kazi ashraful islam

kazi ashraful islam

Saturday, June 12, 2010

 বিশ্বকাপে ক্রিকেট কাঁপে


দুজনের বন্ধুত্বের কথাই জানেন সবাই। ভেতরে ভেতরে তৈরি হওয়া মহা শত্রুতার খবরটা কেউ রাখেন? বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে এখন রীতিমতো ‘গ্রুপিং’ করছেন সাকিব আল হাসান আর তামিম ইকবাল, যা এখন রীতিমতো চরমে। আগামী এক মাস কী অবস্থা হবে কে জানে!
জাতীয় দলের অধিনায়ক সাকিবের সঙ্গে বন্ধুবর ওপেনার তামিমের সম্পর্কে ফাটল ধরিয়েছেন মূলত সহকারী কোচ খালেদ মাহমুদ। সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা দু-একজন ছাড়া দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড় সাকিবের পতাকাতলে। ওদিকে অধিনায়কের বিরুদ্ধে তামিমের মগজধোলাই ভালোই করেছেন খালেদ মাহমুদ।
অবস্থা এমন যে দু পক্ষে চলছে তর্কযুদ্ধ, হুমকি-পাল্টা হুমকি। সদ্য সমাপ্ত ইংল্যান্ড সফরে নাকি এ ধরনের ঘটনা বেশ কটি ঘটেছে। হোটেল থেকে দল হয়তো মাঠে যাচ্ছে, বাসেই শুরু হয়ে গেল ‘লড়াই’। কোড অব কনডাক্টের কারণে শুধু মারামারিটাই হয়নি!
তামিম খুবই সাহসী। এক সহকারী কোচের প্রশ্রয়েই বেশ মারদাঙ্গা। সাকিবের শক্তি জনমত, ‘আমজনতা’র সমর্থন। সব মিলিয়ে জাতীয় ক্রিকেট দল আজ বিস্ফোরণোন্মুখ!
ঘাবড়ে গেলেন? লাল-সবুজের এত সুন্দর দলটা অন্তর্দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেল! ঘাবড়ানোর কিছু নেই, খারাপ লাগারও কিছু নেই। প্রতিবাদ আসার আগেই বলে দিচ্ছি—ওপরের খবরটি অতিরঞ্জিত, বাস্তবতার সীমা ছাড়িয়ে। তবে বাংলাদেশ দলে যে আজ সত্যি সত্যি দুটি ধারা, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। গোটা জাতি, গোটা বিশ্বের মতোই বিভেদের কম্পন লেগেছে এই দলে।
একদিকে সাকিবের আর্জেন্টিনা, অন্যদিকে ব্রাজিলের পক্ষে কেবল তামিম আর খালেদ মাহমুদ। জুনায়েদ সিদ্দিক অবশ্য দুই দিকেই ঢোল পেটাচ্ছেন, ‘আর্জেন্টিনা সাপোর্ট করে এর আগে দুঃখ পেয়েছি। এবার তাই ব্রাজিলকেও রেখেছি। আমি দু দলেরই সাপোর্টার।’ ব্যতিক্রম কেবল মুশফিকুর রহিম। তিনি ইংল্যান্ডের সমর্থক।
তামিম বলছেন, ব্রাজিলের শিল্পিত ফুটবলই ফুটবল, অন্য সব নাকি জাম্বুরা খেলা! নিজেকে পারিবারিকভাবেই ব্রাজিলের সমর্থক মনে করেন তামিম। ইংল্যান্ড সফরের সময় একদিন সে কথা বলছিলেনও, ‘এক চাচি ছাড়া আমার পরিবারে সবাই ব্রাজিল। এত দিনে মনে হয় বাসায় ব্রাজিলের পতাকাও লেগে গেছে।’
আর সাকিব...? নাহ্, সরাসরি কিছুই বলছেন না। সব নাকি বিশ্বকাপের পরে বলবেন, ‘আমি নিজেও জানি না আমি কোন দলের সাপোর্টার! হ্যাঁ, স্পেনের বলতে পারেন....নাহ্, এভাবে বলা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না। আসলে বিশ্বকাপের পরেই বলা যাবে ঠিক করে...(হাসি)। এখন বললে সমস্যা আছে।’
সাকিব আসলে বুঝে-শুনে পা ফেলতে চান। তবে বিশ্বকাপে প্রিয় দল নিয়ে আবেগ সবার এতটাই বেশি যে চাইলেও মনের গোপন কথাটি গোপন থাকে না। সাকিবও কোনো না কোনোভাবে ঠিকই বুঝিয়ে দিচ্ছেন, তিনি আসলে কতটা ‘আর্জেন্টাইন’।
