুটবল দুনিয়াকে। সামনে নিয়ে এল ‘টোটাল ফুটবলার’ ক্রুইফকে।
টোটাল ফুটবলে কারও নির্দিষ্ট কোনো পজিশন না থাকলেও, ডাচ দলের প্রাণভোমরা ছিলেন ক্রুইফ। বল পায়ে এমন এক টার্ন আবিষ্কার করেছিলেন, যাতে ডিফেন্ডার কিছু বুঝে ওঠার আগেই পেছনে পড়ে যেত। ফুটবলে যেটি ‘ক্রুইফস টার্ন’ বলে বিখ্যাত হয়ে আছে।
তিনটি ইউরোপিয়ান কাপ, ৯টি ডাচ চ্যাম্পিয়নশিপ, একটি স্প্যানিশ লিগ শিরোপা, ছয়টি ডাচ কাপ—সর্বোপরি তিনবার ইউরোপ-সেরা ফুটবলারের পুরস্কারই ক্রুইফের সামর্থ্যের কথা বলবে। কিন্তু বড় একটা অতৃপ্তিকে সঙ্গী করেই ক্যারিয়ার শেষ করতে হয়েছে তাঁকে। জাতীয় দলের হয়ে কিছু জেতা হয়নি। না ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ, না বিশ্বকাপ।
অথচ ১৯৭৪-এর বিশ্বকাপটি হল্যান্ডের না জেতার কোনো কারণ ছিল না। অভূতপূর্ব টোটাল ফুটবলের বিস্ময়কর প্রদর্শনীতে ক্রুইফের দল বিমোহিত করে রেখেছিল বিশ্বকে। কিন্তু পশ্চিম জার্মানির শেষ বাধাটা টপকাতে পারেনি।
বিশ্বকাপ জেতা হয়নি বলে ক্রুইফের মন খারাপ করার কিছু নেই। তিনবার ব্যালন ডি’অর জেতা এই ফুটবলার ফুটবলকে যা দিয়ে গেছেন, তাতে বিশ্বকাপই বরং তাঁর ছোঁয়া না পেয়ে লজ্জা পেতে পারে।
একজন বোমারু
জার্ড মুলার (পশ্চিম জার্মানি)
লোকেরা তাঁকে ‘বম্বার ডের ন্যাশন’ বলে ডাকত; মানে ‘জাতির বোম্বার’। কেন! তিনি কি যুদ্ধ-টুদ্ধ করে বেড়াতেন নাকি! বোমা ফেলতেন আকাশ থেকে?
যুদ্ধ করতেন না। তবে বোমা ফেলতেন। বোমাটা পড়ত বিপক্ষের গোলপোস্টে। জাতীয় দল হোক আর ক্লাব; তাঁর মাঠে নামা মানেই গোল আর গোল। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ৬২ ম্যাচে ৬৮ গোল করেছেন, বুন্দেসলিগায় ৪২৭ ম্যাচে ৩৬৫ গোল! ফুটবল ক্যারিয়ার-জুড়ে গোলের এই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে যাওয়া মানুষটি হলেন কিংবদন্তি ফুটবলার জেরহার্ড মুলার, সংক্ষেপে জার্ড মুলার।
অথচ মুলারের এই বিস্ময়কর প্রতিভা পৃথিবী হয়তো দেখতেই পেত না। অন্তত মুলার যদি কোচের কথা শোনা সুবোধ বালক হতেন, তাঁর তাহলে ফুটবল খেলাই হতো না। শহরের ক্লাব টিএসভি নর্ডলিনজেনের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন মাত্র ৯ বছর বয়সে। কিন্তু শুরুতেই কোচ তাঁর খেলা দেখে বলে দিলেন, ‘ফুটবলে তুমি বেশি দূর যেতে পারবে না। বরং অন্য কিছু চেষ্টা করো।’ ভাগ্যিস, মুলার কথাটা শোনেননি!
কথা শোনেননি বলে ৩২ বছর বিশ্বকাপ ফুটবলের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে ছিলেন মুলার। তাঁর সর্বোচ্চ গোলের (১৪) রেকর্ডটি ২০০৬ বিশ্বকাপে ভেঙে দিয়েছেন রোনালদো। তাতে ফুটবল-ইতিহাস থেকে সহজাত এই স্ট্রাইকারের নাম মুছে যাওয়ার কোনো কারণ ঘটেনি।
আকৃতিতে ছিলেন ছোটখাটো, কিন্তু দারুণ শক্তিশালী। বিশ্বকাপে অভিষেক ১৯৭০-এ। দু-দুটো হ্যাটট্রিকসহ সেবার ১০ গোল করে গোল্ডেন বুট জিতে নেন ‘বোম্বার’। ১৯৭০-এ না পারলেও ১৯৭৪-এ ঠিকই বিশ্বকাপ জিতে নেয় পশ্চিম জার্মানি। মুলার সেবার ‘মাত্র’ ৪ গোল করলেও এর মধ্যেই ছিল ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোলটি। হল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালের জয়সূচক গোলটি যে তাঁরই করা।
মুলার যতটা পশ্চিম জার্মানির, ততটাই বায়ার্ন মিউনিখের। ১৯৬৪ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত বায়ার্নে ১৫ বছরের ক্যারিয়ারের শেষ মৌসুমটা বাদ দিলে প্রতিবারই সর্বোচ্চ গোলদাতা মুলার। এর মধ্যে বুন্দেসলিগার সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন সাতবার।
পাখিদের সঙ্গী
গারিঞ্চা (ব্রাজিল)
‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’ ধরনের সংসার। সংসারের একমাত্র আয়ক্ষম মানুষটি সর্বক্ষণ মদে চুর হয়ে পড়ে থাকেন। ফলে নুনও আসে না, পান্তাও তৈরি হয় না।
ভাত-কাপড়ের জন্য লড়তে থাকা এমন হতদরিদ্র পরিবারে জন্মাল ‘বিকলাঙ্গ’ একটি ছেলে। যার মেরুরজ্জুতে জন্মগত ত্রুটি, ডান পা ভেতরের দিকে বাঁকানো, ডান পায়ের চেয়ে বাঁ পা আবার ৬ সেন্টিমিটার ছোট। এমন ছেলের ভবিষ্যৎ কী? রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষে করে বেড়ানো!
হায়রে অনুমান! এই তথাকথিত বিকলাঙ্গ ছেলেটি তার বিকলাঙ্গ বাঁ পা দিয়ে ভবিষ্যতে শাসন করে চলল ফুটবল-দুনিয়াকে। সেই শাসনের এমনই দাপট যে সর্বকালের সেরা ফুটবলার পেলের ছায়া অতিক্রম করেও তিনি হয়ে উঠলেন একজন মহানায়ক—ম্যানুয়েল ফ্রাঞ্চিসকো দস সান্তোস। চিনতে পারলেন না? চিনবেন তাঁকে ‘গারিঞ্চা’ নামে।
ম্যানুয়েল দস সান্টোস ফ্রান্সিসকোকে এই ‘গারিঞ্চা’ নামটি দেন তাঁরই ১২ সহোদরের একজন। ভালোবেসে নয়, ঝগড়া করে। ব্রাজিলের ওই অঞ্চলের কুিসত-দর্শন এক পাখির নামে খেপাতে শুরু করেন তাঁকে। ১৯৫৩তে বোটাফোগোর হয়ে ক্যারিয়ার অভিষেকেই হ্যাটট্রিক করলে আরেকটি নাম পেয়ে যান তিনি—দ্য লিটল বার্ড। ভক্তদের এই নামটি অবশ্য ভালোবেসেই দেওয়া। ১৯৫৮ বিশ্বকাপে প্রথম দু ম্যাচে তাঁকে দলে রাখেননি কোচ। সতীর্থদের অনুরোধে তৃতীয় ম্যাচে সুযোগ পান খেলার। এরপর পেলের সঙ্গে জুটি বেঁধে বিশ্বকাপ জয়ে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আর আহত পেলের অনুপস্থিতিতে ১৯৬২-এর বিশ্বকাপ জয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল তো তাঁরই। ১৯৬৬-এর আসরে খেললেও ব্রাজিলকে নিয়ে প্রথম রাউন্ডের বাধা পেরোতে পারেননি। হাঙ্গেরির বিপক্ষে তিন গোলে হেরে সেই বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেল ব্রাজিলের। জাতীয় দলের হয়ে গারিঞ্চার শেষ ম্যাচও এটিই। জেনে অবাক হবেন, ৬০ ম্যাচের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ওই একটি মাত্র ম্যাচেই পরাজিত দলে ছিলেন তিনি!
জাতীয় দলের হয়ে খেলা ৬০ ম্যাচে ১২টি গোল করেছেন। এই পরিসংখ্যান দিয়ে গারিঞ্চার বিস্ময়কর ক্ষমতার কিছুই অনুমান করা যাবে না। তাঁর ক্ষমতাটা বুঝতে হলে, এটুকু জানাই যথেষ্ট যে অনেক ফুটবল-বোদ্ধা গারিঞ্চাকে পেলের সমমানের ফুটবলার মনে করেন! তাঁর ‘বানানা কিক’ (বাঁকানো শট) ও ‘ফলিং লিফ শট’ (ঝরাপাতা শট—গোলের দিকে যাওয়ার পথে যা গতি পরিবর্তন করত দুবার) তো ফুটবল-রূপকথায় চিরন্তন জায়গা করে দিয়েছে তাঁকে।
খেলা ছাড়ার পর গারিঞ্চা ডুবে যান বেহিসেবি জীবনে। অ্যালকোহলে ডুবে গিয়ে তাঁর বেপরোয়া জীবনের ইতি ঘটে মাত্র ৪৯ বছর বয়সে। ব্রাজিলিয়ানদের ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ গারিঞ্চার সমাধিফলকে এই ফুটবল কবিকে নিয়ে লেখা আছে ছোট্ট দুটো লাইন, ‘সে ছিল মিষ্টি এক শিশু, যে কথা বলত পাখিদের সঙ্গে।’
সেরা ইতালীয়!
