এডসন সিলভা ডিডো
এই লেখা লিখছি ৪ জুন। এখন আমি ব্রাজিলেই একটা ফুটবল কোচেস সেমিনার করছি। এই সময়ে কিছু তরুণ খেলোয়াড়কেও দেখছি। পরের সপ্তাহে হয়তো হল্যান্ড যাব। তবে দুই-এক দিনের মধ্যে আমার শহর রিও ডি জেনিরোতে ফিরে যাচ্ছি।
আগেও বলেছি, আবার বলছি—আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি। এর ইতিহাস অসাধারণ। সেখানে কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে সমস্যা ছাড়া আর সবকিছুই উপভোগ করেছি। এখনো আমি বলি বাংলাদেশে ফুটবল-হীরা আছে। এটাকে পরিচর্যা করা দরকার। এবং আমি সব সময় সেই সুন্দর হীরাগুলো মিস করি।
সে যাই হোক, মূল প্রসঙ্গে আসি। আমি জানি বাংলাদেশে ব্রাজিলের অনেক সমর্থক আছেন। লোকে ব্রাজিলের খেলা পছন্দ করেন। তাঁরা ব্রাজিলের জয় দেখতে উদগ্রীব হয়ে আছেন। তাঁদের সঙ্গে আমিও উদগ্রীব। আমি বিশ্বাস করি, ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিতবে। দুঙ্গার দল নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, তবে ব্রাজিল বরাবরই বিশ্বকাপের প্রধান ফেবারিট দল।
এখানে এখন কী অবস্থা, সেটা না বললেও অনুমান করে নিন। ষষ্ঠ বিশ্বকাপ শিরোপার জয় দেখতে আমরা সবাই সামনে তাকিয়ে আছি এবং তা স্মরণীয় করে রাখতে চাই। তবে মুখে আমরা আশাবাদী হচ্ছি ঠিকই, একটা সংশয় কিন্তু সবার মধ্যেই দেখছি। আবেগ আর যুক্তি তো এক নয়। আবেগ ব্রাজিলকে এগিয়ে রাখলে যুক্তি একটু পেছনে টেনে নিচ্ছেই। এর কারণ মূলত দুটি—
ব্রাজিল তার আসল খেলাটা থেকে সরে গেছে।
দুঙ্গার দল নির্বাচন সঠিক হয়নি।
ব্রাজিল দলের দায়িত্ব নিয়ে কোপা আমেরিকা আর কনফেডারেশনস কাপ জিতছেন দুঙ্গা। আমি তো বলব, তিনি শুধু ট্রফিই এনেছেন, মানুষের হূদয় ছুঁতে পারেননি। মানুষ ব্রাজিলের কাছে সুন্দর ফুটবল দেখতে চায়। সুন্দর ফুটবল খেলার ঐতিহ্য আছে আমাদের। কিন্তু দুঙ্গার ব্রাজিল আর আগের ব্রাজিল নেই। দুঙ্গা খেলোয়াড় হিসেবে যেমন রক্ষণাত্মক ছিলেন, এখনো সেই রক্ষণাত্মকই রয়ে গেলেন। তাঁর ফুটবল মানে কুিসত ফুটবল! এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। গোটা দেশ দুঙ্গার নেতিবাচক ফুটবলে বিরক্ত।
তাঁর বিশ্বকাপ দলের বেশির ভাগ মিডফিল্ডারই সৃজনশীল নন। বুঝুন অবস্থা! এই দলে কাকা ছাড়া নির্ভর করার মতো মিডফিল্ডার নেই! কাকা ভালো না খেললে দলটির বিপদ আছে। এমন কেউ নেই, কাকা ভালো না খেললে তাঁর কাজটা করে দেবে। আমার মতে, এটা কোনো মাঝমাঠই হলো না।
দেখুন, দুজন সেরা খেলোয়াড় বাদ দিয়েই ব্রাজিল গেছেন আমাদের কোচ সাহেব। সান্তোসের পাওলো হেনরিক গানসো এবং নেইমার। নেইমারের বয়স ১৮ বছর, গানসোর ২১। দুজনই এই মুহূর্তে ব্রাজিল ফুটবলের সেনসেশন। কিন্তু দুঙ্গা বলেছেন ওরা নাকি খুবই তরুণ। তরুণ! তরুণ বলে ওদের দলে নেওয়া যাবে না? হায়, দুঙ্গা!
গোটা জাতি দুঙ্গার এই খেয়ালিপনার বিরুদ্ধে। পেলে, জিকো, সক্রেটিস, ফ্যালকাও, রোমারিও এবং আমি নিজেও সমালোচনা করেছি। আমরা সবাই আমাদের মতামত জানিয়েছি, তবে কোচের পছন্দের ও সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে। ব্রাজিলে কোচই হচ্ছেন দল নির্বাচনের একক ক্ষমতাধারী (প্রসঙ্গক্রমে বলতে হচ্ছে, বাংলাদেশে খেলোয়াড়ের নাম ঠিক করতে চান কর্মকর্তারা)।
সে যাই হোক, এত কিছুর পরও ব্রাজিল ব্রাজিলই। এই আশা নিয়েই অপেক্ষায় আছে ব্রাজিলিয়ানরা।
লুইস ফ্যাবিয়ানো আলো কাড়বে। ব্রাজিলকে টেনে নেওয়ার অনেকটা দায়িত্ব বর্তাবে তার ওপর। এবং বিশ্বকাপের সেরা গোলদাতা ফ্যাবিয়ানোই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রবিনহো হতে পারে দলের মূল খেলোয়াড়, পরিণত ফুটবল খেলবে সে।
শেষ করলাম। আপনাদের মঙ্গল কামনা করি। ভালো থাকবেন।
No comments:
Post a Comment