তামিমের সঙ্গে ধরা বাজিটার কথাই বলি। দুজনে অদ্ভুত এক বাজি হয়েছে বিশ্বকাপ নিয়ে। তামিমের প্রিয় ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, সাকিবের মেসি। তামিম বলেছেন, মেসি বিশ্বকাপে তিন গোলের বেশি করতে পারবেন না। সাকিবের দাবি, পারবে। প্রথমে বাজির শর্ত ছিল এক শ বেলা খাওয়ানো। পরে সেটা বদলে আঁতে ঘা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। বিশ্বকাপে মেসি তিনটির বেশি গোল করলে তামিমকে বলতে হবে, ‘ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর চেয়ে মেসি ভালো খেলোয়াড়।’ আর মেসি তিন বা আরও কম গোল করলে সাকিব বলবেন, ‘রোনালদো মেসির চেয়ে ভালো খেলোয়াড়।’ সাকিব কোন দলের সমর্থক, এরপর বলে দিতে হবে?
আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা বেশির ভাগ ম্যারাডোনার খেলা দেখে দেশটির সমর্থক। সাকিব ম্যারাডোনার খেলা খেলেননি, আর্জেন্টিনা নিয়ে তাঁর এত দরদ কেন? ‘মেসির জন্যই। ম্যারাডোনোর খেলা আমি দেখিনি। কোনো ধারণা নেই। ইউটিউবে কিছু ফুটেজ দেখছি কেবল’—বলছেন সাকিব।
বাংলাদেশ অধিনায়ক সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন ধরছেন স্পেনকে। তবে ব্রাজিল আর জার্মানিকেও রাখছেন সম্ভাব্য শিরোপাজয়ীর দলে, ‘স্পেনের খুব ভালো সুযোগ আছে। ওদের খেলোয়াড়েরা ক্লাবে দেওয়া সার্ভিসটা বিশ্বকাপেও দিতে পারলে স্পেনই এবার চ্যাম্পিয়ন। এ ছাড়া ব্রাজিল সব সময়ই ফেবারিট...পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। জার্মানি তো বড় আসরেরই দল। জাতিটাই কেমন...হিটলার হিটলার ভাব।’
স্পেন দলটাকে নাকি নিজের প্রিয় দল বার্সেলোনার মতো লাগে সাকিবের কাছে, ‘ফ্যাব্রিগাস, জাভি, ইনিয়েস্তা, তোরেস, গোলকিপার ক্যাসিয়াস... ডিফেন্সও ভালো, সলিড টিম। পিকে-পুয়োল আছে। দলটাকে বার্সেলোনা-বার্সেলোনা লাগে। আমার প্রিয় দলও বার্সেলোনা।’
তামিমের চোখে ব্রাজিলই সেরা। যদিও কিছুটা হতাশ তিনি, ‘একটা কারণে এবারের বিশ্বকাপ দেখে মজা পাব না, রোনালদিনহো নেই। ওর খেলা দেখতেই অন্য রকম লাগে।’
খেলা দেখার সুযোগ কি পাবেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা? ডাম্বুলায় এশিয়া কাপ শুরু হচ্ছে ১৫ জুন। সব খেলা দিনে হলেও ম্যাচের আগের দিন রাত জেগে পরদিন খেলাটা কষ্টকর। তার পরও সাকিব আশাবাদী, ‘পরদিন খেলা থাকলে রাত জেগে খেলা দেখা যাবে না। তবে পরদিন খেলা দেখা যাবে।’
সাকিব ছোটবেলায় ফুটবলটাই বেশি খেলতেন, ক্রিকেটের চেয়েও বেশি ভালো লাগত এই খেলা। বলেছেন, ‘যদি দুটি খেলা একসঙ্গে চলে এবং ক্রিকেটে বাংলাদেশের খেলা না হয়, কোনো চান্স নেই আমার ক্রিকেট খেলা দেখার। মোটামুটি মানের হলেও আমি ফুটবলই দেখব।’
সাকিবের দাবি, বিশ্বকাপে এই লোভটা তিনি সামলাতে পারবেন। কারণ বিশ্বকাপ ফুটবল যত বড় খেলাই হোক, ক্রিকেটটা তাঁর নিজের খেলা। তাই বলতে পারেন, ‘আরেকবার জন্ম নিলে আমি ক্রিকেটারই হতে চাই।’ তা হোন, তামিমের সঙ্গে এই ‘লড়াই’-এ জয় নিয়েই তাঁকে এখন বেশি ভাবতে হচ্ছে। হাজার হোক, মর্যাদার প্রশ্ন!

No comments:

Post a Comment