জিওসেপ্পে মিয়াজ্জা (ইতালি)
১৯২৭ সালে ইন্টার মিলানের মূল দলে ১৭ বছর বয়সী একটি ছেলেকে দেখে চমকে উঠেছিলেন সিনিয়র খেলোয়াড় লিওপোল্ডো কোন্তি, ‘এই ইল বাল্লিয়া বড়দের দলে কী করে!’ সেই থেকে খেলোয়াড়টির নাম হয়ে গেল—ইল বাল্লিয়া, খুদে শিশু।
কিন্তু কাজের বেলায় তিনি ‘শিশু’ নন; সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার জিওসেপ্পে পেপিনো মিয়াজ্জা। এই মিয়াজ্জাকে ছাড়া ইতালির প্রথম দুটি বিশ্বকাপ জয়ের গল্পই লেখা হয় না। শুধু ইতালির নয়, ফুটবল ইতিহাসের সর্বকালের সেরাদের তালিকায়ও নিঃসন্দেহে চলে আসবেন এই ফরোয়ার্ড।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বাবাকে হারানো মিয়াজ্জার জন্ম ১৯১০ সালে, মিলানে। ইন্টার মিলানের হয়ে প্রথম বিভাগে অভিষেক ১৭ বছর বয়সে। ১৯২৯-৩০ মৌসুমে চালু হয় সিরি ‘এ’। ৩৩ ম্যাচে ৩১ গোল করে মিয়াজ্জা সে মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতা। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে অভিষেক সে মৌসুমেই। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ৪-২ গোলে জেতা ম্যাচে জোড়া গোল মিয়াজ্জার। কদিন পর হাঙ্গেরির বিপক্ষে করেন হ্যাটট্রিক। কি ক্লাব, কি জাতীয় দল—গোলমেশিন মিয়াজ্জার গোল পেতে সমস্যা হয়নি কোথাও।
অথচ কী আশ্চর্য! ১৯৩৪-এর বিশ্বকাপে কোচ ভিত্তরিও পোজ্জো তাঁর পজিশনই পাল্টে ফেললেন। সেন্টার ফরোয়ার্ড থেকে সরিয়ে নিয়ে এলেন ইনসাইড ফরোয়ার্ডে। দেশজুড়ে তাই উঠল বিতর্কের ঝড়। নিজ সিদ্ধান্তে কিন্তু অটল
রইলেন পোজ্জো। আর কী চমত্কারভাবেই না সেটা
কাজে লাগালেন মিয়াজ্জা। মনোযোগ দিলেন গোল
করার চেয়ে করানোতে। দ্বিতীয় রাউন্ডে স্পেনের বিপক্ষে
জয়সূচক গোলটি করেছিলেন। ইনজুরি নিয়ে ফাইনাল খেলতে নেমেও ভূমিকা রাখলেন দলের বিশ্বজয়ে।
তাঁর ক্রস থেকেই জয়সূচক গোলটি করেন শিয়াভিনো।
চার বছর পর অধিনায়ক হিসেবে ফ্রান্স বিশ্বকাপে যান।
এবারও রাখেন উজ্জ্বল। নিজে করেন এক গোল;
ফাইনালের দুটিসহ বানিয়ে দিলেন আরও
অনেকগুলো।
‘বড়’ ফুটবলার
রোনালদো (ব্রাজিল)
১৯৯৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিল দলের সঙ্গে ১৭ বছর বয়সী ‘বাচ্চা’ একটা ছেলে এসেছিল যুক্তরাষ্ট্রে। ছেলেটি মাঠে নামেনি। ড্রেসিং রুমে খেলোয়াড়েরা তাঁকে ডাকত ‘রোনালদিনহো’ বলে; মানে ছোট্ট রোনালদো। ‘ছোট্ট’ বলার কারণ, দলে তখন রোনালদো রদ্রিগেজ নামে সিনিয়র এক খেলোয়াড় ছিলেন।
দু বছর পর আটলান্টা অলিম্পিকে সেই ‘বাচ্চা’ ছেলেটি মাঠে নামল হলুদ জার্সি পরে। কিন্তু এবারও তাঁর শার্টের পেছনে লেখা—রোনালদিনহো। কারণ, এবার দলে আছেন রোনালদো গুইয়ারো! ছেলেটি কি তাহলে ছোটই হয়ে থাকবে! ‘বড়’ হবে না?
১৯৯৮ ফ্রান্স বিশ্বকাপে এই দুনিয়াকে সাক্ষী রেখে ‘বড়’ হয়ে গেলেন রোনালদো লুইস নাজারিও ডি লিমা। এতটাই বড় হয়ে গেলেন যে কয়েক বছরের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গেল, ব্রাজিলের জার্সি গায়ে এসে গেছেন আরেক বিস্ময়।
রোনালদোর বিশ্বজয়টা শুরু ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে। পিএসভি আইন্দহোফেন থেকে স্যার ববি রবসনের আগ্রহে বার্সায় এসে লা লিগায় ওই মৌসুমে ৩৪ গোল করলেন, সব মিলিয়ে মৌসুমে ৪৭ গোল। এই দুর্দান্ত কীর্তি দিয়ে ২০ বছর বয়সেই জিতে ফেলেন ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের খেতাব ।
ওই শুরু, এর পর থেকে রোনালদো মানেই গোল আর গোল। এক দশকেরও বেশি বিশ্বের এক নম্বর স্ট্রাইকার হয়ে ছিলেন। দুর্দান্ত গতি আর শরীরের ঝাঁকুনিতে ছিটকে ফেলতেন ডিফেন্ডারকে। গোল করাটা ছিল খাওয়া-ঘুমানোর মতো অভ্যাসের ব্যাপার। ক্লাব পারফরম্যান্সটা দেখুন—৫০১ ম্যাচে ৩৪৭ গোল। শুধু স্প্যানিশ দুই ক্লাব বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের হয়েই করেছেন এর ১৫১টি!
পুরস্কারও পেয়েছেন তিনবার ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতিতে। ১৯৯৬-১৯৯৭ টানা দু বছর, এর পর আবার ২০০২ সালে। ১৯৯৭ ও ২০০২ সালে জিতেছেন ইউরোপ-সেরার ব্যালন ডি’অর। ব্রাজিলের জার্সি গায়েও একই রকম দুর্বার। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে ৪টি গোল করে, তিনটি গোল করিয়ে ব্রাজিলকে ফাইনালে তুললেন। দুর্ভাগ্য বয়ে আনল ফাইনালের দিন রহস্যময় এক অসুস্থতা। মাঠে নামলেও নিজের ছায়া হয়ে থাকলেন, দলকে বিশ্বকাপ জেতানোও হলো না। দুঃখটা ঘোচালেন ২০০২ বিশ্বকাপে। আট গোল করে ব্রাজিলকে উপহার দিলেন ‘পেন্টা’—পঞ্চম বিশ্বকাপ।
বিশ্বকাপে ১২ গোল নিয়ে গিয়েছিলেন ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপে। জাপানের বিপক্ষে দুই গোল করে ছুঁয়ে ফেললেন জার্ড মুলারকে। আর ঘানার বিপক্ষে এক গোলে হয়ে গেলেন বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্কোরার। ‘দ্য ফেনোমেনন’ নামটা তো আর এমনিতেই হয়নি! প্রিন্টShareThis পাঠকের মন্তব্য
আপনার মতামত দিন
colleted by
kazi ashraful islam
সেরাদের সেরা
দেবব্রত মুখোপাধ্যায় তারিখ: ১১-০৬-২০১০
জিনেদিন ইয়াজিদ জিদান (ফ্রান্স)
আলজেরিয়ার কোচ আবেদল্লাহিম কারমেলি নাকি তাঁকে দলে নিতে চাননি। বলেছিলেন, ‘এই মিডফিল্ডারটি খুব অলস’। আসুন, এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে মিডফিল্ডারটিকে আলজেরিয়া জাতীয় দলে না নেওয়ার জন্য আমরা সবাই কারমেলিকে প্রাণভরে ধন্যবাদ দিই। কারণ, কারমেলি এই সিদ্ধান্ত না নিলে হয়তো সর্বকালের সর্বসেরাদের একজন হয়ে ওঠা হতো না সেই মিডফিল্ডারের।
সেই ‘অলস’ মিডফিল্ডারটির নাম জিনেদিন ইয়াজিদ জিদান। প্লাতিনি-উত্তর ফরাসি ফুটবলের প্রাণভোমরা, ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে বিশ্ব মাতানো মিডফিল্ডার, ফ্রান্সের একমাত্র বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক জিদান।
জিদানের নাম উচ্চারিত হলেই এখন আমাদের মনে পড়ে যায় গত বিশ্বকাপ ফাইনালের সেই ‘ঢুস’-এর কথা। বিশ্বকাপ ইতিহাসে মাত্র চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে দুটি ফাইনালে গোল করার পরও জিদান আলোচনায় থাকলেন মার্কো মাতেরাজ্জির বুকে মাথা দিয়ে ঢুস মেরে। একটা লাল কার্ডে শেষ হয়ে গেল এক কিংবদন্তির বিশ্বকাপ।
