বিজয়ের পর কামরুল ও নিহত লোকমানের স্ত্রী তামান্না নুসরাত বুবলি সাজ্জাদ নয়ন
আরেক দফায় মরণোত্তর সম্মান ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি পেলেন নরসিংদী পৌরসভার প্রয়াত মেয়র আলহাজ লোকমান হোসেন। গতকাল বৃহস্পতিবার এই পৌরসভার মেয়র পদে
উপনির্বাচনে তার ছোট ভাই কামরুজ্জামান কামরুল বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি।
কামরুজ্জামান কামরুল ৩৫ হাজার ৫৬৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নরসিংদী শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি মোন্তাজ উদ্দিন ভূঁইয়া পেয়েছেন ১৩ হাজার ৮১৩ ভোট।
নির্বাচনী ফল ঘোষণার পর কামরুজ্জামান কামরুল অঝোরে কেঁদেছেন। একই সঙ্গে তিনি তাকে নির্বাচিত করায় শহরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছেন। নির্বাচনী ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন লোকমান হোসেনের বৃদ্ধ মা মাজেদা বেগম ও স্ত্রী তামান্না নুসরাত বুবলি। প্রতিপক্ষ মোন্তাজ উদ্দিন ভূঁইয়া বিজয়ী কামরুজ্জামান কামরুলকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
অজ্ঞাতপরিচয় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত লোকমান হোসেন ২০১১ সালের ১৭ জানুয়ারির পৌরসভা নির্বাচনে ৩১ হাজার ৭০৭ ভোট পেয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুল মতিন সরকার পেয়েছিলেন ১১ হাজার ৮০৭ ভোট। এ ক্ষেত্রে ১৯ হাজার ৭০০ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন আলহাজ লোকমান হোসেন। এবার কামরুজ্জামান কামরুল ২১ হাজার ৭৫৬ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করায় মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে অর্থাৎ বিকেল ৫টায় নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার আবদুল অদুদ। এ সময় শোক ও আনন্দের সংমিশ্রণ ঘটে। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে স্থাপিত নির্বাচনী কন্ট্রোল রুমের বাইরে স্বজন হারানোর ব্যথায় কাতর কয়েক হাজার মানুষ মুহুর্মুহু স্লোগানে ফেটে পড়েন। কেউ কেউ লোকমান হোসেন স্মরণে কাঁদেন।
নরসিংদী শহরে খণ্ড খণ্ড আনন্দ মিছিল বের হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ ফলাফল জানার পর রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। তারা স্লোগান আর মিছিলের মাধ্যমে আলহাজ লোকমান হোসেন হত্যার বিচার দাবি করেন। রাত সাড়ে ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শহরজুড়ে আনন্দ মিছিল হচ্ছিল। শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। অনেকেই শালিধা এলাকায় স্থানীয় পৌর কবরস্থানে গিয়ে লোকমান হোসেনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
শুরু থেকেই এই নির্বাচন বাদী ও আসামির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। জনপ্রিয় মেয়র আলহাজ লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মোন্তাজ উদ্দিন ভূঁইয়াসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন কামরুজ্জামান কামরুল। এ কারণে নির্বাচনী লড়াই এ দুই প্রার্থীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নির্বাচনে কামরুজ্জামান কামরুলকে সমর্থন দেন।
প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে কামরুজ্জামান কামরুলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার চালান তিন সাংসদ নরসিংদী-১ আসনের লে. কর্নেল (অব.) নজরুল ইসলাম হিরু বীরপ্রতীক, নরসিংদী-২ আসনের ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ, নরসিংদী-৩ আসনের জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন এবং জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভূঁঁইয়া।
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ প্রশাসক অ্যাডভোকেট আসাদোজ্জামান এবং পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মতিন সরকার সমর্থন দেন মোন্তাজ উদ্দিন ভূঁঁইয়াকে। আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু প্রকাশ্যে কাউকে সমর্থন না করলেও মোন্তাজ উদ্দিন ভূঁঁইয়ার প্রতি তার কিছুটা দুর্বলতা ছিল। এ কারণে এই নির্বাচন মন্ত্রী এবং তিন সাংসদের মর্যাদার লড়াইয়ে রূপ নেয়।
গতকাল কামরুজ্জামান কামরুল বাসাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এবং মোন্তাজ উদ্দিন ভূঁইয়া নরসিংদী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট দিয়েছেন।
ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দেওয়া নিয়ে ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা থাকলেও শেষতক তারা নির্বিঘ্নেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী না থাকায় তুলনামূলকভাবে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও সেটা হয়নি। নির্বাচনে ৬৭.২ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন।
এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী অপর চার প্রার্থীর মধ্যে হাজি আফজাল হোসেন এক হাজার ৫৮৯, আমজাদ হুসাইন ভূঁইয়া ৫৫৩, সাবেক সাংসদ শামসুদ্দিন আহমেদ এছাকের ছেলে মোছাবি্বর আহমেদ নাসির ৪৬৩ এবং স্বতন্ত্র আরিফুল ইসলাম ১৫১ ভোট পেয়েছেন। ইভিএম পদ্ধতির বিরোধিতা করে নির্বাচন থেকে বিএনপি সরে দাঁড়ালেও নির্বাচন একপেশে হয়নি। তবে বিএনপি সমর্থিত ভোটাররাই জয়-পরাজয় নির্ধারণে ফ্যাক্টর ছিলেন।
No comments:
Post a Comment