কিন্তু জিদানের ফুটবল-জীবনটা এ রকম ধাক্কায় শেষ হওয়ার কথা ছিল না। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত ফরাসি দল কান ও বোর্দোর হয়ে খেলা জিদান প্রথম নজর কাড়েন জুভেন্টাসের হয়ে। সিরি ‘আ’তে নিজের প্রথম মৌসুমে মাত্র পাঁচটি গোল করলেও জাদুকরি মিডফিল্ডার হিসেবে নিজের জাত চিনিয়ে দিয়েছিলেন। বল নিয়ন্ত্রণ, ডিফেন্সকে হতভম্ব করে দিয়ে নির্ভুল পাসে স্ট্রাইকার খুঁজে পাওয়া—মোদ্দা কথায় মাঝমাঠে দাঁড়িয়ে খেলাটাই নিয়ন্ত্রণ করতে থাকা জিদান হয়ে উঠলেন ফুটবলের নতুন এক মাঝমাঠের সেনাপতি।
এই সেনাপতিকে বিশ্ব ভালোমতো চিনল এক বিশ্বকাপেই। ঘটনাটা ফ্রান্সেই ঘটল, ১৯৯৮ সালে। ফ্রান্স প্রথম তিনটি গ্রুপ ম্যাচ জিতে দ্বিতীয় পর্বে গেল; জিদান খুব আলোচনায় নেই। আলোচনায় এলেন সৌদি আরবের বিপক্ষে লাল কার্ড দেখে। আসলে আলোচনায় এলেন সেমিফাইনালে, ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে। গোল করেননি, কিন্তু ফ্রান্সের ২-১ গোলে জেতা এই ম্যাচে স্রেফ জাদু দেখালেন মাঠজুড়ে। গোল তৈরি করে দিলেন, মাঝমাঠের দখল হাতে (নাকি পায়ে?) রাখলেন, পুরো খেলার গতি বদলে দিলেন বারবার।
সেরাটা অবশ্য জমিয়ে রেখেছিলেন ফাইনালের জন্য। ফেবারিট ব্রাজিল টানা দ্বিতীয় শিরোপা জেতায় ফেবারিট হয়ে নেমেছিল ফাইনালে। কিন্তু মাথা দিয়ে দু দুটো গোল করে ব্রাজিলকে কাঁদালেন জিদান আর ফ্রান্সকে উপহার দিলেন প্রথম বিশ্বকাপ।
পরের বিশ্বকাপটা অবশ্য জিদানের জন্য হাহাকারের নাম হয়ে রইল। ইনজুরির কারণে গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচে মাঠেই নামতে পারলেন না। তৃতীয় ম্যাচে পুরো ফিট না থেকেও নেমেছিলেন। কিন্তু ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়া ঠেকাতে পারেননি।
এই আক্ষেপ মেটাতেই যেন এসেছিলেন জার্মানিতে। একের পর এক ম্যাচে একাই যেন বুক চিতিয়ে লড়লেন কোনো এক ফরাসি সেনাপতির মতো। দলকে তুললেন ফাইনালে। ২০ মিনিটেই গোল করে এগিয়ে দিলেন দলকে। এরপর সমতা ফেরাল ইতালি। ৯০ মিনিটে অবিশ্বাস্যভাবে জিদানের শট ঠেকিয়ে দিলেন বুফন।
তারপর যেন কী হয়ে গেল! অতিরিক্ত সময়ে মাতেরাজ্জিকে ঢুস মেরে মাঠের বাইরে চলে গেলেন জিদান। দূর থেকে চেয়ে দেখলেন পেনাল্টি শুট আউটে দলের পরাজয়। তার পরও জিতলেন ‘গোল্ডেন বল’।
তাতে কি ফরাসি কিংবদন্তির দুঃখ ঘুচল?
বিদ্যুত্গতির এক মেজর
ফেরেঙ্ক পুসকাস (হাঙ্গেরি)
হাঙ্গেরিতে কিসপেস্ট বলে একটা ফুটবল দল ছিল। ১৯৪৮ সালে এই দলটিকে হঠাৎ ‘দখল’ করে নেয় সে দেশের সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর ফুটবল দল যেহেতু, ফুটবলারদেরও সৈনিকসুলভ উপাধি থাকা চাই। দলের সবাইকে লেফটেন্যান্ট, সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট; বিভিন্ন পদ দিয়ে দেওয়া হলো। এক ফুটবলার পেলেন মেজর র্যাঙ্ক। কিন্তু ফুটবল-ভক্তরা তাঁকে শুধু মেজর বলে থামবে কেন? ভক্তরা প্রিয় ফুটবলারটির নাম করে দিল—গ্যালোপিং মেজর; মানে, বিদ্যুত্গতির মেজর! এই মেজরের নাম ফেরেঙ্ক পুসকাস। হাঙ্গেরির সর্বকালের সেরা তো বটেই, ফুটবল ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ফুটবলার।
হাঙ্গেরির জার্সি গায়ে ৮৫ ম্যাচে করেছেন ৮৪ গোল। হাঙ্গেরিয়ান ও স্প্যানিশ ক্লাবের হয়ে ৫২৯ ম্যাচে ৫১৪ গোলের অবিশ্বাস্য রেকর্ড পুসকাসের। রেকর্ডই বলে দেয় কেমন বিধ্বংসী এক স্ট্রাইকার ছিলেন পুসকাস।
অথচ চূড়ান্ত সাফল্যটা তাঁর ভাগ্যে জোটেনি। জিততে পারেননি বিশ্বকাপ। কেন, সেটা এখনো এক বিস্ময়। সেই বিস্ময়ের উত্তর হতে পারে একটাই—১৯৫৪-এর সেই বিশ্বকাপ ফাইনালে পুরোপুরি ফিট ছিলেন না পুসকাস।
সুইজারল্যান্ড বিশ্বকাপে হাঙ্গেরি খেলতে গিয়েছিল চার বছর অপরাজিত থাকার রেকর্ড সঙ্গী করে। দু বছর আগে তারা জিতেছিল অলিম্পিক সোনা। তার পরও পুসকাসের এই দলটি বিশ্বকাপ জিততে পারল না!
গ্রুপ পর্বে পশ্চিম জার্মানিকে ৮-৩ গোলে হারিয়েছিল হাঙ্গেরি। কিন্তু চড়া মূল্য দিতে হয়েছিল সে জন্য। ইনজুরিতে পড়েছিলেন পুসকাস। যে কারণে কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল খেলা হয়নি তাঁর। ফাইনালে অর্ধ-ফিট হয়েও মাঠে নেমেছিলেন পুসকাস। মিনিট আটেকের মধ্যে এক গোল করে, আরেক গোল করিয়ে পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে দলকে এগিয়ে নেন দুই গোলে। কিন্তু আর পারেননি। অসহায় চোখে দলের ২-৩ গোলের হার চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না তাঁর।
ফুটবলার হওয়াটাই ছিল পুসকাসের নিয়তি। বাবা ছিলেন হাঙ্গেরির কিসপেস্ট ক্লাবের কোচ, সে ক্লাবের হয়েই ফুটবলে হাতেখড়ি। পঞ্চাশের দশকে হিদেকুটি-জিবর-ককসিসদের সঙ্গে নিয়ে পুসকাসের গড়ে তোলা অসাধারণ দলটির নাম হয়ে যায় ‘ম্যাজিক্যাল ম্যাগিয়ার্স’।
সত্যিকারের সম্রাট
ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার (পশ্চিম জার্মানি)
ডাক বিভাগের এক কর্মীর ছেলের নাম রাখা হয়েছিল অস্ট্রিয়ান সম্রাট ফ্রাঞ্জ জোসেফের নামে। সম্রাটের নামে রাখলেই কি আর সে সম্রাট হয়! অনেক আকবর, বাবর, আলেক্সান্ডার হয়তো সম্রাট হতে পারেন না। কিন্তু এই ছেলেটি সত্যিই একদিন সম্রাট হয়ে উঠেছিল।
সেই সম্রাটের দাপট এতই বেশি ছিল যে লোকেরা তাকে ডাকা শুরু করল—হের কাইজার! মানে, জার্মানির সম্রাট। হ্যাঁ, ‘কাইজার’ ফ্রাঞ্জ অ্যান্টন বেকেনবাওয়ারের কথা বলা হচ্ছে। অনেকের মতেই জার্মানির তো বটেই, সর্বকালেরই অন্যতম সেরা ফুটবলার।
লিবারো পজিশনকে ভিন্ন এক মাত্রা দিয়েছিলেন তিনি। রক্ষণে প্রাচীর হয়ে থাকার পাশাপাশি দলের প্রয়োজনে হয়ে উঠতেন প্রকৃত আক্রমণভাগের খেলোয়াড়।
তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। ১৯৬৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারাতে না পারলেও ২০ বছরের সেই তরুণ বেকেনবাওয়ার নিজের জাত ঠিকই চিনিয়েছিলেন। ৪ গোল করে যুগ্মভাবে টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন এই ‘ডিফেন্ডার’। ১৯৭০-এ ইংল্যান্ডের কাছে এই হারের প্রতিশোধ নিলেও ইতালির বাধা টপকে ফাইনালে উঠতে পারেনি বেকেনবাওয়ারের দল। ‘গেম অব দ্য সেঞ্চুরি’ নামে খ্যাত ইতালির বিপক্ষে ৩-৪ ব্যবধানে হেরে যাওয়া সেই ম্যাচে কাঁধের হাড় স্থানচ্যুত হয়ে যাওয়ার পরও গলায় হাত ঝুলিয়ে খেলে গেছেন বেকেনবাওয়ার!
পরপর দুটি বিশ্বকাপের এই অতৃপ্তির হাহাকার ঘুচে যায় ১৯৭৪-এ। নিজ দেশের সেই টুর্নামেন্টে বেকেনবাওয়ারের দলকে রুখতে পারেনি কেউ।
ক্লাব ফুটবলে সাফল্যও কম নয়। বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে টানা তিনবার (১৯৭৪-৭৬) জিতেছেন ইউরোপিয়ান কাপ। ইউরোপিয়ান বর্ষসেরা ফুটবলার হয়েছেন দুবার (১৯৭২ ও ১৯৭৬)। খেলা ছাড়ার পর কোচ হিসেবেও পেয়েছেন চূড়ান্ত সাফল্য। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে শেষ বাধাটা টপকাতে না পারলেও ১৯৯০-এর বিশ্বকাপে তাঁর দল ঠিকই হাসে শেষ হাসি। অধিনায়ক ও কোচ দুই ভূমিকাতেই বিশ্বকাপ জেতার কীর্তি শুধু তাঁরই।
‘টোটাল ফুটবলার’
ইয়োহান ক্রুইফ (হল্যান্ড)
ফুটবল খেলাটা কীভাবে হয়? উত্তর সোজা—এক গোলরক্ষক থাকেন, কয়েকজন ডিফেন্ডার, কয়েকজন মিডফিল্ডার আর কয়েকজন আক্রমণভাগের খেলোয়াড়। এঁরা সবাই মিলে নিজেরা গোল না খেয়ে অন্যদের গোল দিতে চেষ্টা করেন।
এই সোজা ব্যাপারটাকে বদলে দিতে চাইলেন দুজন মানুষ। তাঁরা বললেন, গোলরক্ষক ঠিক আছে। কিন্তু ডিফেন্ডার, মিডফিল্ডার, স্ট্রাইকার বলে আলাদা কিছু আর থাকবে না। যে যখন সুযোগ পাবে, তখন আক্রমণে উঠবে। একজন আক্রমণে উঠলে তাঁর জায়গা নেবে অন্য কেউ। মানে, সবাইকে সবকিছু পারতে হবে। এই ফুটবলের নাম দেওয়া হলো—টোটাল ফুটবল। ধারণাটা পৃথিবীর সামনে নিয়ে এলেন কোচ রাইনাস মিশেলস। আর এই ফুটবলকে মাঠে বাস্তবায়ন করে ছাড়লেন একজন ‘টোটাল ফুটবলার’—হেনডরিক ইয়োহানেস ক্রুইফ বা ইয়োহান ক্রুইফ।
একেবারে বাল্যকালে মিশেলসের সঙ্গে কাজ শুরু করেছিলেন ক্রুইফ। শুরুর গল্পটা মন্দ না। ক্রুইফের বয়স যখন ১২, বাবার মৃত্যুতে দরিদ্র পরিবারটি আরও বিপাকে পড়ে গিয়েছিল। মা আমস্টারডামের ক্লাব আয়াক্সের স্টেডিয়াম ও ট্রেনিং গ্রাউন্ডে কাজ করে সংসার চালাতেন।
মায়ের সঙ্গে স্টেডিয়ামে ঘুরতে ঘুরতেই ফুটবলের প্রেমে পড়ে যান ক্রুইফ। ওখানেই চোখে পড়েন আয়াক্স কোচ রাইনাস মিশেলসের। এই সময়টাই বদলে দিল পরবর্তীকালের ফুটবল দুনিয়াকে। সামনে নিয়ে এল ‘টোটাল ফুটবলার’ ক্রুইফকে।
টোটাল ফুটবলে কারও নির্দিষ্ট কোনো পজিশন না থাকলেও, ডাচ দলের প্রাণভোমরা ছিলেন ক্রুইফ। বল পায়ে এমন এক টার্ন আবিষ্কার করেছিলেন, যাতে ডিফেন্ডার কিছু বুঝে ওঠার আগেই পেছনে পড়ে যেত। ফুটবলে যেটি ‘ক্রুইফস টার্ন’ বলে বিখ্যাত হয়ে আছে।
তিনটি ইউরোপিয়ান কাপ, ৯টি ডাচ চ্যাম্পিয়নশিপ, একটি স্প্যানিশ লিগ শিরোপা, ছয়টি ডাচ কাপ—সর্বোপরি তিনবার ইউরোপ-সেরা ফুটবলারের পুরস্কারই ক্রুইফের সামর্থ্যের কথা বলবে। কিন্তু বড় একটা অতৃপ্তিকে সঙ্গী করেই ক্যারিয়ার শেষ করতে হয়েছে তাঁকে। জাতীয় দলের হয়ে কিছু জেতা হয়নি। না ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ, না বিশ্বকাপ।
অথচ ১৯৭৪-এর বিশ্বকাপটি হল্যান্ডের না জেতার কোনো কারণ ছিল না। অভূতপূর্ব টোটাল ফুটবলের বিস্ময়কর প্রদর্শনীতে ক্রুইফের দল বিমোহিত করে রেখেছিল বিশ্বকে। কিন্তু পশ্চিম জার্মানির শেষ বাধাটা টপকাতে পারেনি।
বিশ্বকাপ জেতা হয়নি বলে ক্রুইফের মন খারাপ করার কিছু নেই। তিনবার ব্যালন ডি’অর জেতা এই ফুটবলার ফুটবলকে যা দিয়ে গেছেন, তাতে বিশ্বকাপই বরং তাঁর ছোঁয়া না পেয়ে লজ্জা পেতে পারে।
একজন বোমারু
জার্ড মুলার (পশ্চিম জার্মানি)
লোকেরা তাঁকে ‘বম্বার ডের ন্যাশন’ বলে ডাকত; মানে ‘জাতির বোম্বার’। কেন! তিনি কি যুদ্ধ-টুদ্ধ করে বেড়াতেন নাকি! বোমা ফেলতেন আকাশ থেকে?
যুদ্ধ করতেন না। তবে বোমা ফেলতেন। বোমাটা পড়ত বিপক্ষের গোলপোস্টে। জাতীয় দল হোক আর ক্লাব; তাঁর মাঠে নামা মানেই গোল আর গোল। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ৬২ ম্যাচে ৬৮ গোল করেছেন, বুন্দেসলিগায় ৪২৭ ম্যাচে ৩৬৫ গোল! ফুটবল ক্যারিয়ার-জুড়ে গোলের এই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে যাওয়া মানুষটি হলেন কিংবদন্তি ফুটবলার জেরহার্ড মুলার, সংক্ষেপে জার্ড মুলার।
অথচ মুলারের এই বিস্ময়কর প্রতিভা পৃথিবী হয়তো দেখতেই পেত না। অন্তত মুলার যদি কোচের কথা শোনা সুবোধ বালক হতেন, তাঁর তাহলে ফুটবল খেলাই হতো না। শহরের ক্লাব টিএসভি নর্ডলিনজেনের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন মাত্র ৯ বছর বয়সে। কিন্তু শুরুতেই কোচ তাঁর খেলা দেখে বলে দিলেন, ‘ফুটবলে তুমি বেশি দূর যেতে পারবে না। বরং অন্য কিছু চেষ্টা করো।’ ভাগ্যিস, মুলার কথাটা শোনেননি!
কথা শোনেননি বলে ৩২ বছর বিশ্বকাপ ফুটবলের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে ছিলেন মুলার। তাঁর সর্বোচ্চ গোলের (১৪) রেকর্ডটি ২০০৬ বিশ্বকাপে ভেঙে দিয়েছেন রোনালদো। তাতে ফুটবল-ইতিহাস থেকে সহজাত এই স্ট্রাইকারের নাম মুছে যাওয়ার কোনো কারণ ঘটেনি।
আকৃতিতে ছিলেন ছোটখাটো, কিন্তু দারুণ শক্তিশালী। বিশ্বকাপে অভিষেক ১৯৭০-এ। দু-দুটো হ্যাটট্রিকসহ সেবার ১০ গোল করে গোল্ডেন বুট জিতে নেন ‘বোম্বার’। ১৯৭০-এ না পারলেও ১৯৭৪-এ ঠিকই বিশ্বকাপ জিতে নেয় পশ্চিম জার্মানি। মুলার সেবার ‘মাত্র’ ৪ গোল করলেও এর মধ্যেই ছিল ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোলটি। হল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালের জয়সূচক গোলটি যে তাঁরই করা।
মুলার যতটা পশ্চিম জার্মানির, ততটাই বায়ার্ন মিউনিখের। ১৯৬৪ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত বায়ার্নে ১৫ বছরের ক্যারিয়ারের শেষ মৌসুমটা বাদ দিলে প্রতিবারই সর্বোচ্চ গোলদাতা মুলার। এর মধ্যে বুন্দেসলিগার সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন সাতবার।
পাখিদের সঙ্গী
গারিঞ্চা (ব্রাজিল)
‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’ ধরনের সংসার। সংসারের একমাত্র আয়ক্ষম মানুষটি সর্বক্ষণ মদে চুর হয়ে পড়ে থাকেন। ফলে নুনও আসে না, পান্তাও তৈরি হয় না।
ভাত-কাপড়ের জন্য লড়তে থাকা এমন হতদরিদ্র পরিবারে জন্মাল ‘বিকলাঙ্গ’ একটি ছেলে। যার মেরুরজ্জুতে জন্মগত ত্রুটি, ডান পা ভেতরের দিকে বাঁকানো, ডান পায়ের চেয়ে বাঁ পা আবার ৬ সেন্টিমিটার ছোট। এমন ছেলের ভবিষ্যৎ কী? রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষে করে বেড়ানো!
হায়রে অনুমান! এই তথাকথিত বিকলাঙ্গ ছেলেটি তার বিকলাঙ্গ বাঁ পা দিয়ে ভবিষ্যতে শাসন করে চলল ফুটবল-দুনিয়াকে। সেই শাসনের এমনই দাপট যে সর্বকালের সেরা ফুটবলার পেলের ছায়া অতিক্রম করেও তিনি হয়ে উঠলেন একজন মহানায়ক—ম্যানুয়েল ফ্রাঞ্চিসকো দস সান্তোস। চিনতে পারলেন না? চিনবেন তাঁকে ‘গারিঞ্চা’ নামে।
ম্যানুয়েল দস সান্টোস ফ্রান্সিসকোকে এই ‘গারিঞ্চা’ নামটি দেন তাঁরই ১২ সহোদরের একজন। ভালোবেসে নয়, ঝগড়া করে। ব্রাজিলের ওই অঞ্চলের কুিসত-দর্শন এক পাখির নামে খেপাতে শুরু করেন তাঁকে। ১৯৫৩তে বোটাফোগোর হয়ে ক্যারিয়ার অভিষেকেই হ্যাটট্রিক করলে আরেকটি নাম পেয়ে যান তিনি—দ্য লিটল বার্ড। ভক্তদের এই নামটি অবশ্য ভালোবেসেই দেওয়া। ১৯৫৮ বিশ্বকাপে প্রথম দু ম্যাচে তাঁকে দলে রাখেননি কোচ। সতীর্থদের অনুরোধে তৃতীয় ম্যাচে সুযোগ পান খেলার। এরপর পেলের সঙ্গে জুটি বেঁধে বিশ্বকাপ জয়ে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আর আহত পেলের অনুপস্থিতিতে ১৯৬২-এর বিশ্বকাপ জয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল তো তাঁরই। ১৯৬৬-এর আসরে খেললেও ব্রাজিলকে নিয়ে প্রথম রাউন্ডের বাধা পেরোতে পারেননি। হাঙ্গেরির বিপক্ষে তিন গোলে হেরে সেই বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেল ব্রাজিলের। জাতীয় দলের হয়ে গারিঞ্চার শেষ ম্যাচও এটিই। জেনে অবাক হবেন, ৬০ ম্যাচের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ওই একটি মাত্র ম্যাচেই পরাজিত দলে ছিলেন তিনি!
জাতীয় দলের হয়ে খেলা ৬০ ম্যাচে ১২টি গোল করেছেন। এই পরিসংখ্যান দিয়ে গারিঞ্চার বিস্ময়কর ক্ষমতার কিছুই অনুমান করা যাবে না। তাঁর ক্ষমতাটা বুঝতে হলে, এটুকু জানাই যথেষ্ট যে অনেক ফুটবল-বোদ্ধা গারিঞ্চাকে পেলের সমমানের ফুটবলার মনে করেন! তাঁর ‘বানানা কিক’ (বাঁকানো শট) ও ‘ফলিং লিফ শট’ (ঝরাপাতা শট—গোলের দিকে যাওয়ার পথে যা গতি পরিবর্তন করত দুবার) তো ফুটবল-রূপকথায় চিরন্তন জায়গা করে দিয়েছে তাঁকে।
খেলা ছাড়ার পর গারিঞ্চা ডুবে যান বেহিসেবি জীবনে। অ্যালকোহলে ডুবে গিয়ে তাঁর বেপরোয়া জীবনের ইতি ঘটে মাত্র ৪৯ বছর বয়সে। ব্রাজিলিয়ানদের ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ গারিঞ্চার সমাধিফলকে এই ফুটবল কবিকে নিয়ে লেখা আছে ছোট্ট দুটো লাইন, ‘সে ছিল মিষ্টি এক শিশু, যে কথা বলত পাখিদের সঙ্গে।’
সেরা ইতালীয়!
জিওসেপ্পে মিয়াজ্জা (ইতালি)
১৯২৭ সালে ইন্টার মিলানের মূল দলে ১৭ বছর বয়সী একটি ছেলেকে দেখে চমকে উঠেছিলেন সিনিয়র খেলোয়াড় লিওপোল্ডো কোন্তি, ‘এই ইল বাল্লিয়া বড়দের দলে কী করে!’ সেই থেকে খেলোয়াড়টির নাম হয়ে গেল—ইল বাল্লিয়া, খুদে শিশু।
কিন্তু কাজের বেলায় তিনি ‘শিশু’ নন; সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার জিওসেপ্পে পেপিনো মিয়াজ্জা। এই মিয়াজ্জাকে ছাড়া ইতালির প্রথম দুটি বিশ্বকাপ জয়ের গল্পই লেখা হয় না। শুধু ইতালির নয়, ফুটবল ইতিহাসের সর্বকালের সেরাদের তালিকায়ও নিঃসন্দেহে চলে আসবেন এই ফরোয়ার্ড।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বাবাকে হারানো মিয়াজ্জার জন্ম ১৯১০ সালে, মিলানে। ইন্টার মিলানের হয়ে প্রথম বিভাগে অভিষেক ১৭ বছর বয়সে। ১৯২৯-৩০ মৌসুমে চালু হয় সিরি ‘এ’। ৩৩ ম্যাচে ৩১ গোল করে মিয়াজ্জা সে মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতা। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে অভিষেক সে মৌসুমেই। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ৪-২ গোলে জেতা ম্যাচে জোড়া গোল মিয়াজ্জার। কদিন পর হাঙ্গেরির বিপক্ষে করেন হ্যাটট্রিক। কি ক্লাব, কি জাতীয় দল—গোলমেশিন মিয়াজ্জার গোল পেতে সমস্যা হয়নি কোথাও।
অথচ কী আশ্চর্য! ১৯৩৪-এর বিশ্বকাপে কোচ ভিত্তরিও পোজ্জো তাঁর পজিশনই পাল্টে ফেললেন। সেন্টার ফরোয়ার্ড থেকে সরিয়ে নিয়ে এলেন ইনসাইড ফরোয়ার্ডে। দেশজুড়ে তাই উঠল বিতর্কের ঝড়। নিজ সিদ্ধান্তে কিন্তু অটল
রইলেন পোজ্জো। আর কী চমত্কারভাবেই না সেটা
কাজে লাগালেন মিয়াজ্জা। মনোযোগ দিলেন গোল
করার চেয়ে করানোতে। দ্বিতীয় রাউন্ডে স্পেনের বিপক্ষে
জয়সূচক গোলটি করেছিলেন। ইনজুরি নিয়ে ফাইনাল খেলতে নেমেও ভূমিকা রাখলেন দলের বিশ্বজয়ে।
তাঁর ক্রস থেকেই জয়সূচক গোলটি করেন শিয়াভিনো।
চার বছর পর অধিনায়ক হিসেবে ফ্রান্স বিশ্বকাপে যান।
এবারও রাখেন উজ্জ্বল। নিজে করেন এক গোল;
ফাইনালের দুটিসহ বানিয়ে দিলেন আরও
অনেকগুলো।
‘বড়’ ফুটবলার
রোনালদো (ব্রাজিল)
১৯৯৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিল দলের সঙ্গে ১৭ বছর বয়সী ‘বাচ্চা’ একটা ছেলে এসেছিল যুক্তরাষ্ট্রে। ছেলেটি মাঠে নামেনি। ড্রেসিং রুমে খেলোয়াড়েরা তাঁকে ডাকত ‘রোনালদিনহো’ বলে; মানে ছোট্ট রোনালদো। ‘ছোট্ট’ বলার কারণ, দলে তখন রোনালদো রদ্রিগেজ নামে সিনিয়র এক খেলোয়াড় ছিলেন।
দু বছর পর আটলান্টা অলিম্পিকে সেই ‘বাচ্চা’ ছেলেটি মাঠে নামল হলুদ জার্সি পরে। কিন্তু এবারও তাঁর শার্টের পেছনে লেখা—রোনালদিনহো। কারণ, এবার দলে আছেন রোনালদো গুইয়ারো! ছেলেটি কি তাহলে ছোটই হয়ে থাকবে! ‘বড়’ হবে না?
১৯৯৮ ফ্রান্স বিশ্বকাপে এই দুনিয়াকে সাক্ষী রেখে ‘বড়’ হয়ে গেলেন রোনালদো লুইস নাজারিও ডি লিমা। এতটাই বড় হয়ে গেলেন যে কয়েক বছরের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গেল, ব্রাজিলের জার্সি গায়ে এসে গেছেন আরেক বিস্ময়।
রোনালদোর বিশ্বজয়টা শুরু ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে। পিএসভি আইন্দহোফেন থেকে স্যার ববি রবসনের আগ্রহে বার্সায় এসে লা লিগায় ওই মৌসুমে ৩৪ গোল করলেন, সব মিলিয়ে মৌসুমে ৪৭ গোল। এই দুর্দান্ত কীর্তি দিয়ে ২০ বছর বয়সেই জিতে ফেলেন ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের খেতাব ।
ওই শুরু, এর পর থেকে রোনালদো মানেই গোল আর গোল। এক দশকেরও বেশি বিশ্বের এক নম্বর স্ট্রাইকার হয়ে ছিলেন। দুর্দান্ত গতি আর শরীরের ঝাঁকুনিতে ছিটকে ফেলতেন ডিফেন্ডারকে। গোল করাটা ছিল খাওয়া-ঘুমানোর মতো অভ্যাসের ব্যাপার। ক্লাব পারফরম্যান্সটা দেখুন—৫০১ ম্যাচে ৩৪৭ গোল। শুধু স্প্যানিশ দুই ক্লাব বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের হয়েই করেছেন এর ১৫১টি!
পুরস্কারও পেয়েছেন তিনবার ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতিতে। ১৯৯৬-১৯৯৭ টানা দু বছর, এর পর আবার ২০০২ সালে। ১৯৯৭ ও ২০০২ সালে জিতেছেন ইউরোপ-সেরার ব্যালন ডি’অর। ব্রাজিলের জার্সি গায়েও একই রকম দুর্বার। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে ৪টি গোল করে, তিনটি গোল করিয়ে ব্রাজিলকে ফাইনালে তুললেন। দুর্ভাগ্য বয়ে আনল ফাইনালের দিন রহস্যময় এক অসুস্থতা। মাঠে নামলেও নিজের ছায়া হয়ে থাকলেন, দলকে বিশ্বকাপ জেতানোও হলো না। দুঃখটা ঘোচালেন ২০০২ বিশ্বকাপে। আট গোল করে ব্রাজিলকে উপহার দিলেন ‘পেন্টা’—পঞ্চম বিশ্বকাপ।
বিশ্বকাপে ১২ গোল নিয়ে গিয়েছিলেন ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপে। জাপানের বিপক্ষে দুই গোল করে ছুঁয়ে ফেললেন জার্ড মুলারকে। আর ঘানার বিপক্ষে এক গোলে হয়ে গেলেন বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্কোরার। ‘দ্য ফেনোমেনন’ নামটা তো আর এমনিতেই হয়নি! প্রিন্টShareThis পাঠকের মন্তব্য
আপনার মতামত দিন
colleted by
kazi ashraful islam
Wednesday, June 2, 2010
COX S BAZAR
Seventy-five miles (120 Kilo miters sandy sea beach with a gentle slop). and it's the the tourist capital of Bangladesh.visit beach is the main reason which is shark free and good for bathing, swiming & sun-bathing. Lot's of local tourist & foreign tourist come Cox's Bazar to spend their leisure in Cox's Bazaar.
Cox's Bazar sea beach is crowded almost through out the year. It is a good place for sea bathing. Anyone can go there both by air and road from Dhaka and Chittagong.
Cox's Bazar is a small town. But the natural beauty of the town is very charming. The climate of this place is very fine. The Bay of Bengal lies on the south of it. There is a high standard tourist centre at this place. There are good arrangements for the stay of the tourists of different countries of the world. Many foreigners come to this place. The people of the place are very gentle. A lot of fish is available there.
Seventy-five miles (120 Kilo miters sandy sea beach with a gentle slop). and it's the the tourist capital of Bangladesh.visit beach is the main reason which is shark free and good for bathing, swiming & sun-bathing. Lot's of local tourist & foreign tourist come Cox's Bazar to spend their leisure in Cox's Bazaar.
Cox's Bazar sea beach is crowded almost through out the year. It is a good place for sea bathing. Anyone can go there both by air and road from Dhaka and Chittagong.
Cox's Bazar is a small town. But the natural beauty of the town is very charming. The climate of this place is very fine. The Bay of Bengal lies on the south of it. There is a high standard tourist centre at this place. There are good arrangements for the stay of the tourists of different countries of the world. Many foreigners come to this place. The people of the place are very gentle. A lot of fish is available there.
SYLHET: The land of two leaves and a bud
Immaculately nestled in the picturesque Surma Valley amidst scenic tea plantations and lush green tropical forests, it is a prime attraction for all tourists. Its terraced tea gardens, eye-soothing orange groves and pineapple plantations and hills covered with tropical forests form a beautiful landscape. The Sylhet valley has a good number of haors which are big natural wetlands. These haors which provide sanctuary to the millions of migratory birds who fly from Siberia across the Himalayas to avoid the severe cold. Sylhet is also known as the land of the famous Muslim Saint Hazrat Shah Jalal (RA), the great torch bearer of Islam to this region. The shrine of this great saint is located at Sylhet town. Another shrine of this town is the Shrine of Hazrat Shah Paran (RA). Colourful Monipuri, Khasia and Garo tribes live in Sylhet. Monipuris are famous for their wide variety of exquisite handicrafts of cane and bamboo. Sylhet is linked with Dhaka by rail, road and air.
Rangamati !
The inhabitants of the Hill tracts of Chittagong, Rangmati and Bandarban area are tribals. Majority of these tribals are Buddhists while the rest are Hindus, Christians, Muslims, and Animists. Despite the Bondage of religion, elements of primitiveness are strongly displayed in their rites, rituals, and everyday life. The tribal families are known as Matriarchal. The tribal people are extremely self-reliant, as they grow their own food, weave their own clothes, and live a simple life. Each tribe has its own dialect, distinctive dress and rites and rituals. The common feature is their living speaks of their primitive past. “Jhoom Cultivation” on the hilltops is their main occupation.
Photo Gallary of Hill Tracts
Bandarban!
The land of wooded hills. This beautiful hilly district is located in the south-east of Bangladesh. It is a place of captivating beauty, with plenty of places barely touched by men, that let you enjoy the tranquility and silence.
The highest peak of Bangladesh `Toh-Jing-Dong' The Darjiling of Bangladesh 'Chimbuk' and The mysterious `Boga Lake' on 3700 feet high hills made Bandarban an ultimate destination of travellers.
Bandarban is a place of brotherly people from 11 ethnic groups. Each group have their own culture, customs and beliefs. People here are most hospitable and habituated to give careful consideration to strangers.
Immaculately nestled in the picturesque Surma Valley amidst scenic tea plantations and lush green tropical forests, it is a prime attraction for all tourists. Its terraced tea gardens, eye-soothing orange groves and pineapple plantations and hills covered with tropical forests form a beautiful landscape. The Sylhet valley has a good number of haors which are big natural wetlands. These haors which provide sanctuary to the millions of migratory birds who fly from Siberia across the Himalayas to avoid the severe cold. Sylhet is also known as the land of the famous Muslim Saint Hazrat Shah Jalal (RA), the great torch bearer of Islam to this region. The shrine of this great saint is located at Sylhet town. Another shrine of this town is the Shrine of Hazrat Shah Paran (RA). Colourful Monipuri, Khasia and Garo tribes live in Sylhet. Monipuris are famous for their wide variety of exquisite handicrafts of cane and bamboo. Sylhet is linked with Dhaka by rail, road and air.
SRIMONGAL: SRIMONGAL in Moulvibazar district known as the tea capital of Bangladesh is the main tea centre of the area. For miles and miles around the visitors can see the tea gardens spread like green carpet over the plain land or on the slopping hills. Sylhet, the tea granary of Bangladesh, not only has over 150 tea gardens. A stay in one of the rest-houses of tea gardens would be an enchanting one.
Rangamati !
The inhabitants of the Hill tracts of Chittagong, Rangmati and Bandarban area are tribals. Majority of these tribals are Buddhists while the rest are Hindus, Christians, Muslims, and Animists. Despite the Bondage of religion, elements of primitiveness are strongly displayed in their rites, rituals, and everyday life. The tribal families are known as Matriarchal. The tribal people are extremely self-reliant, as they grow their own food, weave their own clothes, and live a simple life. Each tribe has its own dialect, distinctive dress and rites and rituals. The common feature is their living speaks of their primitive past. “Jhoom Cultivation” on the hilltops is their main occupation.
Photo Gallary of Hill Tracts
Bandarban!
The land of wooded hills. This beautiful hilly district is located in the south-east of Bangladesh. It is a place of captivating beauty, with plenty of places barely touched by men, that let you enjoy the tranquility and silence.
The highest peak of Bangladesh `Toh-Jing-Dong' The Darjiling of Bangladesh 'Chimbuk' and The mysterious `Boga Lake' on 3700 feet high hills made Bandarban an ultimate destination of travellers.
Bandarban is a place of brotherly people from 11 ethnic groups. Each group have their own culture, customs and beliefs. People here are most hospitable and habituated to give careful consideration to strangers.
collected by:
kazi ashraful islam
Guide - Bangladesh
Bangladesh Holidays – Tours & Adventure Travel Guide
Pure Travel Says
“Bangladesh is one of the small countries in South Asia sharing its borders with India, Burma, and Bay of Bengal bordering the south. This country is situated within the deltaic landmass of three major rivers namely Ganges, Brahmputra and Meghna. Topography of the country is almost flat with huge network of rivers and canals spanning across the country. Bangladesh’s vast green fields and low hills offer amazing scenic sights for visitors.”
Bangladesh Holiday Highlights
Walking & Trekking – The beauty of natural landscapes in Bangladesh is offered to visitors through trekking along the Chittagong hills Trekking and hiking in Bangladesh are offered through the landscapes of small hills and the enjoyment of rivers and rivulets crossing throughout rich mangrove forests.
Culture & History–
Bangladesh’s thousands of years of culture is reflected in the day to day activities of its people. Their festivals and traditions bear the trademarks of their rich cultural heritage. The culture of Bangladesh has been influenced by the three major religions of the world namely Hindu, Buddhism and Islam. Presently, the culture of Bangladesh represents a harmonious blend impacting these three religions. This country’s rich traditions of architecture, dance, drama and music are quite entertaining and offer visual and musical delights to visitors.
Water Sports –
Kapati Lake, located in the hill districts of Rangamati, offers excellent opportunities for water sports. The lake is good for sailing and swimming and anglers can enjoy fishing in the placid waters of the lake. The long coast of Bangladesh offers numerous opportunities for water sports. Cox's Bazaar is one of the most popular locations for these and other water sports while Sunderbands National Park is ideal for boating and sailing. In fact, large stretches of the park can be visited only by boating or sailing.
Wildlife -
Bangladesh has 8 national parks that are home to rich and copious wildlife. Wildlife includes Royal Bengal tiger as one of the inhabitants of these national parks. Many species of birds including many exotic birds unique to the place offer visual delight to the tourists. One of the best ways to enjoy these parks is to join the tours conducted by the Bangladesh Parjatan Corporation.
Adventure Tours –
Adventure tours in Bangladesh are very popular. Expansive landscape and amazing wildlife, along with rich cultural heritage, offers many avenues of adventures to enjoy this beautiful country. Some of the most popular travel adventures in the Bangladesh are offered through Hiking the hills of Chittagong Hill, sailing across the river waters it and spending time with a tribe.
A river cruise through the Chittagong Hills along with a trek to the naturally formed lotus shaped Boga Lake is quite popular among visitors, who also enjoy staying at "Bawm" village. During the stay they get the opportunity to learn first-hand about the people of the tribe. Usually, the headman and his family play host to the visitors. There is also an option to trek to Keokeradong, the highest peak in Bangladesh.
A visit to the famous Chakma village and historical Buddhist "Kyangs" is another popular adventure tours among visitors. The tour takes you back to the golden and pristine days of old cultural heritage. The scenic drive up into the Burmese foothills is also another popular destination. Bandarban town situated at the foothills is a colorful native market town with many scenic surroundings such as a visit to local Buddhist shrines and Marma village. Sangu River nearby offers option for cruise by country boat; do not miss this unique opportunity.
When to Go
The cold season is a good time to visit Bangladesh. Cold season in Bangladesh spans from October to February. Weather during the cold season is dry and cool. April is very hot and humid.
Bangladesh has subtropical and tropical climates. Average temperature of the day is 25°C in the month of January and 35°C in the month of April. For the rest of the year, average temperature hovers around 30°C. Bangladesh has three distinct seasons namely monsoon, cold and hot. Torrential rains and cyclones are quite common during May and June as well as during October and November.
Top Tips
Be respectful of local customs.
Check with the Government travel advice about any places to avoid.
Bangladesh Holidays In Focus
Walking and Trekking
A trek to Keokradong is one of the most popular treks in the country. Besides the natural scenery of the area, this trek offers an encounter with the tribal people. The area of the Chittagong Hills offers numerous trekking routes to the visitors in Bangladesh.
It is always the better option to trek with experienced guides. Guides are storehouses of information on cultural and natural surroundings. Trekking among the hilly track along with the opportunity to spend time among the tribes of the mountains is a unique and unforgettable travel experience that is special to Bangladesh.
Culture and History
Bangladesh is a storehouse of rich cultural heritage. Evidences of highly developed art form are apparent from the ancient terra cotta and pottery located at the archaeological sites. Modern painting along with sculpture, tapestry and engraving are quite popular in the modern times while impact of long religious traditions is reflected in the design of such art forms.
The Bangladesh contains some of the finest relics from Buddhist monastic architecture. The Buddhist vihara at Paharpur is one of the typical examples. The base of the monument is a quadrangle with external measurements of 900 feet. Surprisingly, another vihara of Deva dynasty has been recovered from Mainamati. The relics of Mahasthangarh at the site of the ancient city of Pundravardhana suggest the structure of a large monastery there.
There are many significant ancient sculptures that offer visual delights to visitors including:
Stone figures of Buddha from Ujani in Faridpur district
Varaha avatara from Bogra
Vishnu Stela from Comilla
Chandi image from Dhaka district
Terracotta art of Paharpur
Terracotta art of Paharpur has drawn its inspiration from the simple village life and depicts the day to day life of the people with strong emotions.
During the Middle Ages large numbers of Islamic monuments were built by the emperors of the time. These monuments are famous for their massive arches. Some of the famous monuments are the Satgambuz mosque, the mausoleum of Shah Ali
Bagdadi at Mirpur as well as the mosque of Rasti Khan at Hathazari.
Dance is another cultural heritage that Bangladesh shares with India. Katthak and Bharatanatyam are the popular classical dance forms whereas popular folk and tribal dances are Monipuri and Santal. Like dance, drama and music share cultural heritage from India.
Adventure
Professional companies offer adventure tours for a day or longer durations. Bhawal National Park – Gazipur, Kaptai National Park – Chittagong Hill Tracts, Chunati Wildlife Sanctuary – Chittagaon are some of the popular adventure travel destinations in Bangladesh that can be enjoyed by tourists irrespective of their age. Some of the popular activities are horseback riding and swimming. People can also opt for boating or trekking as well as cultural experiences that are unique to the adventure tours in the country.
A trek to tribal villages of the Chittagong area hills is very popular. Visitors are allowed to stay a day or more among the villagers in opportunity to make themselves familiar with the tribal ways. One also gets the opportunity to participate in the activities of the tribal life.
Classic Itineraries
Visit villages of the indigenous peoples of the Chittagong Hill Tracts, take river cruise by country boat, relax on the sandy beaches and take tour of Chimbuk village.
Join the trekking to Chittagong Hill along with river cruise and a chance to live with the natives of the area.
Tour to Bhawal National Park – Gazipur / Kaptai National Park – Chittagong Hill. *Tracts / Chunati Wildlife Sanctuary – Chittagaon.
Trek to Keokeradong & Boga Lake.
3 days with Mru - meet the self-sufficient Mru culture and learn more about them and their way of living.
Pure Travel Says
“Bangladesh is one of the small countries in South Asia sharing its borders with India, Burma, and Bay of Bengal bordering the south. This country is situated within the deltaic landmass of three major rivers namely Ganges, Brahmputra and Meghna. Topography of the country is almost flat with huge network of rivers and canals spanning across the country. Bangladesh’s vast green fields and low hills offer amazing scenic sights for visitors.”
Bangladesh Holiday Highlights
Walking & Trekking – The beauty of natural landscapes in Bangladesh is offered to visitors through trekking along the Chittagong hills Trekking and hiking in Bangladesh are offered through the landscapes of small hills and the enjoyment of rivers and rivulets crossing throughout rich mangrove forests.
Culture & History–
Bangladesh’s thousands of years of culture is reflected in the day to day activities of its people. Their festivals and traditions bear the trademarks of their rich cultural heritage. The culture of Bangladesh has been influenced by the three major religions of the world namely Hindu, Buddhism and Islam. Presently, the culture of Bangladesh represents a harmonious blend impacting these three religions. This country’s rich traditions of architecture, dance, drama and music are quite entertaining and offer visual and musical delights to visitors.
Water Sports –
Kapati Lake, located in the hill districts of Rangamati, offers excellent opportunities for water sports. The lake is good for sailing and swimming and anglers can enjoy fishing in the placid waters of the lake. The long coast of Bangladesh offers numerous opportunities for water sports. Cox's Bazaar is one of the most popular locations for these and other water sports while Sunderbands National Park is ideal for boating and sailing. In fact, large stretches of the park can be visited only by boating or sailing.
Wildlife -
Bangladesh has 8 national parks that are home to rich and copious wildlife. Wildlife includes Royal Bengal tiger as one of the inhabitants of these national parks. Many species of birds including many exotic birds unique to the place offer visual delight to the tourists. One of the best ways to enjoy these parks is to join the tours conducted by the Bangladesh Parjatan Corporation.
Adventure Tours –
Adventure tours in Bangladesh are very popular. Expansive landscape and amazing wildlife, along with rich cultural heritage, offers many avenues of adventures to enjoy this beautiful country. Some of the most popular travel adventures in the Bangladesh are offered through Hiking the hills of Chittagong Hill, sailing across the river waters it and spending time with a tribe.
A river cruise through the Chittagong Hills along with a trek to the naturally formed lotus shaped Boga Lake is quite popular among visitors, who also enjoy staying at "Bawm" village. During the stay they get the opportunity to learn first-hand about the people of the tribe. Usually, the headman and his family play host to the visitors. There is also an option to trek to Keokeradong, the highest peak in Bangladesh.
A visit to the famous Chakma village and historical Buddhist "Kyangs" is another popular adventure tours among visitors. The tour takes you back to the golden and pristine days of old cultural heritage. The scenic drive up into the Burmese foothills is also another popular destination. Bandarban town situated at the foothills is a colorful native market town with many scenic surroundings such as a visit to local Buddhist shrines and Marma village. Sangu River nearby offers option for cruise by country boat; do not miss this unique opportunity.
When to Go
The cold season is a good time to visit Bangladesh. Cold season in Bangladesh spans from October to February. Weather during the cold season is dry and cool. April is very hot and humid.
Bangladesh has subtropical and tropical climates. Average temperature of the day is 25°C in the month of January and 35°C in the month of April. For the rest of the year, average temperature hovers around 30°C. Bangladesh has three distinct seasons namely monsoon, cold and hot. Torrential rains and cyclones are quite common during May and June as well as during October and November.
Top Tips
Be respectful of local customs.
Check with the Government travel advice about any places to avoid.
Bangladesh Holidays In Focus
Walking and Trekking
A trek to Keokradong is one of the most popular treks in the country. Besides the natural scenery of the area, this trek offers an encounter with the tribal people. The area of the Chittagong Hills offers numerous trekking routes to the visitors in Bangladesh.
It is always the better option to trek with experienced guides. Guides are storehouses of information on cultural and natural surroundings. Trekking among the hilly track along with the opportunity to spend time among the tribes of the mountains is a unique and unforgettable travel experience that is special to Bangladesh.
Culture and History
Bangladesh is a storehouse of rich cultural heritage. Evidences of highly developed art form are apparent from the ancient terra cotta and pottery located at the archaeological sites. Modern painting along with sculpture, tapestry and engraving are quite popular in the modern times while impact of long religious traditions is reflected in the design of such art forms.
The Bangladesh contains some of the finest relics from Buddhist monastic architecture. The Buddhist vihara at Paharpur is one of the typical examples. The base of the monument is a quadrangle with external measurements of 900 feet. Surprisingly, another vihara of Deva dynasty has been recovered from Mainamati. The relics of Mahasthangarh at the site of the ancient city of Pundravardhana suggest the structure of a large monastery there.
There are many significant ancient sculptures that offer visual delights to visitors including:
Stone figures of Buddha from Ujani in Faridpur district
Varaha avatara from Bogra
Vishnu Stela from Comilla
Chandi image from Dhaka district
Terracotta art of Paharpur
Terracotta art of Paharpur has drawn its inspiration from the simple village life and depicts the day to day life of the people with strong emotions.
During the Middle Ages large numbers of Islamic monuments were built by the emperors of the time. These monuments are famous for their massive arches. Some of the famous monuments are the Satgambuz mosque, the mausoleum of Shah Ali
Bagdadi at Mirpur as well as the mosque of Rasti Khan at Hathazari.
Dance is another cultural heritage that Bangladesh shares with India. Katthak and Bharatanatyam are the popular classical dance forms whereas popular folk and tribal dances are Monipuri and Santal. Like dance, drama and music share cultural heritage from India.
Adventure
Professional companies offer adventure tours for a day or longer durations. Bhawal National Park – Gazipur, Kaptai National Park – Chittagong Hill Tracts, Chunati Wildlife Sanctuary – Chittagaon are some of the popular adventure travel destinations in Bangladesh that can be enjoyed by tourists irrespective of their age. Some of the popular activities are horseback riding and swimming. People can also opt for boating or trekking as well as cultural experiences that are unique to the adventure tours in the country.
A trek to tribal villages of the Chittagong area hills is very popular. Visitors are allowed to stay a day or more among the villagers in opportunity to make themselves familiar with the tribal ways. One also gets the opportunity to participate in the activities of the tribal life.
Classic Itineraries
Visit villages of the indigenous peoples of the Chittagong Hill Tracts, take river cruise by country boat, relax on the sandy beaches and take tour of Chimbuk village.
Join the trekking to Chittagong Hill along with river cruise and a chance to live with the natives of the area.
Tour to Bhawal National Park – Gazipur / Kaptai National Park – Chittagong Hill. *Tracts / Chunati Wildlife Sanctuary – Chittagaon.
Trek to Keokeradong & Boga Lake.
3 days with Mru - meet the self-sufficient Mru culture and learn more about them and their way of living.
about bangladesh
Bangladesh
Bangladesh has been aptly described as a new state in an ancient land. Much has been written about the past glory of Bangladesh, notably in old records like the evidence of Pliny and Periplus of the Erythrean Sea (first century AD). It was drawn in Ptolemy's map. These indicate that from the earliest times Bangladesh was known to the West, particularly for its Muslin, the finest fabric the world has ever produced. Travellers and scholars who were attracted by the charms and fame of Bangladesh since time immemorial had showered effusive epithets on its bounties and wealth, affluence and prosperity, craftsmanship and cultural advancement.
They include the Chinese travellers Fa-hien (fourth century AD), Hue-an-tsung (seventh century), Ma-hoen and Fei-shin (fifteenth century), Ibne Batuta (fourteenth century) from Africa, Nicola Kanti (fifteenth century) and Ceasar the Frederik (sixteenth century) from Venice, Verthema, an Italian in the sixteenth century, Barbosa and Sebastin Manric (sixteenth century) from Portugal, Travernier and Bernier from France (seventeenth century) and Queen Elizabeth-the First's ambassador Ralf Fish.
To Ibne Batuta, Bangladesh was a 'hell full of bounties and wealthiest and cheapest land of the world.' So great were the attractions of Bangladesh that to quote Bernier 'it has a hundred gates open for entrance but not one for departure.' Ladies of Imperial Rome were literally crazy for Bangladesh's Muslin and luxury items, which according to Pliny, resulted in serious drain of gold of the Empire. Because of its location, Bangladesh served as a flourishing entry port and intermediary in trade and commerce between South Asia and the Far East. The region also played a seminal role in disseminating its belief art and architecture in the wider world of Asia. Ancient Bangladesh took great pride as a coveted seat of learning and education and scholars from far away countries regularly flocked to its numerous universities and monasteries.
Etymologically, the word Bangladesh is derived from the cognate Vanga which was first mentioned in Aitarey Aranyaka, a Hindu scripture composed between 500 BC and 500 AD. Literally it means a wetland. Muslim merchants of Arab origin used to refer it as Bangalah from which its present nomenclature is believed to have gradually evolved.
Geological evidence indicates that much of Bangladesh was formed 1 to 6.5 million years ago during the tertiary era. Human habitation in this region, therefore, is likely to be very old with the evidence of Palaeolithic civilization dating back to about 1,00,000 years.
Bangladesh has an area of 148,393 sq km and occupies the apex of the arch formed by the Bay of Bengal into which all the rivers flowing through the country drain. Bangladesh has one of the most complex river systems in the world numbering about 230 with their tributaries having a total length of about 24,140 km. The climate of Bangladesh is characterised by high temperature and high humidity, heavy rainfall and marked seasonal variation. Daily temperature ranges from 10� C to 12� C in the cool months and in the other months it varies between 28� C and 40� C. Soil of Bangladesh may be divided into three main categories, namely hill soils (Chittagong and Sylhet regions), terrace soils (Barind and Madhupur tracts) and alluvial and flood plain soils.
Bangladesh contains greater biodiversity than that of many countries taken together. Indeed few countries in the world can match its rich and varied flora and fauna which are not only aunique biological phenomenon but are also a great natural resource of the country.
Bangladeshis are historically descendants of various races and nationalities. An Austro-Asian race first inhabited this region followed by Dravidians and Aryans. There was also an influx of the Mongolians from Tibet and Mayanmar. The Arab Muslims started coming here in the early ninth century AD. Persians, Armenians, Turks, Afghans and lastly the Mughals came in quick succession.
As per the census of 1991 Bangladesh has a population of 111.5 million with an average density of 755 people per sq. km. It is the second largest Muslim country. Traditionally a land of communal harmony, followers of other religions enjoy full freedom of worship. The economy is mainly agrarian. Recently there is a spurt in industrialisation with the utilisation of country's available natural resources and manpower. Trade and commerce are increasing and widening. Bangladesh is a repository of rich cultural heritage and tradition.
Bangladesh contains greater biodiversity than that of many countries taken together. Indeed few countries in the world can match its rich and varied flora and fauna which are not only aunique biological phenomenon but are also a great natural resource of the country.
Bangladeshis are historically descendants of various races and nationalities. An Austro-Asian race first inhabited this region followed by Dravidians and Aryans. There was also an influx of the Mongolians from Tibet and Mayanmar. The Arab Muslims started coming here in the early ninth century AD. Persians, Armenians, Turks, Afghans and lastly the Mughals came in quick succession.
As per the census of 1991 Bangladesh has a population of 111.5 million with an average density of 755 people per sq. km. It is the second largest Muslim country. Traditionally a land of communal harmony, followers of other religions enjoy full freedom of worship. The economy is mainly agrarian. Recently there is a spurt in industrialisation with the utilisation of country's available natural resources and manpower. Trade and commerce are increasing and widening. Bangladesh is a repository of rich cultural heritage and tradition.
Long colonial exploitation has largely denuded Bangladesh of its past affluence and wealth. Independence has, however, opened new vistas of prospects and opportunities. In the final analysis, Bangladesh is a land made splendid by natural grace - a veritable mosaic in green, verdant and boisterous, with its dedicated and creative people adding color and vibrancy to it.
The landscape of Bangladesh, as if, looks like a magical tapestry in green woven intricately by nature. Across the tropic of cancer it lies in the north-eastern part of South Asia between latitudes 20� - 34' and 26� 38' north and longitudes 88� 01' and 92� 41' east. The country is fenced by India on the west, north and the Northeast, Myanmar on the Southeast and the Bay of Bengal on the south. Strategically located Bangladesh is virtually a bridge between south and Southeast Asia. It has a landmass of 1,48,393 sq. km criss-crossed by a network of several major rivers, their numerous tributaries and canals forming a lace of interconnecting channels. In fact, Bangladesh is the largest riverine delta in the world. The extensive river systems are fundamental to the country's economy and the people's way of life. Its low flat alluvial deltaic plains present an enchanting vista of vast verdant green fields sweeping the horizon. Bangladesh has some of the world's most fertile agricultural lands accounting for abundant growth of various crops. The north-eastern and south-eastern parts of the country are dotted with small hills and ridges, their average elevations being 244m and 610m respectively. The highest peak Keokradong in the south-east end of Bandarban district 1230 meters above the sea level. Thus with its variegated topographical features Bangladesh appears like a vibrant motif splashed with enchanting beauty and serenity.
Bangladeshis are essentially simple in nature. Since time immemorial they are noted for their valour and resilience as well as hospitality and friendliness. Bangladeshis are also equally known for their creativity. They have an innate quality of open mindedness. Communal or ethnic feeling is alien to them and despite diverse racial mix from pre-historic days they are, by and large, a homogeneous group. Almost all the people speak and understand Bangla, a language which occupies an exalted position because of the richness of its literature. Generally speaking, fish, rice and lentils constitute the main diet of the masses, the vast majority of whom live in the country's villages. A cotton lungi and a jersey called kurta are the common attire for men in rural areas. The urban people have, however, largely adapted to western costume. Sari is women's universal dress, both in the cities and countryside.
Bangladeshi women are traditionally adored for their charm, beauty and elegance. They are now increasingly adapting themselves to changing needs of time; working shoulder to shoulder with the men-folk in fields, factories and offices. In fact, they can be found in all professions and there is no exclusive male domain. Agriculture and its related fields still provide the main livelihood of the people. The expanding industrial and service sectors together with trade and commerce offer increasing alternate occupations for the people.
There are about a million, mostly Mongoloid origin, tribal people, the majority of whom live in Hill Tracts districts. They zealously guard their customs, traditions and cultural heritage which are quite distinct from one another and, till to date, largely remain unspoilt. For their living, they mainly depend on traditional cultivation called jhum and cottage craft in which they greatly excel.
wrote by:
kazi ashraful islam ( sumon )
Subscribe to:
Posts (Atom)